ফুটবল বিশ্বকাপের জনপ্রিয় কিছু থিম সং

বিশ্বকাপ ফুটবলকে বলা হয় ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। প্রতি ৪ বছর পরপর ফুটবল বিশ্বকাপ আসে এবং চোখের পলকে চলেও যায়। প্রিয় টিমকে সমর্থন করা, জার্সি কেনা, পতাকা টাঙ্গিয়ে সবাইকে জানান দেওয়া এ যেন অন্যরকম এক উৎসব।
শাকিরা, জাংকুক ও নোরা ফাতেহি। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপ ফুটবলকে বলা হয় 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'। প্রতি ৪ বছর পরপর ফুটবল বিশ্বকাপ আসে এবং চোখের পলকে চলেও যায়। প্রিয় টিমকে সমর্থন করা, জার্সি কেনা, পতাকা টাঙ্গিয়ে সবাইকে জানান দেওয়া এ যেন অন্যরকম এক উৎসব।

বিশ্বকাপের থিম সং নিয়েও মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি থাকে না। প্রতিটি বিশ্বকাপেই ফুটবলকে ঘিরে কিছু গান তৈরি হয়। যা বিশ্বকাপের স্মৃতি বারবার মনে করিয়ে দেয়। থিম সং গুলো অফিশিয়ালি রিলিজ হয় বিশ্বকাপ শুরুর কয়েক মাস আগে। এই গানগুলোই যেন বারবার ফুটবলপ্রেমী জনতার উত্তেজনার পারদ আরও বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বকাপ মানেই যেন ওয়াভিং ফ্ল্যাগ' কিংবা শাকিরার মনমাতানো ছন্দের 'ওয়াকা ওয়াকা'। রিকি মার্টিনের গাওয়া 'দ্য কাপ অব লাইফ' গানের 'গোল, গোল, গোল, আলে আলে আলে...' এই লাইনটি এখনো অনেকের মনে জায়গা করে আছে।

১৯৬২ সালে অনুষ্ঠিত চিলির বিশ্বকাপ থেকে 'অফিশিয়াল থিম সং' এর ঐতিহ্য চলে আসছে। বস্তুত, বিশ্বকাপের আয়োজক দেশগুলো তাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরে ফিফার অফিশিয়াল থিম সংয়ের মাধ্যমে। প্রধানত বিশ্বকাপ থিম সং নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয় ইংরেজি, বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশের ভাষা এবং স্প্যানিশ ভাষাকে। ফিফা ছাড়াও বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ গান তৈরি করে থাকে। জনপ্রিয়তার বিচারে সেগুলোও কম যায় না।

 ফুটবল বিশ্বকাপের জনপ্রিয় ও আলোচিত কিছু গান নিয়েই আজকের আলোচনা।

হায়া হায়া (২০২২)

হায়া হায় থিম সংয়ের একটি দৃশ্য। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

এবারের কাতার বিশ্বকাপের জন্য ফিফা কয়েকটি গান প্রকাশ করে। প্রথমে থিম সং হিসেবে গত এপ্রিলে ফিফা প্রকাশিত প্রথম অফিশিয়াল সাউন্ডট্র্যাকটির শিরোনাম 'হায়া হায়া (বেটার টুগেদার)। গানটিতে গলা মিলিয়েছেন ৩ জন সংগীতশিল্পী। মার্কিন গায়ক ত্রিনিদাদ কার্দোনা, জাপানি গায়িকা আইশা এবং নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন গায়ক ডেভিড আদেদেজি। বিশ্বকাপের থিম সং শুধু গান নয় বরং এখানে স্বাগতিক দেশের সংস্কৃতির আবহ দেওয়ারও চেষ্টা থাকে। হায়া হায়া গানের ভিডিওতে দেখা যায় মরুভূমিতে ৩ জন শিল্পী গান করছেন কখনো আলখাল্লা পড়ে, কখনো গায়িকা আইশার মাথায় কাপড় দেওয়া।

'হায়া হায়া' রিলিজের ৪ মাসের মাথায় ফিফা প্রকাশ করে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় থিম সং 'আরবো'। পুয়ের্তোরিকান শিল্পী ওজুনা এবং কঙ্গো বংশোদ্ভূত ফরাসি র‌্যাপার গিমস এই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন।

লাইট ইন দ্য স্কাই (২০২২)

লাইট ইন দ্য স্কাই থিম সংয়ের একটি দৃশ্য। ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া

ফিফা ৭ অক্টোবর প্রকাশ করে এবারের বিশ্বকাপের তৃতীয় থিম সং 'লাইট ইন দ্য স্কাই'। বলিউড মাতানো মরোক্কান বংশোদ্ভূত নৃত্যশিল্পী নোরা ফাতেহি আবির্ভূত হন এই গানে। শুধু নোরা ফাতেহিই নয় আরবীয় গানের সুরে সাউন্ডট্র্যাকটিতে আছেন আমিরাতের বালকিস, ইরাকি শিল্পী রাহমা রিয়াদ এবং মরক্কোর গীতিকার ও শিল্পী মানাল বেঞ্চলিখা।

ড্রিমার্স (২০২২)

ড্রিমার্স থিম সংয়ের একটি দৃশ্য। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

এবারের কাতার বিশ্বকাপ যেন একের পর এক চমক দিয়ে যাচ্ছে। এই চমকে দেওয়া শুরু হয়েছে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকেই। বিশ্বের জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম 'বিটিএস'র সর্বকনিষ্ঠ তারকা জাংকুক বিশ্বকাপের জন্য অফিশিয়াল সাউন্ডট্র্যাক প্রকাশ করেন। এশীয়দের মধ্যে প্রথম এবং পুরো বিশ্বে দ্বিতীয় গায়ক হিসেবে রিকি মার্টিনের পর বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্য একক গান প্রকাশ করেন এই গায়ক। এর আগে ১৯৯৮ সালে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর উপলক্ষে রিকি মার্টিন 'দ্য কাপ অব লাইফ' প্রকাশ করেছিলেন।

শুধু তাই নয় কোরিয়ান শিল্পী জাংকুক তার প্রকাশিত একক গান 'ড্রিমার্স' দিয়ে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন। কাতারের গায়ক এবং রেকর্ড প্রযোজক ফাহাদ আল কুবাইসির সঙ্গে আল-বায়ত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি তার 'ড্রিমার্স'-এর প্রিমিয়ার করে আরও একবার ভক্তদের হৃদয় উন্মাদনায় ভরিয়ে তোলেন এই বিটিএস তারকা।

লিভ ইট আপ (২০১৮)

লিভ ইট আপ থিম সংয়ের একটি দৃশ্য। ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া

২০১৮ সালে রাশিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপের পর্দা ওঠে। সনি মিউজিকের প্রযোজনায় 'লিভ ইট আপ' গানটিতে দেখা গেছে মার্কিন শিল্পী নিকি জ্যাম, জনপ্রিয় অভিনেতা উইল স্মিথ, রুশ গায়িকা ইরা ইসত্রেফি ও ডিপলোকে। এই গানের মিউজিক ভিডিওতে আগের কয়েকটি বিশ্বকাপের বিভিন্ন মুহূর্ত দেখানো হয়েছে। ইংরেজি, স্প্যানিশ ও রুশ ভাষায় নির্মিত হয় এই গানটি।

উই আর ওয়ান (২০১৪)

উই আর ওয়ান থিম সংয়ের একটি দৃশ্য। ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া

বিশ্বকাপের ২০১৪ সালের আসরকে ব্রাজিল স্বাগত জানায় 'উই আর ওয়ান' থিম সং দিয়ে। গানটি গেয়েছেন মার্কিন গায়ক পিটবুল, অভিনেত্রী জেনিফার লোপেজ ও ক্লদিয়া নিরেট। গানটি প্রকাশ করা হয়েছিল স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ও ইংরেজি ভাষায়।

লা লা লা (২০১৪)

লা লা থিম সংয়ের একটি দৃশ্য। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

২০১৪ সালের আরেক অফিশিয়াল থিম সং গেয়েছেন 'ওয়াকা ওয়াকা' খ্যাত কলম্বিয়ান পপ তারকা শাকিরা। ২০১০ সালের ওয়াকা ওয়াকা গান ছিল সবার মুখে মুখে। ২০১৪ সালে শাকিরা গান গাইবেন শুনে আবারও একটি মাইলস্টোন পেতে যাচ্ছে ভেবে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল ভক্তরা। কিন্তু শাকিরার ২০১৪ সালের গানে সুর, লয়, ছন্দ, ভিডিওতে বিভিন্ন ফুটবল তারকার উপস্থিতি কিংবা তার মন মাতানো নাচ থাকলেও ওয়াকা ওয়াকার মতো এতটা আলোচিত হয়নি ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ থিম সং লা লা লা।

ওয়াকা ওয়াকা (২০১০)

ওয়াকা ওয়াকা থিম সংয়ের একটি দৃশ্য। ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া

২০১০ সালে আয়োজক দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা, আফ্রিকা মহাদেশে সর্বপ্রথম বিশ্বকাপ আয়োজকের তালিকায় নাম লেখায়। ২০১০ সাল ছিল বিশ্বকাপ থিম সং এর স্বর্ণযুগ। বিশ্বকাপের থিম সং 'ওয়াকা ওয়াকা' গেয়ে ভক্তদের প্রত্যাশার মাত্রা আকাশচুম্বী করেন কলম্বিয়ান পপ তারকা শাকিরা। 'ওয়াকা ওয়াকা' গানটি এখনো অনেকের কাছেই বিশ্বকাপের সেরা গান। বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক ব্যবসা সফল গানটি গেয়ে এশিয়াতে রীতিমত তারকা বনে যান শাকিরা। গানের ভিডিওতে দেখা যায় অনেক তারকা ফুটবলারকে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে বিশ্বকাপ অফিশিয়াল থিম সং গুলোর মধ্যে সর্বাধিক ভিউ প্রাপ্ত গানও শাকিরার ওয়াকা ওয়াকা।

ওয়েভিন ফ্ল্যাগ (২০১০)

ওয়াভিন ফ্ল্যাগ গানের একটি দৃশ্য। ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া

বিশ্বকাপ ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক হয়ে আছে 'ওয়েভিন ফ্ল্যাগ' গানটি। অথচ মজার ব্যাপার হলো বিশ্বকাপের কোনো অফিশিয়াল থিম সং এর জন্য এটি নির্মাণ করা হয়নি। ২০১০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানে কোকাকোলার পৃষ্ঠপোষকতায় গানটি গান সোমালিয়-কানাডিয়ান শিল্পী কেনান। অথচ এটাই হয়ে যায় বিশ্বকাপের উদ্দীপনা, উত্তেজনার অন্য নাম। কেনানের কণ্ঠে গাওয়া ওয়েভিং ফ্ল্যাগ ফুটবল ভক্তদের মনে শিহরণ জাগায়।

Comments

The Daily Star  | English

Political parties want road map to polls

Leaders of major political parties yesterday asked Chief Adviser Professor Muhammad Yunus for a road map to the reforms and the next general election.

1h ago