এই ব্যর্থতার ব্যাখ্যা কী?

১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮ পরে আজ ১৪৩। সর্বশেষ সাত টেস্ট ইনিংসে এই হলো বাংলাদেশের রান। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অতি টার্নিং উইকেট, এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে পেস-বাউন্স সামলাতে না পারা। ওই ছয় ইনিংসের তবু ব্যাখ্যা ছিল। কিন্তু এবার ‘দুর্বল’ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের জন্য জুতসই উইকেটে কেন এই হাল?
Mushfiqur Rahim
আউট হয়ে মাথা নিচু করে ফিরছেন মুশফিকুর রহিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে এই মুহুর্তে মাথা নিচু বাংলাদেশেরও। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮ পরে আজ ১৪৩। সর্বশেষ সাত টেস্ট ইনিংসে এই হলো বাংলাদেশের রান। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অতি টার্নিং উইকেট, এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে পেস-বাউন্স সামলাতে না পারা। ওই ছয় ইনিংসের তবু ব্যাখ্যা ছিল। কিন্তু এবার ‘দুর্বল’ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের জন্য জুতসই উইকেটে কেন এই হাল?

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনেই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ২৮২ রান করা জিম্বাবুয়ে লিড নিয়ে নিল ১৩৯ রানের!  দ্বিতীয় দিনেই আবার ব্যাট করতে নেমে ১ রান করে দিন শেষ করেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষায় আছে বড় চ্যালেঞ্জ।

উইকেটে ছিল না অতিরঞ্জিত টার্ন। স্পিনাররা সুবিধা পাচ্ছিলেন বটে তবে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ধসিয়ে দিলেন তো দুই পেসারই।  কার চেয়ে কে বেশি বাজে শট খেলে আউট হতে পারেন, এই নিয়েই যেন প্রতিযোগিতা।  ১৯ রানেই পড়ল চার উইকেট, ৪৯ রানে অর্ধেক ব্যাটিংই শেষ। ধুঁকতে ধুঁকতে পরে দেড়শোর কাছাকাছি যাওয়া গেল কেবল । টেন্ডাই চাতারা, কাইল জার্ভিসরা যেন আবির্ভূত ডেল স্টেইন, মিচেল স্টার্ক বেশে। সিকান্দার রাজা বনে গেলেন রবীচন্দ্র অশ্বীন। অন্তত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দশা দেখে তাই মনে হবে আপনার।

আগের দিন দলের হয়ে পেসার আবু জায়েদ রাহি এসে বলে গিয়েছিলেন, জিম্বাবুয়েকে ৩২০ রানের মধ্যে আটকাতে পারলেই খুশি থাকবেন তারা। এদিন সফরকারীদের লাঞ্চের খানিক আগে ২৮২ রানেই আটকে দিতে পেরেছিলেন বোলাররা। নিশ্চিতভাবেই বেশ তৃপ্ত থাকার কথা বাংলাদেশের। দিনশেষে সেই তৃপ্তির কথাই তো অস্বস্তির কাটা।

তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে লাঞ্চ থেকে ফিরেই যে লণ্ডভণ্ড টপ অর্ডার। শুরুটা ইমরুলকে দিয়ে। টেস্টে গেল ১৬ ইনিংস থেকেই ফিফটি নেই ইমরুলের। ওয়ানডের দারুণ ফর্মের পর এবার ভিন্ন কিছুর আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ব্যর্থতা টেনে নিয়েছেন আরেক ইনিংস। অস্বস্তিতে ভুগতে ভুগতে স্টাম্পে বল টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন চাতারার বলে। এরপরই টেস্টে ওপেনিংয়ে নিজের জায়গা আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে লিটন ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ঠিক একই পথ ধরেন নাজমুল হোসেন শান্তও।

পাঁচে নামা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ হয়েছেন সবচেয়ে দৃষ্টিকটু আউট। গত ১৪ ইনিংসে একটা মাত্র ফিফটি করা এই ব্যাটসম্যান এবার চাতারার বলটা আয়েশী ভঙ্গিতে টেনে আনেন স্টম্পে। এমন ব্যর্থতায় দলে তার নিজের জায়গাটাও হয়ে পড়েছে প্রশ্নবিদ্ধ।

বিপর্যয় সামাল দিতে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি মুমিনুল হক। সিকান্দার রাজার বলে খোঁচে মেরে ক্যাচ দেন স্লিপে। ৪৯ রানেই তাই বাংলাদেশ হারায় ৫ উইকেট।

বিপর্যয়ে ত্রাতা হয়ে যিনি দাঁড়াতে পারতেন বুক চিতিয়ে, সেই মুশফিক ফিরেছেন চা বিরতির পর পরই। জার্ভিসকে স্কয়ার কাটে চার মারার পর ওই ওভারেই আরেকবার এমন চেষ্টায় ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে।

আরিফুলের সঙ্গে প্রতিরোধের চেষ্টায় ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। নড়বড়ে শুরুর পর জুটি জমিয়ে ফেলেছিলেন। শেন উইলিয়ামসের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইলিয়ামসের হাতেই।

এরপর যা লড়েছেন কেবল অভিষিক্ত আরিফুল। ৭৬টি প্রথম শ্রেনির ম্যাচ খেলে পাকাপোক্ত হয়ে নেমেছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় ইনিংস খেলার সুনাম আছে, বিপর্যয়েও হাল ধরতে পারেন। এদিন দেখিয়েছেন নিবেদন। সঙ্গীর অভাবে অভিষেক টেস্টে ফিফটি পাওয়া হয়নি তার। অপরাজিত থেকেছেন ৪১ রানে।

সকালের শুরুটা হয় বাংলাদেশের সাদামাটা বোলিং দিয়ে। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান রেজিস চাকাভা আর পিটার মুর খেলছিলেন অনায়াসে। সৌভাগ্যের ফেরে তাদের জুটি ভাঙতে পারে বাংলাদেশ।  তাইজুলকে লেগ সাইডে ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন চাকাভা। ব্যাটে বলেও হয়েছিল বেশ। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে থাকা ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্ত শরীর বাঁচাতেই উলটো ঘুরে গিয়েছিলেন। বল এসে তার শরীরেই আটকে যায়, জমে যায় অবিশ্বাস্য ক্যাচ।

ওই সৌভাগ্য ভর করেই পরে জিম্বাবুয়ের টেল মুড়ে ছয় উইকেট তুলে নেন তাইজুল। এরমধ্যে শেষে দুটি আবার টানা দুই বলে। তাইজুলের সাফল্য অবশ্য উদযাপনের সুযোগ থাকেনি বাংলাদেশের। ‘দুর্বল’ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট হারের শঙ্কা নিয়ে দ্বিতীয় দিন মাঠ ছাড়ছে মাহমুদউল্লাহর দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস:  ২৮২/১০ ( ওভার ১১৭.৩)  মাসাকাদজা ৫২ , চারি ১৩, টেইলর ৬, উইলিয়ামস ৮৮, রাজা ১৯, মুর ৬৩* , চাকাবা ২৮, ওয়েলিংটন ৪, মাভুটা ৩, জার্ভিস ৪, চাতারা ০   ; জায়েদ ১/৬৮, তাইজুল ৬/১০৮, আরিফুল ০/৭, মিরাজ ০/৪৫, নাজমুল ২/৪৯, মাহমুদউল্লাহ ১/৩ )

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৪৩/১০  (ওভার ৫১)  (লিটন ৯,  ইমরুল ৫,  মুমিনুল ১১ ,  নাজমুল ৫, মাহমুদউল্লাহ ০, মুশফিক  ৩১, আরিফুল ৪১*,  মিরাজ  ২১, তাইজুল ৮, নাজমুল ৪,  আবু জায়েদ ০;  জার্ভিস ২/২৮, চাতারা ৩/১৯, মাভুটা ০/২৭, রাজা ৩/৩৫, ওয়েলিংটন ০/২১, উইলিয়ামস ১/৫ )

জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংস: ১/০   (মাসাকাদজা ব্যাটিং ১, চারি  ব্যাটিং ০  ; তাইজুল ০/১, নাজমুল ০/০)

দ্বিতীয় দিন শেষে  জিম্বাবুয়ে ১৪০ রানে এগিয়ে

 

 

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago