মিরপুরে মুশফিকময় দিন

Mushfiqur Rahim
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ব্যাটিংয়ের দুঃসময়টা বুঝি এভাবেই সরিয়ে ফেলতে হয়। আট ইনিংস থেকে দু’শো পেরুতে না পারা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা খুঁজছিলেন মোক্ষম জবাব।  রানের পাহাড়ে চড়ে আপাতত অস্বস্তির প্রশ্ন দূরে সরিয়ে দেওয়া গেছে সেরকম জবাবই। অবশ্য আগের দিনই ইঙ্গিত ছিল বড় রানের। সেটা আরও প্রকাণ্ড হয়েছে মুশফিকুর রহিমের চওড়া ব্যাটে। দুই দিন শেষে মিরপুর টেস্টে তাই অবস্থান পোক্ত করে ফেলেছে বাংলাদেশ।

সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিনে ৭ উইকেটে ৫২২ রান করে বাংলাদেশের ইনিংস ছেড়ে দেয়। জবাবে ১ উইকেটে ২৫ রান তুলে দিন শেষ করেছে জিম্বাবুয়ে।

প্রথম দিনে অর্ধেকের বেশি আলো কেড়ে নিয়েছিলেন মুমিনুল হক। সেঞ্চুরি করেও মুশফিক পড়ে গিয়েছিলেন আড়ালে। এদিন মুশফিকের আলোতেই বাকি সব ম্লান। ম্যারাথন ইনিংসে গেঁথেছেন রেকর্ডের মালা।

নেমেছিলেন প্রথম দিন লাঞ্চের আগে। ইনিংস ঘোষণার যখন ফিরেছেন তখন চলছে দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনের খেলা। অর্থাৎ দুই দিনের ছয় সেশনেই কোন না কোন সময় ব্যাটিংয়ে ছিলেন মুশফিক। সামলেছেন কঠিন সময়, পেরিয়েছেন লম্বা পথ। তাকে আউটই করতে পারেনি জিম্বাবুয়ের বোলাররা। মুশফিকও দেননি কোন সুযোগ। ৫৮৯ মিনিট ক্রিজে থেকে ৪২১ বল খেলে অপরাজিত ছিলেন ২১৯ রানে। ক্যারিয়ার সেরা তো বটেই, টেস্টে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের মালিকও হয়েছেন তিনি। প্রথম উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দুটি ডাবল সেঞ্চুরির অনন্য রেকর্ডও গড়া হয়ে গেছে। এত লম্বা সময় ব্যাটিং করার পর কিপিং গ্লাভস হাতে নেমে বুঝিয়ে দিয়েছেন এই পজিশনের প্রতি তার ভালোবাসা। উইকেটকিপিং ছাড়তে চান না। এবার ডাবল সেঞ্চুরি করেই নেমে যেন নিজের ইচ্ছাকেই আরও প্রবল করে দেখালেন সবাইকে।

সকালে মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে নামার পর বেশ আড়ষ্ট হয়ে পড়েন মুশফিক। উইকেটের আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে দারুণ বল করছিলেন কাইল জার্ভিসরা। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ আঁচ করলেন বিপদ। খোলসবন্দি হয়েই কাটিয়ে দিলেন প্রথম ঘণ্টা। তাতে এলো মাত্র ২২ রান, মুশফিকই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন বেশি। প্রথম ঘণ্টায় তিনি নিয়েছেন কেবল চার রান। সময় গড়াতেই অবশ্যই খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন। মুশফিক তো অবিচল ছিলেনই, মাহমুদউল্লাহর ব্যাটেও ছিলো সুদিন ফেরার আভাস। লাঞ্চের পর পরই অবশ্য দৃষ্টিকটু খোঁচায় সেই আভাস মাটিচাপা দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ নিজেই।

আগের টেস্টে আলো ছড়ানো আরিফুল হকের দ্রুত বিদায়ে খানিকক্ষণ এলোমেলোও হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। তখন সেই মুশফিকই আবার দিয়েছেন স্থিতি। ৩১ রানে জীবন পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ পরে সেঁটে গিয়েছিলেন মুশফিকের সঙ্গে।  অষ্টম উইকেটে  অবিচ্ছিন্ন ১৪৪ রানের জুটিতেই আর রাখেননি কোন সুযোগ।

বাংলাদেশ চারশো, সাড়ে চারশো পেরিয়ে একসময় পেরিয়েছে পাঁচশোর গণ্ডি। প্রায় ছয় বছর পর বাংলাদেশের এতবড় রান শেরে বাংলার মাঠে।

জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিং দিয়ে শেষ বেলায় আগুন ঝরিয়েছেন অভিষিক্ত খালেদ আহমেদ। দারুণ সব বাউন্সারে কাবু করেছেন সফরকারীদের। পেতে পারতেন উইকেটও। তার বলে তৃতীয় স্লিপের দিকে গিয়েছিল হ্যামিল্টন মাসাকাদজার সহজ ক্যাচ। সেখানে দাঁড়ানো মোহাম্মদ মিঠুন প্রস্তুতও ছিলেন। কিন্তু কি বুঝে দ্বিতীয় স্লিপ থেকে লাফ দেন আরিফুল হক, নিজেও ধরতে পারেননি, মিঠুনকেও ধরতে দেননি। পরে সেই মাসাকাদজার উইকেট অবশ্য নিয়েছেন তাইজুল।

দ্বিতীয় দিনের পর এখন ব্যাটিংয়ের যথেষ্ট ভাল মিরপুরের উইকেট। তবে হুট করে মিলছে আচমকা বাউন্স। স্পিনাররা টার্ন পেতে শুরু করেছেন। তৃতীয় দিনে তাই ফলোঅন এড়াতেই বেশ সংগ্রাম অপেক্ষা করছে জিম্বাবুয়ের জন্য।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: (দ্বিতীয় দিন শেষে)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫২২/৬ (ডিঃ) (১৬০ ওভার) (লিটন ৯, ইমরুল ০, মুমিনুল ১৬১, মিঠুন ০, মুশফিক ২১৯*, তাইজুল ৪, মাহমুদউল্লাহ ৩৬, আরিফুল ৪, মিরাজ ৬৮*; জার্ভিস ৫/৭১, চাতারা ১/৩৪, টিরিপানো ১/৬৫, রাজা ০/১১১, উইলিয়ামস ০/৮০, মাভুটা ০/১৩৭, মাসাকাদজা ০/৭)।

জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস:  ২৫/১ (১৮ ওভার) (মাসাকাদজা ১৪, চারি ১০*, টিরিপানো ০*; মোস্তাফিজ ০/১১,  খালেদ ০/৬, তাইজুল ১/৫, মিরাজ ০/২)।

Comments

The Daily Star  | English

Iranian parliament approves bill to suspend cooperation with UN nuclear watchdog

Parliament Speaker Mohammad Baqer Qalibaf was quoted by state media as also saying Iran would accelerate its civilian nuclear programme.

7m ago