‘ট্রাম্পের দায়মুক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্টদের হাতে অন্যায্য ক্ষমতা তুলে দিতে পারে’

আইওয়া অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
আইওয়া অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। ট্রাম্পের দাবি, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি এ ধরনের সব অভিযোগ থেকে দায়মুক্ত এবং এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাবে না। তবে এতে আপত্তি তুলেছেন বিচারকরা।  

আজ বুধবার এ বিষয়টি জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ট্রাম্পের আইনজীবীরা গতকালের শুনানিতে যুক্তি দেন, নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের অভিযোগ খারিজ করা উচিত, কারণ তিনি এই বিচারিক প্রক্রিয়া থেকে দায়মুক্ত।

তবে এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কলাম্বিয়া ডিসট্রিক্টের সার্কিট প্যানেলের তিন বিচারপতি। তারা মতামত দেন, ট্রাম্পের আইনজীবীদের দায়মুক্তির যুক্তি ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্টদের হাতে অন্যায্য ক্ষমতা তুলে দিতে পারে।

স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথ যুক্তি দেন, প্রেসিডেন্ট আইনের ঊর্ধ্বে নন। তিনি হুশিয়ারি দেন, এই বিচার প্রক্রিয়া থেকে ট্রাম্পকে দায়মুক্ত করা হলে 'বাঁধ ভেঙে যাবে' এবং ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টদের ভোট কারচুপি বা অন্যান্য প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা থেকে বিরত রাখার কোনো প্রক্রিয়া অবশিষ্ট থাকবে না।

শুনানিতে ট্রাম্পের অ্যাটর্নি জন সাউয়ের যুক্তি দেন, ২০২০ এর নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও ট্রাম্প যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন, সেগুলো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। যে কারণে তিনি দায়মুক্ত।

এ বিষয়টি নিয়ে বিচারকরা অসংখ্য প্রশ্ন তোলেন।

ট্রাম্পের আইনজীবীরা আরেকটি যুক্তি দেন, যা হল, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুধু তখনই ফৌজদারি অপরাধে বিচারকাজ চলতে পারে যদি তিনি একই অপরাধে কংগ্রেসে অভিযুক্ত হন এবং অভিশংসনের স্বীকার হন। যা এ ক্ষেত্রে ঘটেনি।

এ যুক্তির বিপরীতেও আসে অনেক প্রশ্ন।

ডিসি সার্কিট আদালতের বিচারক ক্যারেন হেন্ডারসন মন্তব্য করেন, 'আমার কাছে বিষয়টা বিভ্রান্তিকর লাগছে, যে তার (ট্রাম্পের) সাংবিধানিক দায়িত্ব ছিল আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ অব্যাহত রাখা, আবার একইসঙ্গে বলা হচ্ছে, তিনি চাইলে ফৌজদারি আইনের লঙ্ঘন করতে পারেন।'

কয়েকজন বিচারক ট্রাম্পের দায়মুক্তির দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করে জানান, এ ধরনের নজির তৈরি হলে তা ভবিষ্যতে খুবই মারাত্মক ফল এনে দিতে পারে। ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্টরা কোনো ধরনের পরিণতির ভয় না করে যথেচ্ছা আইন ভঙ্গ করতে পারেন।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনোনীত বিচারক ফ্লোরেন্স প্যান কিছু কাল্পনিক পরিস্থিতির উদাহরণ দিয়ে ট্রাম্পের আইনজীবীদের যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

'একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি চাইলে নৌবাহিনীর সিল টিম সিক্সকে নির্দেশ দিতে পারেন, "অমুক" রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে হবে? সেটাও তো প্রেসিডেন্ট হিসেবে একটি আনুষ্ঠানিক নির্দেশ, এটাও তার একটি আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ—ঠিক কি না?'

ট্রাম্পের আইনজীবী সাউয়ের জবাব দেন, 'হ্যাঁ তিনি চাইলে তা করতে পারবেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে দ্রুত অভিশংসন উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং তারপর তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়া চলবে'। 

এই প্রশ্ন নিয়ে যুক্তিতর্ক চলে এবং উভয় পক্ষ তার নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকেন।

একইসঙ্গে বিচারকদের বেঞ্চটি যুক্তি দেয়, বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে আপিল আদালতের দায়মুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আছে কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়।

বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এ ধরনের যুক্তি দিয়ে আপিল আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়ভার এড়াতে চাচ্ছে। তবে ট্রাম্প পরবর্তীতে অভিযুক্ত হলে নিশ্চিতভাবেই ধরে নেওয়া যায়, বিষয়টি আবারও আপিল আদালতের কাছে আসবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

US takes in $87b from tariffs in first half of 2025

More than $87 billion in tariff revenue collected by end of June, surpassing $79 billion total for all of 2024

44m ago