সংকল্পসিদ্ধিপুরুষ প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ: জন্মদিনে শ্রদ্ধা

শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন জনদরদি, মানবহিতৈষী, সমষ্টির কল্যাণ আকাঙ্ক্ষী এক শক্তিমান দেশপ্রেমিক মানুষ। নব্বই ঊর্ধ্ব কর্মময় জীবন পার করে ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট তার জীবনাবসান ঘটে।

দেশকে ভালবাসতেন তিনি অপার মমতায়। ভালবাসতেন দেশের প্রান্তিক মানুষকে। বিশ্বাস করতেন কর্মের ওপরে। অসাধারণ নরম হৃদয়ের শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ গড়পড়তা বাঙালির দোদুল্যমান চরিত্রের বাইরে এক দৃঢ়চেতা, ইস্পাতসম চরিত্রের মানুষ ছিলেন। ছিলেন প্রগতিশীল, মার্কসবাদী চিন্তাধারার মানুষ, কিন্তু ধর্ম সম্পর্কে ছিল তার অগাধ জ্ঞান ও নির্মোহ ব্যাখ্যার ক্ষমতা। খুব বাস্তববাদী ছিলেন।

মেধাবী ছিলেন, স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর, তার নিজের কর্ম-বিশ্বাসের ব্যাখ্যাও ছিল সহজ-সরল, কিন্তু সুস্থিত। প্রকৌশলী হিসেবে ছিলেন তার ক্ষেত্রে দেশসেরা ও অনন্য। সাশ্রয়ী মূল্যে সেরা পেশাগত সেবা দেওয়ার বিবেচনায় তিনি ছিলেন প্রচণ্ড জাতীয়তাবাদী ভাবধারার মানুষ। তীক্ষ্ণধী এই মানুষটি গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে জড়িয়ে পড়েছেন রাজনীতি আর সমাজের নানা কাজে। রাজনীতির কারণেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। সামরিক আদালতে বিচারে কারাবরণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন কারারুদ্ধ অবস্থাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর রাজাকারদের হাতে হারিয়েছেন পরিবারের নিকটজনদের।

২.

খুলনার দৌলতপুরে ১৯৩১ সালের ৩১ জুলাই তার জন্ম। বাবার নাম শেখ মুহাম্মদ হানিফ। বাবা দৌলতপুর মুহসীন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। মায়ের নাম মরিয়ম খাতুন। ছয় ভাই এক বোন।

দৌলতপুর মুহসীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় আরবিতে লেটারসহ প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন ব্রজলাল একাডেমী (পরে যার নাম হয় বিএল কলেজ) থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পূর্ব পাকিস্তান বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১৯তম স্থান অধিকার করেন।

১৯৫০ সালে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএসসি পাস কোর্সে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান বোর্ডের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। ওই একই বছর ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে গোল্ড মেডেলিস্ট হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

৩.

সাংবাদিকতার সূত্রে তার সামাজিক আন্দোলন, পেশাগত জীবন, ব্যক্তিজীবনকে কিছুটা হলেও জানার সুযোগ হয়েছিল। সে সুযোগে তাকে নানারকম প্রশ্ন করার সুযোগও পেয়েছিলাম। নিজমুখেই শুনেছিলাম তার জীবনকথাও। সে এক অনিন্দ্যসুন্দর অভিজ্ঞতা। দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার জন্য মরিয়া তখন এশিয়া এনার্জি। আমাদের সরকার, বুদ্ধিজীবীদের শক্তিমান শিক্ষিতদের একটা অংশ তখন তাদের পেছনে। বিপরীতে লড়ছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে দেশবাসী। ফুলবাড়িতে রক্ত ঝরলো। জনআন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করল প্রবল শক্তিধর সরকার ও এশিয়া এনার্জির দোসররা।

বুদ্ধিজীবীদের এই পদস্খলন দেখে বলেছিলেন, 'আমি তো এজন্য বুদ্ধিজীবীদের ওপর মোটেই ভরসা করি না। একমাত্র সাধারণ জনগণ ছাড়া কারো ওপর ভরসা করা যায় না। ফুলবাড়ী আন্দোলনে যে সাধারণ জনগণ প্রাণ দিয়েছে সেই জনগোষ্ঠীই ভরসা। সুশীল সমাজের কয়জন ওই আন্দোলনে গেছে। এখনই বা কয়জন যায়? আমরা তো আন্দোলনের স্বার্থে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের কাছে মাঝেমধ্যে চাঁদা চাই। বুঝি তো তাদের ক্ষমতা? আর্থিক ত্যাগ যেটা সবচেয়ে নিম্নমানের ত্যাগ তাই তারা করতে চায় না। জেলের ঝুঁকি বা অন্য ঝুঁকি তো বাদই দিলাম।'

৪.

দেশের জ্বালানি সম্পদের ওপর নিজেদের সক্ষমতা তৈরি হোক, এটা মনেপ্রাণে চাইতেন। আবার ক্ষমতাসীনরা এ ব্যাপারে কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন, অশিক্ষিত ও লোভের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া মানুষ, সেটাও বলতেন।

একবার তৎকালীন সংসদের সংসদীয় কমিটির সঙ্গে তার নেতৃত্বে এক বৈঠকে কি আলাপ হয়েছিল সেটা সবিস্তারে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, 'সংসদীয় কমিটিকে দিয়ে সরকার একটা আলোচনা করল। উনারা বললেন আরেকবার ডাকবেন, তারও হদিস নাই। সংসদীয় কমিটিকে আমরা বলেছি, আপনারা তো কিছু জানেন না, বোঝেন না। এই আলোচনায় যখন আমরা মুখোমুখি বসলাম তখন সংসদ সদস্যরা একদিকে, আমরা একদিকে। সংসদ সদস্য ৫ জন, আমরা ৪ জন। তাদের সহায়তা করার জন্য পেছনে আছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান, বাপেক্সের চেয়ারম্যান, মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ আমলারা।'

'দেখা গেল তারাই সবকিছু বলছেন, সংসদ সদস্যরা কিছুই বলতে পারছে না। আমলারা যা বলে এরা পুরোপুরি সেটা শোনে, যা বোঝায় তাই বোঝে। স্বাধীনভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করার সক্ষমতা নাই। আমরা সংসদীয় কমিটিকে তো বেশ আন্তরিকই দেখলাম। জ্বালানি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভূঁইয়া তো বেশ আন্তরিক। এই যে, কমিটির অন্য সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসও আন্তরিক। কিন্তু কিছুই জানে না।'

'আর ব্রি. জে (অব.) এনামুল হক বললেন, আমি জানি। কিন্তু উনি কিছু বোঝেন না। বিশ্বাস করুন তারা কিছু বোঝেন না। তারা পড়েনও না, তারা কিছু জানেনও না। এভাবে দেশ চলছে। আমলারাই চালাচ্ছে।'

'আমরা যখন বললাম যে, আমাদের জাতীয় সংস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করে এর সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। এদের পুঁজি দিতে হবে, ন্যায্য পুঁজিটাই দেওয়া হচ্ছে না। ঋণ দিতে হবে, যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ করতে হবে, ট্রেনিং করাতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেবাস করে এসব বিষয় পড়াতে হবে। কোলবাংলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যারা মোটামুটি এ বিষয়ে জানে তাদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে আরও দক্ষ করে আনতে হবে। নতুন চাকরি দিয়ে তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে একটা শক্তিশালী জাতীয় সংস্থা করতে হবে।'

'আমাদের মতো দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়া,  ইন্দোনেশিয়া কি সুন্দরভাবে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক তাদের জাতীয় সংস্থাকে চালিয়ে যাচ্ছে। তারা কত শক্তিশালী, তারা অন্য দেশে গিয়েও কন্ট্রাক্টরশিপ নেয়। আর আমাদের কি দুর্ভাগ্য—বঙ্গবন্ধু এই দেশে পেট্রোবাংলা প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেলেন। তার  আগে শেল (আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি) এখানে কাজ করত। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেলকে বললেন, "চলে যাও।" শেল খুব কম দামে বিক্রি করে দিয়ে চলে গেল। সেই শেলের ভূতত্ত্ববিদ, প্রকৌশলী দিয়েই, দক্ষ লোক দিয়েই পেট্রোবাংলা গঠিত হলো।'

'অথচ সেটাকে সুগঠিত করা, উন্নত করার চেষ্টা কারো নেই। সংসদীয় কমিটিতে আলোচনার সময় যখন আমরা এসব প্রসঙ্গ বলছি তখন সংসদ সদস্যদের পিছনে বসা বাপেক্সের চেয়ারম্যান বললেন যে, "আমাদের জন্য আপনাদের মায়াকান্না কাঁদতে হবে না।"'

৫.

বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র নিয়ে একবার শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল। বললেন, এটা একটা ভুল আলোচনা। কেননা তার ভাষায়, 'এটা কি গণতন্ত্র? বুর্জোয়া গণতন্ত্র, গণতন্ত্র হয় কখন? যখন জাতীয়তাবাদী হয়, দেশপ্রেমী এবং সৎ হয়। আমাদের যত সরকার ক্ষমতায় এসেছে এরা সব সাম্রাজ্যবাদের দাস সরকার। বুর্জোয়া হয়েও তো দেশপ্রেমী হওয়া যায়। বুর্জোয়া হয়েও জাতীয়তাবাদী হওয়া যায়।'

'বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী মানে কি? তারা দেশীয় শ্রেণীশোষণ সমর্থন করবে কিন্তু বিদেশি লুণ্ঠন সমর্থন করে না। এদেরকে বলে জাতীয়তাবাদী। নেহেরু, সুকর্ণ, নাসের, সান ইয়াৎসেন এরা হলো জাতীয়তাবাদী। কারণ, এরা নিজের দেশে শ্রেণীশোষণ সমর্থন করত। কিন্তু বিদেশি লুণ্ঠন সমর্থন করত না। রাজনৈতিক সংজ্ঞায়নে এদেরকে বলা হয় জাতীয়তাবাদী। আমাদের যত বুর্জোয়া পার্টি আছে একটারও সেই জাতীয়তাবাদী চরিত্র নাই। সবাই সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠনের দরজা খুলে দেয় শুধু টুপাইসের বিনিময়ে।'

৬.

খুবই সাধারণ বেশভূষায় ব্যক্তিজীবনে পরিমিত জীবনাচারে অভ্যস্ত মাঠের মানুষ শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ জনকল্যাণে নিবেদিত ছিলেন আমৃত্যু। দেশের তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষার আন্দোলনের ছিলেন পথিকৃৎ। শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সমাজ বদলের লড়াইরত তরুণ সমাজের একটা বড় অংশের কাছে প্রেরণা আর ভালোবাসাময় শ্রদ্ধার 'শহীদুল্লাহ ভাই' হয়ে থেকেছেন সবসময়।

একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, নানারকম সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যক্তিকে প্রকাশ্য ও গোপনে আপনি বহু বছর ধরে আর্থিক সহায়তা দিয়ে এলেন। এ ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কী? ফলাফল কী?

তার সহাস্য উত্তর, 'খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা। এটা খুব কাজে দিয়েছে। আমি একা যে কাজটা করতে পারতাম না, এখন সবাই মিলে তা করি। এই কাজটা সবাই মিলে করাটা খুব দরকার। একজনের কাজে তো হবে না। সেজন্য এই প্রচেষ্টাটা খুবই কাজে লেগেছে। আমার যেটুকু অর্থ ব্যয়, যেটুকু শ্রমব্যয়, এগুলো যত বেশি মানুষের ভেতরে শেয়ার করতে পারি ততই মঙ্গল। একা কতটুকু করা যায়। একা কিছুই করা যায় না। সেজন্য এটা একটা শেয়ারড এক্সপেরিয়েন্স। সবাই যেন মঙ্গলটা পায়। আমার ব্যর্থতা হচ্ছে, আরও বেশি পারলাম না কেন?'

আমার কৌতূহল বাড়ল। প্রশ্নটা করেই ফেললাম, যেসব জায়গায় এভাবে সহায়তা করেছেন তা ব্যর্থ হয়নি কোথাও?

এবার শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর আত্মবিশ্বাসী উত্তর, 'এটা ফেইল করার জিনিস না। এটা তো এমন না যে কাউকে বিশ্বাস করে কিছু টাকা দিলাম, সে আর ফেরত দিল না, এরকম ব্যাপার তো না। জনগণকে বিশ্বাস করা, এই বিনিয়োগ কোনো দিন ফেইল করে না। মানুষের মঙ্গলের জন্য বিনিয়োগ কোনো দিন ফেইল করে না। মানুষের কল্যাণের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টার সঙ্গে থেকে, তাকে সাহায্য করা কোনো দিন ফেইল করতে পারে না। এই ইনভেস্টমেন্ট কোনো দিন ফেইল করতে পারে না।'

৭.

মৃত্যুর আগে বেশ কয়েকবছর ধরেই শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। যদিও শেষ সময় পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন পেশাগত কাজে। জাতীয় মিডিয়ায় হালে আর তাকে দেখা যেত না। সেকারণেই আজকের প্রজন্ম হয়তো সেভাবে তাকে চেনেন না। কিন্তু শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ জীবনভর তরুণদের সঙ্গে থেকেছেন গভীরভাবে। তরুণরা যখন যেখানেই জনকল্যাণে কাজ করেছে, সেখানেই স্বেচ্ছায়-স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনি জড়িয়েছেন তাদের সঙ্গে নানা সহায়তা হাতে নিয়ে।

শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর শিক্ষাজীবন দারিদ্র্য, সংগ্রাম আর কষ্টের মধ্যে কাটলেও সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ছিলেন আজীবন লড়াকু এক মানুষ। পেশাগত প্রকৌশলী জীবনে তিনি অনন্য মেধায়, অসাধারণ দক্ষতায়, সততা, নিষ্ঠা ও শ্রমে দেশের প্রকৌশলী সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় স্থানে নিজেকে আসীন করেছেন। দেশের তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষার আন্দোলনে আমৃত্যু ছিলেন সক্রিয়।

দেশের সক্ষমতায় জনগণের মালিকানায় এ সম্পদ রক্ষা পাবে, সেই আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, অপরিহার্য নেতাও ছিলেন তিনি। বামপন্থি দলগুলো আদর্শগত, রাজনৈতিক নানা মত পার্থক্যে নিজেদের মধ্যে নানা দূরত্ব তৈরি করলেও শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে কেন্দ্র করেই তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষার জাতীয় আন্দোলনে নিজেদের সংঘবদ্ধ রেখেছিল তার সক্রিয়তায় ও উদ্যমে।

৮.

প্রকৌশলী শহীদুল্লাহকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার শক্তির জায়গাটা কী? প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হাসতে হাসতে বললেন, আমি বিবেকানন্দের সেই লাইনটাকে খুব পছন্দ করি, 'জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর'।

প্রকৌশলী শহীদুল্লাহর বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিজের চিন্তা এবং বিশ্বাস প্রকাশে তিনি ছিলেন অকপট। কারো কাছে মাথা নোয়াবার মানুষ তিনি ছিলেন না। পাকিস্তানি জমানায় বামপন্থি বিশ্বাসের অপরাধে রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে সামরিক গোয়েন্দারা অকথ্য নির্যাতন করেছে, কিন্তু একচুলও টলাতে পারেনি। তিনি জেল খেটেছেন, জেলে থাকা অবস্থায় তার পরিবার অবর্ণনীয় দুর্দশায় পড়েছে, কিন্তু তার চিন্তাগত অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ আমাদের কালের নায়ক। আমাদের জন্য এক অনন্য প্রেরণা। জনস্বার্থে তার লড়াই, সততা, পরিশ্রম, মেধা, নেতৃত্ব, পেশাগত উৎকর্ষতা বহুকাল এই ভূ-খণ্ডের চিন্তাশীল, সমাজমনস্ক মানুষকে উৎসাহ ও প্রেরণা জোগাবে।

তার মৃত্যু জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

৩১ জুলাই জন্মদিনে তার প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।


শুভ কিবরিয়া: সিনিয়র সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Comments

The Daily Star  | English

CA terms trade deal with US ‘a decisive diplomatic victory’

"Our negotiators have demonstrated remarkable strategic skill,” said Yunus

1h ago