এক দিনে ৩৭২ জন গ্রেপ্তার

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের আগে-পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল বিকেলে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

ছেলেকে এক পলক দেখতে সকাল থেকেই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অপেক্ষায় ছিলেন সুফিয়া বেগম। সঙ্গে করে তিনি মেয়েকেও এনেছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আবু সুফিয়ানকে আদালতের প্রিজন সেলে নেওয়ার সময় জড়িয়ে ধরেন তিনি।

ছেলেকে ধরে পঞ্চাশোর্ধ সুফিয়া বেগম চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। সে নির্দোষ। তাকে আপনারা ছেড়ে দেন।’

গত মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের আগে ও পরে রাজধানী থেকে মোট ৩৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোথাও খোঁজ না পেয়ে এদের অনেকেরই স্বজন গতকাল বুধবার আদালত চত্বরে গিয়েছিলেন। স্বজনদের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন তারা। কিন্তু তাদের আশা ছিল যে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে নিশ্চয়ই আদালতে নিয়ে যাবে। সুফিয়া বেগমও ছিলেন তাদেরই মধ্যে।

ছেলেকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করার সময় গ্রেপ্তার হওয়া অন্যদের স্বজনরা এসে তাকে বোঝান যে তার ছেলে নির্দোষ হলে তার কোনো ক্ষতি হবে না।

সুফিয়ানের (২০) মা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার ছেলে কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করত। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কারওয়ানবাজার থেকে রামপুরায় বোনের বাসায় যাওয়ার সময় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশ সাতরাস্তা মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

তার দাবি, সুফিয়ান কোনো ধরনের রাজনীতির সাথে যুক্ত না। সে কোনো অপরাধও করেনি যার জন্য পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। তার ছেলেকে ঠিক কী কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটাও জানেন না তিনি।

আদালত সূত্রগুলো জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর ইট নিয়ে হামলা, বেআইনিভাবে সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাঁধা, নৈরাজ্য সৃষ্টিসহ হত্যাচেষ্টা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যেসব গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। কোনো গণমাধ্যমেও এ ধরনের হামলা বা সহিংসতার খবর আসেনি।

সরকারের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপেও এ ধরনের গায়বি মামলার অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী জোটের নেতারা। এর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তাদের এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধের অভিযোগ না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না।

একজন শীর্ষস্থানীয় বিএনপিপন্থী আইনজীবী দাবি করেছেন, মঙ্গলবার ডিএমপির নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলো থেকে পুলিশ প্রায় হাজার খানেক মানুষকে আটক করেছে। গতকাল সাড়ে ৩টার পর তাদের আদালতে আনা হয়। এদের অনেককেই তিন দিনের করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী গতকাল বলেছেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় সারাদেশে তাদের ১,৩০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

Comments

The Daily Star  | English

Dengue cases see sharp rise in early July

Over 1,160 hospitalised in first 3 days, total cases cross 11,000

14h ago