মনোনয়নে আরপিও, দলের গঠনতন্ত্র মানছে না আ. লীগ

ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয় এলাকায় গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো মনোনয়ন ফরম কনতে যাওয়া নেতা ও তাদের সমর্থকরা রাস্তা আটকে ভিড় করেন। ছবি: আনিসুর রহমান

আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনী আইন ও তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, দলটি এবার তাদের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রাথমিক তালিকা তৈরিতে তৃণমূল পর্যায়ের মতামত নেয়নি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ৯০খ (৪) ধারা সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংসদীয় নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলকে ক্ষমতা প্রদান করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্যও এই বিধান প্রযোজ্য।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ওই ধারা অনুযায়ী, তৃণমূল প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে দলের কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ডে পাঠাবে এবং এই তালিকা বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে হবে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিধানটি যুক্ত করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করতে ও দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চাকে শক্তিশালী করার জন্য এই নিয়ম চালু করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এতে সংশোধনী এনে রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচনার ভিত্তিতে তালিকা থেকে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টি যুক্ত করা হয়।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে তার গঠনতন্ত্রে একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করে। দলটির গঠনতন্ত্রের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ডে পাঠাতে তৃণমূলকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং এই তালিকা থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে হবে।

এমনকি, দলীয় গঠনতন্ত্রে এই বিধান রাখা নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন প্রাপ্তির মানদণ্ডের একটি। এই বিধান লঙ্ঘনের কারণে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যেতে পারে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ এই নিয়ম অনুসরণ করে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নামের তালিকা পাঠাতে বলেছিল তৃণমূলকে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন।

রাজশাহী, দিনাজপুর, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের তৃণমূল সারির বেশ কয়েকজন নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করে দলের কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ডে পাঠাতে এবার দলের পক্ষ থেকে তাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

পাবনা-৫ এর সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খন্দকার বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা তৈরি করে পাঠাতে দল থেকে নির্দেশনা এসেছিল। ফলে সে সময় আমরা একটি তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠিয়েছিলাম।’

চাটমোহর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, ঈশ্বরদী উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মোখলেসুর রহমান, সাথিয়া উপজেলার সভাপতি আল মাহমুদ দেলোয়ার প্রমুখও নিশ্চিত করেছেন যে, এবার তারা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা তৈরি করে পাঠানোর কোনো নির্দেশনা পাননি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ মানার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু বলেন, ‘দলের মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃনমূল নেতা-কর্মীদের যাবতীয় বিষয়ে তিনি ধারণা রাখেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, অন্তর্দলীয় কোন্দল বাড়তে পারে এই আশঙ্কা থেকেই তৃণমূল পর্যায় থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়নি।

এ ব্যাপারে প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো আরপিও’র নিয়ম নীতিগুলো মানছে কিনা সেটা নির্বাচন কমিশনের দেখার কথা।

তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্বের কথাই বলেছেন। এ ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে গতকাল তিনি বলেন, মনোনয়নের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন হস্তক্ষেপ করলে রাজনৈতিক দলগুলো অন্যভাবে দেখাবে যে তারা তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছেন।

এছাড়াও কোনো রাজনৈতিক দল আরপিও অমান্য করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের নেই বলে তিনি দাবি করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus sets December deadline for polls preparations

Says presiding or polling officers in past three elections should not be reappointed to the same roles where possible

6m ago