শান্তিতে নোবেল পেলেন বেলারুশ মানবাধিকারকর্মী ও ইউক্রেন-রাশিয়ার ২ প্রতিষ্ঠান

এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী অ্যালেস বিয়েলাৎস্কি এবং রাশিয়ান মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল এবং ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ।
ছবি: নোবেল প্রাইজ/ফেসবুক

এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বেলারুশের মানবাধিকারকর্মী অ্যালেস বিয়েলাৎস্কি এবং রাশিয়ান মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল এবং ইউক্রেনীয় মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ।

আজ শুক্রবার অসলোতে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি ২০২২ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করে।

পুরস্কারের ঘোষণায় নোবেল কমিটি জানিয়েছে, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীরা নিজ দেশে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা বহু বছর ধরে ক্ষমতার সমালোচনা এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় কাজ করছে। তারা যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নথিভুক্ত করার জন্য অসামান্য অবদান রেখেছে। 

অ্যালেস বিয়েলাৎস্কি

১৯৮০'র দশকের মাঝামাঝিতে বেলারুশের গণতন্ত্রকামী আন্দোলনের সূচনাকারীদের একজন ছিলেন অ্যালেস বিয়েলাৎস্কি। তিনি নিজ দেশে গণতন্ত্রের প্রচার এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নে জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ ছাড়া অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে, তিনি ১৯৯৬ সালে দেশটির বিতর্কিত সাংবিধানিক সংশোধনীর (যা রাষ্ট্রপতিকে স্বৈরাচারী ক্ষমতা প্রদান করে) প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভিয়াসনা (স্প্রিং) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত করেন। কারাবন্দি বিক্ষোভকারী এবং তাদের পরিবারের জন্য সহায়তা প্রদান করে ভিয়াসনা। পরবর্তী বছরগুলোতে ভিয়াসনা ব্যাপক পরিসরে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে।

অ্যালেস বিয়েলাৎস্কি। ছবি: নোবেল প্রাইজ/ফেসবুক

দেশটির সরকার বারবার অ্যালেস বিয়েলাৎস্কিকে থামানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত কারারুদ্ধ ছিলেন। সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভের পর ২০২০ সালে তাকে আবারও গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে এখনো বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে। বেলারুশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে এক ইঞ্চিও ছাড় দেননি বিয়েলাৎস্কি।

মেমোরিয়াল

১৯৮৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মানবাধিকারকর্মীরা মানবাধিকার সংস্থা 'মেমোরিয়াল' প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল কমিউনিস্ট শাসনের সময় নিপীড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা যেন কখনোই সেটা ভুলে না যায় তা নিশ্চিত করা। প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আন্দ্রেই সাখারভ এবং মানবাধিকার আইনজীবী স্বেতলানা গানুশকিনা। 'মেমোরিয়াল' এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে, অতীতের অপরাধের মোকাবিলা নতুনকে প্রতিরোধের জন্য অপরিহার্য।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, মেমোরিয়াল রাশিয়ার বৃহত্তম মানবাধিকার সংস্থায় পরিণত হয়। 

সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ

ইউক্রেনে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে কিয়েভে সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি ইউক্রেনের নাগরিক সমাজকে শক্তিশালী করার এবং ইউক্রেনকে একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে থাকে। 

ইউক্রেনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে অধিভুক্ত হতে সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।  

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে রাশিয়ান যুদ্ধাপরাধ শনাক্ত ও নথিভুক্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতায় দোষী পক্ষগুলোকে তাদের অপরাধের জন্য জবাবদিহি করার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ৷
 

 

Comments