লতিফুর রহমানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

লতিফুর রহমান। ফাইল ফটো

দেশের শীর্ষস্থানীয় ও স্বনামধন্য ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সিইও লতিফুর রহমানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

মৃদুভাষী ও বিনয়ী, দূরদর্শী এবং নীতিবান এই ব্যবসায়ী ২০২০ সালের এই দিনে কুমিল্লার পৈত্রিক বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।

লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনেই তিনি মারা যান। ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারাজ।

লতিফুর রহমান ছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মিডিয়াওয়ার্ল্ডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং প্রথম আলোর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মিডিয়াস্টারের চেয়ারম্যান। দুটি সংবাদপত্রই দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি ও বাংলা দৈনিক।

ব্যবসায় সততা ও নৈতিকতার কারণে সবার কাছে তিনি ছিলেন একজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। তিনি কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং উদ্যোক্তা দক্ষতা দিয়ে দেশের অন্যতম বৃহত্তম ব্যবসায়িক সংগঠন গড়ে তোলেন।

লতিফুর রহমানের জন্ম ১৯৪৫ সালে। ঢাকার সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু। ১৯৫৬ সালে শিলংয়ের সেন্ট এডমন্ডস স্কুলে ভর্তি হন। পরে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে সিনিয়র কেমব্রিজ পরীক্ষা দেন।

ঢাকায় ফিরে ১৯৬৬ সালে লতিফুর রহমান চাঁদপুরের পারিবারিক পাটকল ডব্লিউ রহমান জুট মিলস লিমিটেডে নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে কোনো বাঙালি মালিকানায় এটিই ছিল প্রথম পাটকল।

১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে কাজ করেন। তবে ১৯৭২ সালে সরকার শিল্প জাতীয়করণ করলে তিনি কঠিন সময়ে পড়ে যান। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এই পরিবারের কিছু চা বাগানের মালিকানা থাকলেও স্বাধীনতার পর উৎপাদন খরচের তুলনায় তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম ছিল কম।

তবে তিনি আশা ছাড়েননি। ওই বছরই লতিফুর রহমান একটি সুইস কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

১৯৮৭ সালে তার নেতৃত্বে ট্রান্সকম গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। ওষুধশিল্প, ইলেকট্রনিকস, গণমাধ্যম, কোমল পানীয়, চা ও ভোগ্যপণ্য, বিমাসহ বিভিন্ন খাতে গ্রুপটির একাধিক কোম্পানি রয়েছে।

লতিফুর রহমান আইসিসি প্যারিসের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য, আইসিসি বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্র্যাকের পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বেটার বিজনেস ফোরাম ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপদেষ্টা কমিটির সদস্যও ছিলেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ৭ বারের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতিও ছিলেন লতিফুর রহমান।

এ ছাড়াও, তিনি বাংলাদেশ সরকারের ট্রেড বডি রিফর্মস কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

লতিফুর রহমান 'অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড ২০১২'তে ভূষিত হন এবং অ্যামেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ ২০০১ সালে তাকে বিজনেস এক্সিকিউটিভ অব দ্য ইয়ারে সম্মানিত করে।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি 'সার্ক আউটস্ট্যান্ডিং লিডার' এবং আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন।

লতিফুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ রহমান। তাদের তিন মেয়ে সিমিন হোসেন, শাজরেহ হক, (প্রয়াত) শাজনীন রহমান এবং ছেলে (প্রয়াত) আরশাদ ওয়ালিউর রহমান।

বাংলাদেশের ব্যবসা জগতে অনুকরণীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সবার সমীহ আদায় করে নিয়েছিলেন লতিফুর রহমান। তার সংস্পর্শে যারাই এসেছেন তারা সবাই তাকে ভালোবেসেছেন, সম্মান করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

How Chattogram built its economic legacy

Picture a crowded harbour where the salty seabreeze carries whispers of far-off lands, where merchants of all creed and caste haggle over silks and spices, and where towering ships of all varieties – Chinese junks, Arab dhows, and Portuguese carracks – sway gently in the waters of the Bay of Bengal.

14h ago