তফসিল ঘোষণায় তাড়াহুড়ো করছে নির্বাচন কমিশন

নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার পর প্রায় এক মাস সময় নিয়ে অতীতে তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশনগুলো। কিন্তু এবারের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় অস্বাভাবিক রকম তাড়াহুড়ো করছে ইসি।
cec
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। ফাইল ছবি

নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার পর প্রায় এক মাস সময় নিয়ে অতীতে তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশনগুলো। কিন্তু এবারের জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় অস্বাভাবিক রকম তাড়াহুড়ো করছে ইসি।

১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচন থেকে শুরু করে গত চারটি নির্বাচনের কোনোটিতেই তফসিল ঘোষণায় এমন তাড়াহুড়ো দেখা যায়নি। প্রত্যেক বারই দিনক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার পর গড়ে প্রায় এক মাস সময় নিয়েছিল তারা। সেদিক থেকে এবারের অবস্থা ভিন্ন।

এবারের নির্বাচনের ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে ৩১ অক্টোবর থেকে। এর মাত্র চার দিনের মাথায় কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিরোধী দলীয় জোটগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি বিবেচনায় নিয়ে সে দফায় তারা তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকে। তবে সেদিনই ইসি'র পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা হবে।

তফসিল ঘোষণার তারিখ পেছানোর দাবিতে ক্রমেই সোচ্চার হচ্ছে পাঁচ জাতীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর নেতারা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের লক্ষ্যে তারা যে সংলাপ শুরু করেছেন তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন ইসি তফসিল ঘোষণা না করে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজেদের দাবির কথাও তারা জানিয়ে এসেছেন।

কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা গতকাল রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠান শেষে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল তারা পেছাবেন না। তিনি এটাও বলেছেন, সকল রাজনৈতিক দল চাইলে নির্বাচনের তারিখ কিছুটা পেছানো যেতে পারে। তবে তফসিল পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

তফসিল ঘোষণা নিয়ে সিইসি গতকাল যে অবস্থানের কথা জানালেন অতীতের নির্বাচন কমিশনগুলোর সঙ্গে তার কোনো মিল পাওয়া যায় না। উদাহরণ হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচনের কথা ধরা যাক। সপ্তম জাতীয় সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর সংসদ ভেঙে দেওয়ায় সেবছর ১৪ জুলাই নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। এর আগের কোনো সংসদই তার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। সেদিক থেকে এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।

১৫ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। শান্তিপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সেটিই ছিল দেশের ইতিহাসের প্রথম ঘটনা।

সেবার নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার ৩৫ দিন পর ১৯ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএ সাঈদ তফসিল ঘোষণা করেছিলেন। তখন দেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট না থাকলেও সেবারই তফসিল ঘোষণায় সর্বোচ্চ সময় নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

এর পর ২০০৬ ও ২০১৩ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যখন দেশের রাজনীতিতে সংকটপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছিল তখনও ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার ৩০ দিন পর তফসিল দিয়েছিল সেসময়ের নির্বাচন কমিশনগুলো। সেবার দুই ক্ষেত্রেই তফসিল ঘোষণায় সংকট আরও জটিল হয়েছিল যার ফল  হিসেবে ২০০৭ সালের শুরুতে জরুরি অবস্থা জারি ও ২০১৪ সালে একটি একতরফা নির্বাচন পেয়েছিল দেশ।

Comments