সংলাপের ‘ফল’ নিয়ে সংশয় সন্দেহ
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/abul_moksud_and_arefin_siddique.jpg?itok=Q6TZzBVb×tamp=1541065226)
নবগঠিত বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে বহুল প্রত্যাশিত সংলাপে বসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংলাপের এই আয়োজনকে ইতিবাচকভাবেই দেখা হচ্ছে। তবে সংলাপের অতীত ইতিহাস যদিও সুখকর নয়। এরিমধ্যে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে কি না, এ ব্যাপারে মত-দ্বিমত দেখা দিয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদর রহমান মান্না বলেছেন, সংলাপে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে তাদের মনে সন্দেহ রয়েছে।
সংলাপ নিয়ে আজ দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘সংলাপের ফল নিয়ে আশাবাদী হতে পারছি না। তবে তাদের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল, তা কিছুটা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তাছাড়া ফলপ্রসূ হবে বলে মনে হয় না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবির যদি অর্ধেকও সরকার মেনে না নেয়, তাহলে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না।’
বিশিষ্ট এই ব্যক্তি বলেন, ‘সরকার ভেঙে দেওয়া তো জনসাধারণের দাবি। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য এ ধরণের সংলাপ চালিয়ে যাওয়া উচিত। বিরোধী পক্ষের ন্যায়সঙ্গত দাবি সরকারের মানা উচিত। আর যদি সরকার তার কোনোটাই মেনে না নেয়, তাহলে তো এই আলোচনার প্রয়োজনীয়তাই হুমকিতে পড়ে যাবে।’
‘দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে যে, সরকার বিষয়টিকে খুবই হালকাভাবে নিয়েছে। এতটা হালকাভাবে নেওয়া উচিত হয়নি সরকারের। যার ফলে, সংলাপ কতোটা ফলপ্রসূ হবে সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে’, মত দেন মকসুদ।
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপে বসার সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত ইতিবাচক। কারণ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে দেশীয় রাজনীতিতে বিশ্বাসের জায়গা অনেকখানি নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সংলাপের বিষয়টি তাই রাজনীতিতে ইতিবাচক দিকের সূচনা করবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে বহুল প্রত্যাশিত এই সংলাপে দুই পক্ষকেই “ডায়নামিক মাইন্ড” নিয়ে বসতে হবে। “স্ট্যাটিক” থাকলে চলবে না। সংবিধানকে সমুন্নত রেখে আলোচনায় সমাধান খুঁজে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।’
‘আজকের সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্ব বেশি থাকবে, যদি তারা অর্থবহ সংলাপ চায়। কারণ এ ব্যাপারে অতীত ইতিহাস ভালো না। আমরা চাই যুক্তিনির্ভর আলোচনার মাধ্যমে একটি কার্যকর ফল বেরিয়ে আসবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে’- প্রত্যাশা আরেফিনের।
খালেকুজ্জামান বলেন, ‘জনগণের আশা এবং আশঙ্কার দোলাচলের মধ্যেই সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তবুও চলমান রাজনৈতিক পরম্পরায় এটি ইতিবাচক গতিশীলতা আনবে বলেই বিশ্বাস।’
তিনি বলেন, ‘সংলাপে যেকোনো বিষয় নিয়েই আলোচনা হতে পারে। এক্ষেত্রে সংবিধান কোন বাধা নয়, যদি সঠিক রাজনৈতিক চর্চা থাকে। কিন্তু কথা হচ্ছে, যারা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছেন তারা ক্ষমতার বাইরে থাকাটা মেনে নিতে চাইবেন কি না। সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, ক্ষমতা থেকে সরে গেলে তাদের এক লাখ লোক মারা পড়বে। কিন্তু এটা তো সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দেশের জনগণ সবারই নিশ্চিত করার কথা যে, নিজের এবং বিরোধী পক্ষের কেউ মারা যাবে না।’
‘মামলা, হামলার মাধ্যমে বিরোধী দলকে বিপন্ন করে দেওয়ার যে সংস্কৃতি চলছে, তা থেকে মুক্ত হতে হবে। ক্ষমতায় থাকা এবং না থাকা ব্যাপারে জনগণের রায়ের উপরই নির্ভরশীল থাকতে হবে। তালগাছ আমার- এই ভাবনা থাকলে সংলাপ সফল হয় না’ বলেন তিনি।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখানে পক্ষ-বিপক্ষের লাভ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে পারে না। সবার আগে জনগণের স্বার্থ দেখতে হবে। জনগণের প্রতিনিধিত্বের মধ্য থেকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’
‘দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সংলাপের “হোমওয়ার্ক” দরকার ছিল। আত্মবিশ্লেষণ, আত্মজিজ্ঞাসা দরকার ছিল। আমরা এখনও কেন গণতান্ত্রিক চর্চা করতে রাখতে পারছি না, তার কারণ খোঁজার প্রয়োজন ছিল। আমরা চাই উন্মুক্ত আলোচনা হোক, জনগণ যাতে এর ফল জানতে পারে এবং ভোটের মাধ্যমে যেন তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে” ভাষ্য খালেকুজ্জামানের।
এই বামপন্থী নেতা আরও বলেন, ‘সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মামলার রায়ের পর বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে জনগণের আস্থা নেই। শেষ পর্যন্ত মনে করছি, যে অবস্থা চলছে তাতে বড় ধরণের সংস্কার না করলে, তারচেয়েও বড় সঙ্কটে পড়বে দেশ। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, জনগণের অধিকার জনগণকেই ফিরিয়ে দিতে হবে। কারণ দেশের সর্বময় ক্ষমতার মালিক তারাই।’
Comments