বিলিভ ইট অর নট

৩ দিনের বাড়তি যাত্রায় যেভাবে সফল হলো কলম্বাসের অভিযান

৩ দিনের বাড়তি যাত্রায় যেভাবে সফল হলো কলম্বাসের অভিযান
সমুদ্রযাত্রার আগে কলম্বাস। ছবি: সংগৃহীত

১৪৯২ সালের ৩ আগস্ট। স্পেনের প্যালোস ডে লা ফ্রন্টেরা বন্দর থেকে ৩টি জাহাজ ও ৯০ জন মানুষ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন কলম্বাস। জাহাজ ৩টির নাম নিনা, পিন্তা ও সান্তা মারিয়া।  

ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ থেকে ক্রমে পশ্চিম অভিমুখে চলছিল তাদের যাত্রা। অক্টোবরের ১০ তারিখের দিকে যাত্রীরা অস্থির হয়ে উঠলেন। এতদিন পেরিয়ে গেছে, অথচ স্থলের চিহ্নমাত্র নেই। তারা দাবি জানালেন জাহাজ ঘুরিয়ে স্পেন ফিরে যেতে। ঠিক হলো, আগামী ৩দিনের মধ্যে স্থলভাগের দেখা না পেলে তাই করা হবে। 

এরপর ১২ অক্টোবর মাঝরাতে নাবিক রদ্রিগো ডে ট্রায়ানা উপকূলের দেখা পান। পরদিন সকালে কলম্বাস সান সালভাদরের পথে পা বাড়ান। এখান থেকে তিনি পান নতুন পথের দিশা, তার সামনে উন্মোচিত হয় পৃথিবীর নতুন রূপ। 

প্রচলিত আছে, সে সময় লোকেরা সাধারণভাবে বিশ্বাস করতো পৃথিবী সমতল! কিন্তু আটলান্টিক মহাসাগর অভিমুখে যাত্রা করে, তীর ধরে হেঁটে গিয়েও কলম্বাস কোনো কিনারা থেকে নিচে পড়ে গেলেন না। এর ফলে কলম্বাস বুঝেছিলেন, পৃথিবী গোলাকার! 

তাহলে কি সে সময় সবাই সমতল পৃথিবীর প্রতি বিশ্বাস রাখতো? 

খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ সালেও গ্রিক বিজ্ঞানীরা গোলক আকৃতির পৃথিবীর কথা বলেছিলেন। পিথাগোরাস কিংবা অ্যারিস্টটল– তারা সবাই সূর্য ওঠা ও ডোবার অবস্থান, ছায়ার দৈর্ঘ্য ও আরও কিছু নিয়ামকের ভিত্তিতে মনে করতেন পৃথিবী গোলাকার।
 
তবে অন্ধকার যুগে এসব জ্ঞান ছাইচাপা পড়েছিল। কলম্বাসের সমসাময়িক শিক্ষিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ পৃথিবীকে গোল বলেই জানতেন। তারা অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন কলম্বাসকে। কারণ, কলম্বাস তার গণনায় পৃথিবীর প্রকৃত আয়তনের চেয়ে অন্তত ২৫ ভাগ আয়তন কম পেয়েছিলেন ৷ তার গণনায় এশিয়ার আকার এত বৃহৎ এসেছিল যে, স্পেন থেকে জাপানের দূরত্ব নির্ণিত হয়েছিল মাত্র ৮ হাজার মাইল। তাই ভারতবর্ষে আসার ব্যাপারটিও তার কাছে মনে হয়েছিল অপেক্ষাকৃত সহজ। 

এশিয়ায় প্রবেশের দ্বার ছিল জাপান। তাই এর প্রতি কলম্বাসের ছিল এত আগ্রহ। তিনি চেয়েছিলেন ভারতবর্ষে আসতে, কিন্তু ভুলক্রমে চলে যান সান সালভাদরে। মার্কো পোলোর বর্ণনায় তিনি পড়েছিলেন ভারতবর্ষের শান-শওকত, হীরা-জহরতের কথা। কিন্তু সেসব কিছুই যে নেই! মার্কো পোলো অবশ্য নিজেও জাপান যাননি। শুনেছিলেন চিনের মুসলিম বণিকদের কাছ থেকে। 

কলম্বাস ভারতবর্ষের পরিবর্তে পা রাখেন আমেরিকা মহাদেশে। সেখানকার আদি অধিবাসীদের অভিহিত করেন 'রেড ইন্ডিয়ান' বলে। কিন্তু কলম্বাসের সঙ্গে তাহলে সমতল পৃথিবীর সম্পর্কটা কী? 

এখানে ভূমিকা আছে ওয়াশিংটন আরভিংয়ের। ১৮২৮ সালে লেখা বই 'দি লাইফ অ্যান্ড ভয়েজারস অব ক্রিস্টোফার কলম্বাস'-এ তিনি কলম্বাসকে 'পৃথিবী গোলাকার' – এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ধারণা ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। এখানে কলম্বাসের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না। কলম্বাস সুনির্দিষ্টভাবে এমন কিছুই করেননি, যাতে প্রমাণ করা যায়, পৃথিবী গোল। 

বরং, পৃথিবীর গোল হবার বিষয়ে আরও আগে থেকেই গবেষণা হয়ে আসছিল। তাই আরভিংয়ের মূল্যায়ন এখন একটি মিথ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। বরং, এখন যে পরিমাণ মানুষ সমতল পৃথিবীতে বিশ্বাস করে, তখন এমন বিশ্বাসীদের সংখ্যা এর চেয়ে কম ছিল। 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

Comments

The Daily Star  | English

Blast heard in north Tehran, main road partially closed: AFP

Israel army says struck Iran centrifuge production, weapons manufacturing sites

21h ago