বাংলাদেশের ওয়ানডে-টেস্টে কেন এত পার্থক্য?

কদিন আগে এশিয়া কাপ তো প্রায় জিতেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর, দেশে ফিরে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। বাংলাদেশের ওয়ানডের পারফরম্যান্সকে হাইরেট না করে উপায় কি। যেকোনো কন্ডিশনে যেকোনো দলকেই হারানোর সামর্থ্য রাখে মাশরাফি মর্তুজার দল। কিন্তু টেস্টে ঠিক উলটো অবস্থা। গত দুই বছরে অতি টার্নিং পিচ বানিয়ে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে কাবু করা গিয়েছিল বটে। কিন্তু আর আগে পরের কথা ভাবুন। টেস্টে তো দাঁড়াতেই পারছে না বাংলাদেশ। পোক্ত ব্যাটিং নেই, ধারালো বোলিং নেই। এবার জিম্বাবুয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সাদা পোশাকে বাংলাদেশের অবস্থা আসলে কতটা হতশ্রী। দুই সংস্করণে কেন এই বিস্তর ফারাক। কিছুটা তলিয়ে দেখা যাক।
Mahmudullah
আউট হয়ে হতাশা ঝাড়ছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

কদিন আগে এশিয়া কাপ তো প্রায় জিতেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর, দেশে ফিরে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। বাংলাদেশের ওয়ানডের পারফরম্যান্সকে হাইরেট না করে উপায় কি। যেকোনো কন্ডিশনে যেকোনো দলকেই হারানোর সামর্থ্য রাখে মাশরাফি মর্তুজার দল। কিন্তু টেস্টে ঠিক উলটো অবস্থা। গত দুই বছরে অতি টার্নিং পিচ বানিয়ে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে কাবু করা গিয়েছিল বটে। কিন্তু আর আগে পরের কথা ভাবুন। টেস্টে তো দাঁড়াতেই পারছে না বাংলাদেশ। পোক্ত ব্যাটিং নেই, ধারালো বোলিং নেই। এবার জিম্বাবুয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সাদা পোশাকে বাংলাদেশের অবস্থা আসলে কতটা হতশ্রী। দুই সংস্করণে কেন এই বিস্তর ফারাক। কিছুটা তলিয়ে দেখা যাক।

ক্রিকেটারদের প্যাশনের অভাব

শুরুটা করা যাক পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে দিয়ে। যার এখনো টেস্টে অভিষেক হয়নি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে এবার ভালোই করেছেন। একদিন সব সংস্করণেই খেলার আশা তার। সিলেট টেস্ট শেষ হওয়ার পরদিন যখন টেস্ট বিপর্যয় নিয়ে চারপাশে আলোচনা তখন তিনিও মিরপুরে অনুশীলনে টেস্ট খেলার গড়পড়তা স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু টেস্ট খেলার সত্যিকারের প্যাশন থাকলে সেদিন তার কি মিরপুরে থাকার কথা ছিল? জাতীয় লিগের শেষ রাউন্ড চলছে, তিনি তাতে খেলেননি। ওয়ানডে সিরিজ শেষ হওয়ার পর অনায়াসে খেলতে পারতেন আগের রাউন্ডও। খেলেননি। সিলেট টেস্টের দুদিন আগে এক নির্বাচক তার নাম নিয়েই আফসোস করছিলেন,  ‘দেখুন, এখনি ফার্স্ট ক্লাস খেলছে না। খেলাটা এনজয় না করলে কি করে হবে? জাতীয় লিগেই তো লম্বা সময় ব্যাটিং-বোলিং করতে পারত। ভুলত্রুটি কাটাতে পারত।’

সাইফুদ্দিনরা জাতীয় দলের বাইরে থাকলে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলেন মনদিয়ে। কিন্তু কোনভাবে জাতীয় দলে  একটা জায়গা হয়ে গেলে, একটু তারকা তকমা জুটে গেলে আর জাতীয় লিগ খেলতে চান না। ব্যতিক্রম আছেন কেউ কেউ। কিন্তু সামগ্রিক মানসিকতার ছবি কিন্তু এমনই।

শুধু ঘরোয়া দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট কেন। টেস্ট খেলার প্রতি কতজনের সত্যিকারের প্যাশন কাজ করে, এই প্রশ্নও তো তোলা যায়।  অন রেকর্ড যেকোনো ক্রিকেটারকে জিজ্ঞেস করুন, ‘টেস্ট ফরম্যাট কেমন চোখে দেখেন?’ নিশ্চিতভাবেই সবাই বলবেন , ‘প্রত্যেক ক্রিকেটারের স্বপ্ন টেস্ট খেলা, আমারও তাই হেন তেন...’ এইগুলো আসলে কতটা মনের কথা, কতটা শিখে পড়ে নেওয়া বুলি। কে বলতে পারে!

গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে রুবেল হোসেন টেস্ট খেলতে চান না বলে খবর চাউর হয়েছিল। টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও নাকি এই নিয়ে তার বাকবিতণ্ডাও হয়েছে। রুবেল এই ‘উড়ো খবর’  কে ভুল বলেননি কোথাও। রুবেলের টেস্টে যা পারফরম্যান্স বিশ্বের আর কোন টেস্ট দল হলে তিনি খেলতে চান কি চান না, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাত না। কিন্তু বাংলাদেশে টেস্ট খেলার মতো যথেষ্ট পেসারই যে নেই। বেহাল দশার পরও তাই টেনেটুনে একে, ওকে তাকে দিয়ে টেস্ট খেলিয়ে নিতে হচ্ছে।

নেতিবাচক মানসিকতা

জিম্বাবুয়ের কাছে সিলেট টেস্ট অবশ্যই বাংলাদেশ পেসারদের দোষে হারেনি। খেলানোই তো হয়েছেন এক পেসার। যেকোনো ধরণের পিচেই হোক একটা দল টেস্ট খেলতে নামছে মাত্র এক পেসার নিয়ে। এরপরই তো তাদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।

টেস্ট শুরুর আগে প্রধান কোচ স্টিভ রোডস পেসারদের নিয়ে সংস্কৃতি বদলের কথা চড়িয়েছিলেন। স্কোয়াডে রেখেছিলেন চার পেসার। ধারণা ছিল তারমধ্যে অন্তত দুজন তো খেলবেনই। অথচ পরে নামলেন এক পেসার নিয়ে। ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষেই এক পেসার কেন খেলানো, এই প্রশ্নটা যে যৌক্তিক মেনে নিয়েছেন কোচ। এমনকি পিচের ভাষা পড়তে ভুল করায় একাদশ যে ভারসাম্যহীন, তাও এক কথায় স্বীকার করে নিয়েছিলেন।  কিন্তু ম্যাচ শেষে অধিনায়কের কন্ঠে শোনা গেল উলটো সুর। একাদশ ঠিক ছিল, তা থেকে নড়লেনই না মাহমুদউল্লাহ।

পরিকল্পনার ঘাটতি 

চোটঘাতে জর্জরিত হয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠার পর মাশরাফি মর্তুজার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, জিম্বাবুয়ে সিরিজে তিনিসহ কি সিনিয়ররা বিশ্রাম নিতে পারেন না? কেন পারেন না সেদিন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মাশরাফি। এশিয়া কাপে থাকতেই ছক কেটে রেখেছিলেন জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে। কাকে খেলাবেন, কীভাবে খেলবেন সেসব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ কিংবা নিউজিল্যান্ড সফরের পরিকল্পনা নিয়েও বেশ আগে থেকেই হোমওয়ার্ক করছেন অধিনায়ক। কিন্তু টেস্ট দলের বেলায় এমন আগেভাগে পরিকল্পনা হয় কি? দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই চোটে পড়ে বাইরে টেস্টের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সাকিব না থাকলে সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অধিনায়ক হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতি সিরিজ শুরুর আগেই এই নিয়ে থাকে দোলাচল। চোটে থাকা অধিনায়ক নাকি দোলাচলে থাকা ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক আঁটবেন পরিকল্পনা? টেস্টে বাজে ফর্মের কারণে মাহমুদউল্লাহর নিজের জায়গাই যে নড়বড়ে।

টেস্টের ব্যাটিং অর্ডার

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আপনি নানা রকম  ব্যাটিং অর্ডার খেলিয়ে পার পেয়ে যেতে পারেন। মাঝেমাঝে পরিস্থিতিও দাবি করে ব্যাটিং অর্ডারে উলটপালট। কিন্তু টেস্টে ধারাবাহিক সাফল্যের জন্য দরকার পোক্ত ব্যাটিং অর্ডার। বাংলাদেশের সেটা আছে কি? ওপেনিং নিয়ে নড়াচড়া, মিডল অর্ডার নিয়ে নাড়াচড়ে চলে প্রতি সিরিজেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের আগে পাঁচ-ছয়ে ভালো করা লিটন দাস ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে নামলেন ওপেনিংয়ে। কিপিং গ্লাভস সরিয়ে মুশফিকুর রহিমকে নির্ভার রাখা হয়েছিল চারে ব্যাট করার জন্য। ছয় টেস্ট পর আবার সেই ভাবনায় বদল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুশফিককে দেখা গেল আবার কিপিং আর ছয়ে ব্যাট করতে।

মাহমুদউল্লাহ জানান, এই পজিশনটাই মুশফিকের জন্য স্বচ্ছন্দের। দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান যদি ছয়ে ব্যাট করতে চান তাহলে মিডল অর্ডার নড়বড়ে হওয়ায় স্বাভাবিক। সিলেট টেস্টের চার নম্বরে দুই ইনিংসে নেমেছেন দুজন। ঢাকা টেস্টে সেই জায়গায় আবার অদল বদল হতে পারে। এভাবে আসলে একটা টেস্ট দলের ভিত শক্ত হওয়ার উপায় কি?

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago