এক হাজার ইসরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধের পরিকল্পনা

নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়নের সেনাদের সঙ্গে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট/জিপিও
নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়নের সেনাদের সঙ্গে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট/জিপিও

আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমের সংবাদে জানা গেছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর 'নেতজাহ ইয়েহুদা' ইউনিটের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় এক হাজারের মতো। 

গতকাল রোববার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

প্রতিক্রিয়ায়, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়বেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতীকী উদ্যোগ

একদিন আগেই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ইসরায়েলের জন্য ২৬ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন পেয়েছে, যার বেশিরভাগ অংশই পাবে দেশটির সামরিক বাহিনী। খুব শিগগির এই বিল সিনেটের অনুমোদন পাবে বলেও ভাবছেন বিশ্লেষকরা। এরপর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাক্ষরে এটি আইনে পরিণত হবে।

এই জরুরি ত্রাণ প্যাকেজের পেছনে কারণ হিসেবে 'ইরানের কাছ থেকে হামলার' হুমকির কথা বলা হয়েছে। এই জরুরি প্যাকেজের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিয়মিত ও বার্ষিক সামরিক সহায়তা তহবিল পেয়ে থাকে ইসরায়েল। 

শনিবার সংবাদ ওয়েবসাইট অ্যাক্সিওস এক প্রতিবেদনে জানায়, ওয়াশিংটন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) 'নেতজাহ ইয়েহুদা' ব্যাটেলিয়নের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। এই ব্যাটেলিয়নটি অধিকৃত পশ্চিম তীরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা এ ধরনের উদ্যোগ সম্পর্কে অবগত নয়।

নেতজাহ ইয়েহুদা বাহিনীর সদস্যরা পশ্চিম তীরে অভিযান পরিচালনা করছেন। ফাইল ছবি: এএফপি
নেতজাহ ইয়েহুদা বাহিনীর সদস্যরা পশ্চিম তীরে অভিযান পরিচালনা করছেন। ফাইল ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের নিয়মিত সেনার সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার এবং রিজার্ভ সেনা ৪ লাখ ৬৫ হাজার। দেশটিতে ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেক নাগরিকের সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়ায় তাদের রিজার্ভ সেনার সংখ্যাও বেশি।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ সেনার একটি ক্ষুদ্র অংশ নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়নের অংশ। প্রতিষ্ঠার সময়য় এই ইউনিটের সেনা সংখ্যা মাত্র ৩০ হলেও এখন তা এক হাজারের মতো। সংখ্যায় তারা মোট নিয়মিত সেনার শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি।

অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র এই বাহিনীর বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও, সার্বিকভাবে ইসরায়েলি বাহিনী দেশটির কাছ থেকে পাওয়া সামরিক সহায়তার এক শতাংশেরও কম অংশ থেকে বঞ্চিত হবে।

এ ছাড়া, নেতজাহ ইয়েহুদা ইউনিটটি পশ্চিম তীরে কার্যক্রম পরিচালনা করে। অর্থাৎ রাফাহ'র বিরুদ্ধে আসন্ন স্থল অভিযান তথা গাজার বিরুদ্ধে চলমান আগ্রাসনে এই ইউনিটের অংশ নেওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই।

সব মিলিয়ে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ আদতে 'প্রতীকী' এবং এতে ইসরায়েলি আগ্রাসনে কোনো প্রভাব পড়বে না।

যুক্তরাষ্ট্রের হতাশা

মিশরে বক্তব্য রাখছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
মিশরে বক্তব্য রাখছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের (সেটলার) বিরুদ্ধে বেশ কয়েক ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে। বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর অবলম্বন করা যুদ্ধকৌশল ও নীতিমালার প্রতি হতাশা থেকে যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগ নিয়েছে। নেতানিয়াহুর জোট সরকার সেটলার-ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর বড় আকারে নির্ভরশীল।

এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, 'যদি কেউ আইডিএফের কোনো ইউনিটের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপের কথা ভাবে, তাহলে আমি সেই উদ্যোগের বিরুদ্ধে সর্বশক্তিতে লড়ব।'

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান বেনি গ্যান্টজ এক বিবৃতিতে রোববার জানান, তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে গ্যান্টজ ও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউভ গ্যালান্ট আলোচনা করেছেন। এই আলোচনায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা, গাজার সংঘর্ষ যাতে অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখা, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চালু ও গাজার বেসামরিক মানুষের কাছে ত্রাণের প্রবাহ বাড়ানোর বিষয়গুলো উঠে এসেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিধিনিষেধের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেনি।

গ্যান্টজ জানান, যুদ্ধকালীন সময়ে এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা 'ভুল' হবে, কারণ এতে ইসরায়েলির গ্রহণযোগ্যতা কমে আসবে। এ ছাড়া, এ ধরনের উদ্যোগকে তিনি অন্যায্য বলে উল্লেখ করেন, কারণ ইসরায়েলের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা রয়েছে এবং সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিক আইন মেনে কাজ করে।

আইনভঙ্গের অভিযোগ

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা কিছু মার্কিন আইন ভঙ্গ করেছে। যদি কোনো সামরিক বাহিনী বা ব্যক্তি বড় আকারে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, তাহলে সেই বাহিনী বা ব্যক্তিকে সামরিক সহায়তা দেওয়া মার্কিন আইনের লঙ্ঘন।

ব্লিঙ্কেন শুক্রবার জানান, এই অভিযোগের বিপরীতে তারা 'সিদ্ধান্তে' উপনীত হয়েছেন। তবে কি সে সিদ্ধান্ত, তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি।

এ সপ্তাহের শুরুতে, প্রো পাবলিকা সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্যানেল কয়েক মাস আগে ব্লিঙ্কেনের কাছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে একাধিক ইসরায়েলি সামরিক ও পুলিশ ইউনিটকে মার্কিন সহায়তা লাভের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করার সুপারিশ করেছে।

এই প্যানেলের নাম 'ইসরায়েল লিহি ভেটিং ফোরাম।'

সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, এসব অপরাধ ৭ অক্টোবরের ইসরায়েল-গাজা সংঘাত শুরুর অনেক আগেই সংঘটিত হয়েছে এবং এগুলোর বেশিরভাগই পশ্চিম তীরের ঘটনা।

পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি

গাজা যুদ্ধের আগে থেকেই পশ্চিম তীরে সহিংসতার মাত্রা উচ্চ পর্যায়ে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে ইসরায়েলি অভিযানের সংখ্যা ও মাত্রা বড় আকারে বেড়েছে।

ফিলিস্তিনিদের ওপর সেটলাররা পথে-ঘাটে হামলা চালাচ্ছেন এবং ফিলিস্তিনে গ্রামগুলোও হামলার শিকার হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটেলিয়ন একটি সক্রিয় যোদ্ধা ইউনিট, যারা আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে চলে।

সামরিক বাহিনী বলেছে, 'এই ব্যাটেলিয়নের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ বিষয়ে কিছু সংবাদ প্রকাশ হলেও আইডিএফ আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে অবগত নয়। যদি এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আসে, তাহলে তা খতিয়ে দেখা হবে। আইডিএফ যেকোনো অস্বাভাবিক ঘটনাকে আমলে নেয় এবং আইন মেনে বাস্তবসম্মত তদন্ত পরিচালনা করে।'

ফিলিস্তিনি-মার্কিন নাগরিক ওমর আসাদ। ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনি-মার্কিন নাগরিক ওমর আসাদ। ছবি: সংগৃহীত

২০২২ সালে নেতজাহ ইয়েহুদার ব্যাটেলিয়ন কমান্ডারকে 'তিরস্কার' করা হয় এবং দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। বর্ষীয়ান ফিলিস্তিনি-মার্কিন নাগরিক ওমর আসাদকে এই ইউনিটের সেনারা পশ্চিম তীরে আটক করার পর তার মৃত্যু হলে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঘটনাটি নিয়ে ওয়াশিংটন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেতজাহ ইয়েহুদা ইউনিটের সেনাদের বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকবার আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ এসেছে।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

2h ago