বর্তমান সরকারের অধীনে সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন: ওবায়দুল কাদের

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। স্টার ফাইল ছবি

সংসদ বহাল রেখেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে গণভবনে দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

সংসদ ভেঙে দিয়ে তার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যরা কোনো ধরনের বাড়তি সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের জানিয়েছেন। তবে সংসদ বহাল রেখেই এর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এটা সংবিধান সম্মত প্রক্রিয়া।

সংসদ ভেঙে দেওয়া হলে এর মাধ্যমে তৃতীয় কোনো পক্ষের জন্য ক্ষমতায় আসার ফাঁকফোকর খুলে যেতে পারেও বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা। আজকের আলোচনার মধ্য দিয়েই সংলাপ শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন কাদের।

সেই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে একজন প্রধান উপদেষ্টা ও ১০ সদস্যের উপদেষ্টাবিশিষ্ট নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব সরকার নাকচ করেছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী এধরনের সরকার গঠনের সুযোগ নেই।

কাদের বলেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে তারা এসেছেন, আলোচনা হয়েছে। তারা মনখুলে আলোচনা করেছেন। আমরাও আলোচনা করেছি। তবে আজকে তারা যে দাবিগুলো নিয়ে এসেছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তারা কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তা চান, কিছু বিষয়ে ঐকমত্য চান। সরকার চায় ২৮ জানুয়ারি থেকে, যেদিন থেকে সংসদ বসেছে তার ৫ বছর পূর্তির দিনটির আগের ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু তারা (ঐক্যফ্রন্ট) চাইছেন যে সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য।

‘এছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, বিদেশি পর্যবেক্ষক, রাজবন্দীদের মুক্তি, এইসব বিষয়ে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এসব দাবি মেনে নিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনই এগুলো করবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর ব্যাপারেও আমরা সম্মত।’

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আজ সকাল ১১ টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসেন। সংলাপ শেষে দুপুর সোয়া ২টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, মন্ত্রীরা নিজের এলাকায় জাতীয় পতাকা ব্যবহার করবেন না। সরকারি সুবিধা নেবেন না। সাংসদদেরও কোনো ক্ষমতা থাকবে না। ঐক্যফ্রন্ট বা অন্য দলের প্রার্থীরা যে সুযোগ-সুবিধা পাবে, আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের মনোনীত প্রার্থীরাও একই সুবিধা পাবে। এর অতিরিক্ত কিছু হবে না। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি দেখবে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে তারা যা বলেছেন, এটি আমাদের দেশে হয় না। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের নিয়ম চালু নেই। তবে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে টাস্কফোর্স হিসেবে। স্থানীয় প্রশাসন যেখানে চাইবে সেখানেই স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে।

তার দাবি ঐক্যফ্রন্ট যে ৭ দফা দাবি আজকে দিয়েছেন, সেগুলোর বেশিরভাগই মেনে নিতে সম্মত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা এমন কিছু বিষয় নিয়ে এসেছেন, নির্বাচনকে পরবর্তী ৯০ দিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এটার মধ্যে হয়তো নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া একটা বাহানা আছে। এখান দিয়ে তৃতীয় কোনো অপশক্তি এসে, ১/১১ এর মতো আমাদের ইতিহাসে অনভিপ্রেত অস্বাভাবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। আমরা সেটাই মনে করছি।

তারপরও আমাদের নেত্রী তার সুনির্দিষ্ট বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে তাদেরকে অনুরোধ করেছেন যে, আপনার আসছেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়ে দিব, আমি যা বলেছি সেটাই সত্য। আমি আমার দেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক অভিসন্ধি নিয়ে কাজ করি না। জনগণ যদি আমাকে ভোট দেয়, আমরা থাকব। আপনারা জিতলে আপনারা থাকবেন। নির্বাচনে কোনো প্রকার কারচুপি জালিয়াতি হবে না। একটি ভালো নির্বাচন হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষক যেকোনো বুথে যেতে পারে। যেকোনো নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে পারে। তারা যেভাবে চান, নির্বাচন কমিশন অনুমোদন করলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, তারা খালেদা জামিন চেয়েছেন। মুক্তি এইভাবে চাননি। আমরা বলেছি, এই মামলাটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের ২০০৭ সালের মামলা। ১১ বছর পার হয়ে গেছে। এই মামলা আগেই নিষ্পত্তি করা যেত। কিন্তু তারা এইভাবে আগ্রহী ছিলেন না বা তারা সিরিয়াস ছিলেন না। আদালত তাকে দণ্ড দিয়েছে, তারা আদালতের কাছে জামিন চাইতে পারেন। আদালত তাকে জামিন দিলে আমাদের আপত্তি নেই।

Comments

The Daily Star  | English

First day of tariff talks ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

14m ago