গণভবনে সংলাপে ১৪ দল-ঐক্যফ্রন্ট

১ নভেম্বর ২০১৮, নব গঠিত বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বৈঠক করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের প্রতিনিধিরা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী বাসভবন গণভবনে চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সঙ্গে নব গঠিত বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বহুল আলোচিত বৈঠক।

আজ (১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় এই বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে আওয়ামী লীগ গত নয় বছর ক্ষমতায় থেকে দেশের যে উন্নয়ন করেছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এখন সবাই মিলে দেশকে গড়ে তুলতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ঘটনাস্থল থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের ২৩ সদস্য এবং গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ সদস্য অংশ নিয়েছেন।

ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে প্রথমে ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নাম দিলেও পরে তা বাড়িয়ে ২১ জন করা হয়। কিন্তু, এরপর জানানো হয় যে তাদের পক্ষ থেকে ২০ জন সংলাপে অংশ নিচ্ছেন।

এর আগে আজ বিকাল ৪টার দিকে ড. কামালের বাসায় ঐক্যফ্রন্টের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যায় ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপে তাদের পক্ষ থেকে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের অংশী নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া ৭ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করবেন।

সেসব দাবিকে যৌক্তিক হিসেবে অবহিত করে তিনি আরও বলেন, দেশের সংবিধান মেনেই এ দাবিগুলো মেনে নেওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, “আমরা খোলা মন নিয়ে সংলাপে বসতে যাচ্ছি। তবে গত কদিনের পরিবেশ বিবেচনা করে বলতে পারি যে এই সংলাপের বিষয়ে সরকার কতোটা আন্তরিক সে বিষয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে।”

সংলাপ সফল হলে দেশের জয় হবে বলেও মন্তব্য করেন মান্না।

dr kamal hossain
১ নভেম্বর ২০১৮, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে গণভবনে পৌঁছান গণফোরাম সভাপতি ও নব গঠিত বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন। ছবি: পলাশ খান

সংলাপে ১৪ দলের প্রতিনিধি

আজকের সংলাপে ১৪ দলের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলে মধ্যে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দিলীপ বড়ুয়া, রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু।

তালিকায় আরও রয়েছেন- মাঈনুদ্দিন খান বাদল, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, মাহবুবউল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আব্দুর রহমান, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ড. হাছান মাহমুদ, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম প্রমুখ।

ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের সদস্য

ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এএসএম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

যেভাবে রচিত হলো সংলাপের পথ

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ করার জন্যে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ড. কামাল গত ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংলাপের আহ্বান জানান। তার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী গত ৩০ অক্টোবর ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের তার সরকারী বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী তার চিঠিতে ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় গণভবনে সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেন।

Mirza Fakhrul Islam Alamgir
১ নভেম্বর ২০১৮, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে গণভবনে পৌঁছান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: পলাশ খান

ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি

১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।

২. নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।

৩. বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

৪. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, সামাজিক গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।

৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া।

৬. নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাঁদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা।

৭. তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া।

Comments