আমেরিকা পার্টি: বিকল্প পথে কংগ্রেস দখলের পরিকল্পনা মাস্কের!

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল বলতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকে মূলত দুটি দল—রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি। এখন আরেকটি দল নিয়ে বেশ হইচই পড়েছে। এটি ধনকুবের ইলন মাস্কের 'আমেরিকা পার্টি'।

সম্প্রতি সেই আলোচনা আরও উস্কে দিয়েছেন মাস্ক। গতকাল ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ২৫০তম স্বাধীনতা দিবসে নিজের মালিকানাধীন সমাজমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করে তিনি বলেন, 'স্বাধীনতা দিবস হলো দ্বিদলীয় (কেউ কেউ বলবেন একদলীয়) ব্যবস্থা থেকে স্বাধীনতা চান কি না, তা জিজ্ঞাসা করার উপযুক্ত সময়!'

পোস্টের শেষাংশে তিনি 'আমাদের কি আমেরিকা পার্টি তৈরি করা উচিত?' প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে হ্যাঁ-না ভোট দেওয়ার অপশনও জুড়ে দিয়েছেন।

পোস্টটি করার প্রায় ২০ ঘণ্টা পর দেখা যায়—এতে ভোট দিয়েছেন ১১ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ 'হ্যাঁ' ভোট দিয়েছেন, 'না' ভোট বাকি ৩৫ শতাংশের।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই নিজের অতি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হিসেবে পাশে রেখেছিলেন মাস্ককে। কিন্তু, সেই মাস্কই এখন ট্রাম্পের বড় সমালোচক, কিছু ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষও।

অনেক দরকষাকষি, আলোচনা-সমালোচনা ও জল ঘোলা করার পর গত ৩ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে সরকারি খরচ ও কর সংক্রান্ত ট্রাম্পের 'বিগ, বিউটিফুল বিল' পাস হয়েছে। একে অসামান্য অর্জন হিসেবে দেখছেন তিনি।

বিশ্লেষকরাও বলছেন, এই বিল পাসের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও নিজের নির্ধারণ করা লক্ষ্য পূরণে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প।

কিন্তু, মিত্র মাস্কের সঙ্গে ট্রাম্পের দূরত্ব তৈরি হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ এই বিলটিই।

ট্রাম্পের ভাষায়, এই বিশাল ও অসাধারণ বিলের প্রতিবাদ জানিয়েই সরকারি কর্মদক্ষতা দপ্তর প্রধানের চাকরি থেকে ইস্তফা দেন মাস্ক। অথচ, এই মাস্ককে তিনিই ডেকে এনে এই পদে বসিয়েছিলেন।

মাস্ক বলেছিলেন, এই ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ খরচ বিল কংগ্রেসে পাস হলে তার একদিন পরই তিনি 'আমেরিকা পার্টি' নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন।

কথাটা খানিকটা রেখেছেন মাস্ক। গত ৩ জুলাই বিল পাশ হওয়ার পরদিনই নিজের 'আমেরিকা পার্টি' গঠনের বিষয়ে সরব হয়েছেন টেসলা-প্রধান।

দুই প্রধান রাজনৈতিক দল তথা ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির আধিপত্য থেকে মার্কিনিদের বের করে আনতে মাস্কের এই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত হালে পানি পাবে কি না তা নিয়েও বিশ্লেষকদের মধ্যে সংশয় আছে।

ইতিহাসে দেখা যায়—মার্কিন রাজনীতিতে তৃতীয় কোনো দল এখনো সাফল্য পায়নি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন—বাস্তবতার নিরিখে যুক্তরাষ্ট্রের দুই-দলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতি অন্য কোনো দল তেমন চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারেনি। তাদের মতে, আর্থিক ও আইনগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন দল গঠন করা বেশ কঠিন। প্রার্থী পেতেও নতুন দলকে হিমশিম খেতে হবে। ভোটার-সমর্থক পাওয়া তো আরও পরের বিষয়।

সেই ধারা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে সত্যিই নতুন দল গঠন এবং ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের আধিপত্য ভেঙে তৃতীয় পক্ষ তৈরি করার এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবেন কি না, সেই উত্তর পাওয়া যাবে সময়ের অপেক্ষায় থেকেই।

এই বাস্তবতার কারণেই হয়তো মাস্কের পরিকল্পনায় আছে আরেকটি বিষয়। নতুন দল গঠনের বিষয়ে ভোটাভোটির পোস্ট দেওয়ার কিছু সময় পরই তিনি আরেকটি এক্স পোস্টে লেখেন, 'এটি কার্যকর করার উপায় হলো মাত্র দুই বা তিনটি সিনেট আসন এবং আট থেকে ১০টি হাউস ডিস্ট্রিক্টের ওপর লেজার-ফোকাস করা। আইনসভার মার্জিনের সীমা খুবই কম থাকায় বিতর্কিত আইনগুলোর ওপর সিদ্ধান্তমূলক ভোট হিসেবে কাজ করার জন্য সেটি যথেষ্ট হবে—যাতে নিশ্চিত করা যায় যে সেগুলো জনগণের প্রকৃত ইচ্ছাপূরণ করছে।'

মূলত, কংগ্রেসে কোনো বিল পাশ করতে গেলে কয়েকটি ভোটের ব্যবধানে পাস হওয়ার বিষয়টিকে লক্ষ্যবন্তু বানাতে চাইছেন মাস্ক। অর্থাৎ, ভোটের ফলাফল বদলে দেয় যে অল্প কয়েকটি ভোট সেই সংখ্যক জনপ্রতিনিধি মাস্ক তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, যাতে শেষ পর্যন্ত ফলাফল তার কথা মতো চূড়ান্ত হয়।

Comments

The Daily Star  | English
support for low income working mothers

A lifeline for low-income working mothers

Before the sun rises over Dhaka’s Korail slum, many mothers set out early for a long day of work, carrying the unspoken worry of who will care for their children while they are away.

18h ago