মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যা বললেন পুতিন
প্রায় দুই বছর আগে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরুর পর প্রথমবারের মতো কোনো মার্কিন সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, রাশিয়া তাদের লক্ষ্য অর্জনে 'শেষ পর্যন্ত' যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, কিন্তু পোল্যান্ড বা লাটভিয়ার মতো অন্য কোন দেশে হামলা চালাতে তিনি আগ্রহী নন।
আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসনকে বৃহস্পতিবার দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন জানান, পশ্চিমা নেতারা এতোদিনে বুঝতে পেরেছে যে রাশিয়াকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই তারা আগামীতে কি করা উচিত, সেটা নিয়ে চিন্তায় আছে।
'আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত', যোগ করেন পুতিন।
পুতিন আরও জানান, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ইভান গের্শকোভিচকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে চুক্তি হতে পারে। এই মার্কিন সাংবাদিক প্রায় এক বছর ধরে রাশিয়ায় আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে।
Ep. 73 The Vladimir Putin Interview pic.twitter.com/67YuZRkfLL
— Tucker Carlson (@TuckerCarlson) February 8, 2024
রক্ষণশীল টক-শো সঞ্চালক হিসেবে পরিচিত টাকার কার্লসন মঙ্গলবার মস্কোতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এই সাক্ষাৎকার নেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পুতিন জানান, 'শুধু যদি পোল্যান্ড রাশিয়ার ওপর হামলা চালায়, তাহলেও সেখানে আমরা সেনা পাঠাব। পোল্যান্ড, লাটভিয়া বা অন্য কোনো দেশের বিষয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই।'
সাক্ষাৎকারে পুতিন রুশ ভাষায় কথা বলেন। তার বক্তব্য ইংরেজিতে ডাবিং করা হয়। সাক্ষাৎকারের শুরুতে তিনি ইউক্রেন, পোল্যান্ড ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘ মন্তব্য করেন।
পুতিন সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, ২০২২ এর এপ্রিলে ইউক্রেন সহিংসতা বন্ধের চুক্তিতে সম্মতি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু রুশ সেনাবাহিনী কিয়েভ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তারা চুক্তি থেকে পিঠটান দেয়।
'এখন তারা ভাবছে, কীভাবে সেই আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়া যায়। আমরাও এর বিপক্ষে নেই। বিষয়টা খুব হাস্যকর হবে যদি এই অন্তহীন সেনা নিয়োগ, আতঙ্কজনক পরিস্থিতি ও নানা অভ্যন্তরীণ সমস্যার মধ্যে থেকেও ইউক্রেন সমঝোতার পথ বেছে না নেয়', যোগ করেন পুতিন।
রুশ নেতা জানান, যুক্তরাষ্ট্রেরও রয়েছে নিজস্ব সমস্যা।
'রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করাই কি উত্তম নয়? চুক্তিতে সম্মত হন। আপনাদেরকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা রাখতে হবে। বুঝে নিন, রাশিয়া তাদের লক্ষ্য অর্জনে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে', যোগ করেন পুতিন।
রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ওয়াশিংটন এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে ১১ হাজার কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। দেশটি পরিষ্কার করেছে, পুতিনের দেওয়া শর্ত নিয়ে আলোচনায় তারা আগ্রহী নয়।
এর আগে সর্বশেষ সিএনবিসির হ্যাডলি গ্যাম্বল ২০২১ এর অক্টোবরে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন।
এমন সময় কার্লসনের এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ পেয়েছে যখন মার্কিন আইনপ্রণেতারা ইউক্রেন যুদ্ধে আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়ে বিতর্ক করছেন। একইদিনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি দেশটির জনপ্রিয় সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করে স্থলবাহিনীর প্রধানকে তার স্থলাভিষিক্ত করেছেন।
মার্কিন সিনেটে ইউক্রেনের জন্য ছয় হাজার ১০০ কোটি ডলার তহবিলের একটি বিল পাস হয়েছে। তবে এটা সম্ভবত হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এর অনুমোদন পাবে না। হাউজে রিপাবলিকান পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ, যাদের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে আরও সহায়তা পাঠানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন কার্লসনের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হয়েছেন, কারণ তার কাছে মনে হয়েছে এই সাংবাদিক অন্যান্য পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের মতো ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে 'একপেশে' সংবাদ পরিবেশন করেন না।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টাকার কার্লসনের ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
ট্রাম্প কিয়েভে কোটি কোটি ডলার পাঠানো নিয়ে অভিযোগ করেছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে কার্লসন মন্তব্য করেন, পশ্চিমা গণমাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধকে এমনভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে যাতে তা কিয়েভের জন্য ইতিবাচক হয়।
Comments