পশ্চিমা দূতাবাসে পাসপোর্ট আটকে থাকায় ভোগান্তিতে সুদানিরা

সুদানে ২ বাহিনীর সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবন। ছবি: রয়টার্স
সুদানে ২ বাহিনীর সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবন। ছবি: রয়টার্স

আহমাদ মাহমুদ গত মার্চের শেষের দিকে খার্তুমে সুইডেনের দূতাবাসে ভিসা আবেদনসহ পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। তখন তিনি কল্পনাও করেননি যে এই পাসপোর্ট ফেরত আসবে না।

যখন সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ল, তখন সুইডেনের কূটনীতিকরা দূতাবাসের সব কার্যক্রম স্থগিত রেখে ২-৩ দিনের মাথায় সুদান ছেড়ে চলে যান।

এরপর মাহমুদ এক সুইডিশ কূটনীতিকের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে তাকে এর সমাধান খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি সুইডেনের দূতাবাস থেকে ভিসাসহ বা ভিসা ছাড়াই পাসপোর্টটি ফিরে পেতে অথবা অন্তত স্ট্যাম্প দেওয়া অনুলিপি দিতে তার প্রতি অনুরোধ জানান।

কিন্তু সেই কূটনীতিক তাকে নিরাশ করে জানিয়ে দেন যে, তা সম্ভব নয়।

মাহমুদের মতো হাজারো সুদানি নাগরিকের পাসপোর্ট পশ্চিমের বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাসে আটকে আছে। দূতাবাসের কার্যক্রম স্থগিত থাকা ও কর্মকর্তারা নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ায় সুদানিরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। গৃহযুদ্ধ কবলিত সুদান থেকে তারা বের হতে পারছেন না।

গতকাল শনিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গত ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে গেলে পশ্চিমের দেশের কূটনীতিকরা হঠাৎ খার্তুম ছেড়ে চলে যান। এ তালিকায় আছে—যুক্তরাজ্য, সুইডেন, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও স্পেন।

ভুক্তভোগীরা আল জাজিরাকে জানান, যথাযথ সমাধান না করেই এসব দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা খার্তুম ছাড়েন।

কয়েকজন সুদানি গণমাধ্যমটিকে বলেন, সমাধান চেয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন পাসপোর্টের আবেদন জানানোর উপদেশ দেন।

সুদানের অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক সরকার এ মুহূর্তে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে আছে। এ সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫০০-র চেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী মিশর, চাদ, দক্ষিণ সুদান ও জিবুতিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

তবে এসব দেশে যেতে হলেও পাসপোর্ট প্রয়োজন। খার্তুম থেকে ৯০০ কিলোমিটার দূরে মিশরে পাসপোর্ট ছাড়া কোনো সুদানিকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

আহমাদ মাহমুদ বলেন, 'বোমাবর্ষণের মাত্রা অনেক বেড়ে গেলেও দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে পারবো না, কারণ আমার হাতে পাসপোর্ট নেই। আমি নিশ্চিত কূটনীতিকরা সুদানের দূতাবাসের বিষয়ে চিন্তিত নয়। আমার মতো ভিসা আবেদনকারীর বিষয়ে চিন্তা করার তো প্রশ্নই ওঠে না।'

সুদানের প্রবাসী দ্বৈত নাগরিকরাও একই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন।

যুক্তরাজ্যের এক চিকিৎসক ভিসা আবেদনকেন্দ্রে একাধিকবার জিজ্ঞাসা করেন, তার স্ত্রী খার্তুমে যুক্তরাজ্যের দূতাবাস থেকে তার পাসপোর্ট ফিরে পেতে পারেন কী না।

তিনি এ প্রশ্নের সদুত্তর পাননি এবং তার স্ত্রী এখনো পাসপোর্ট ফিরে পাননি।

আন্তর্জাতিক আইন ও সুদান বিষয়ে গবেষক এমা দিনাপোলি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'সুদানের নাগরিকদের পাসপোর্ট ফিরিয়ে না দিয়ে তাদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পশ্চিমের সরকারদের আইনি প্রক্রিয়ায় দায়বদ্ধ করা যেতে পারে।'

তিনি জানান, পশ্চিমের সরকারগুলো নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে (আইসিসিপিআর) সই করেছেন।

আইসিসিপিআরের ১২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, 'যেকোনো মানুষ নির্বিঘ্নে তার নিজ দেশসহ যেকোনো দেশ ছেড়ে যেতে পারেন।'

দিনাপোলি আল জাজিরাকে বলেন, 'যেসব দেশ দূতাবাস বন্ধ করে চলে গিয়ে অসংখ্য মানুষের নির্বিঘ্ন যাতায়াতকে বাধাগ্রস্ত করেছে, আমার মতে, ভুক্তভোগীদের জন্য বিকল্প নথির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়।'

সৌদি নাগরিকরা জাহাজে করে সুদান ছেড়ে যাচ্ছেন। ছবি: রয়টার্স
সৌদি নাগরিকরা জাহাজে করে সুদান ছেড়ে যাচ্ছেন। ছবি: রয়টার্স

'ভুক্তভোগীরা এখন তাদের যাতায়াতের স্বাধীনতার অধিকার কাজে লাগাতে পারছেন না, যেটি এ ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে অত্যন্ত জরুরি,' যোগ করেন তিনি।

লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী টোবি ক্যাডম্যান সুদানে চলমান সংঘর্ষে বিদেশি দূতাবাসের ভূমিকা নিয়ে বলেন, 'আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ইউরোপীয় কূটনীতিকরা সুদানের নাগরিকদের পাসপোর্ট আটকে রেখেছেন? স্পষ্টতই এতে সুদানের নাগরিকদের বৈধ ও আইনি উপায়ে নিরাপদ দেশগুলোতে আশ্রয় পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।'

আল জাজিরা মন্তব্যের জন্য যুক্তরাজ্যের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সাড়া পায়নি।

সুইডেনের দূতাবাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও কার্যক্রম শুরু হবে।

সুইডিশ দূতাবাসের মুখপাত্র দিদজিস মেলবিকসিস বলেন, 'সমগ্র পরিস্থিতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক।'

ডাচ দূতাবাসের মুখপাত্র তেসা ভ্যান স্তাদেন সুদানিদের দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

আইনজীবী ক্যাডম্যান মনে করেন, সুদানিদের পাসপোর্ট আটকে রাখার জন্য পশ্চিমের দেশগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

Comments

The Daily Star  | English
sirens sound in israel after iran missile attack

Sirens sounded after missiles launched from Iran, says Israeli army

Trump to decide within two weeks on possible military involvement

15h ago