‘নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ’
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/sultana-kamal-and-syed-abul-maksud-1_0.jpg?itok=pPXtnQq6×tamp=1542100529)
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে রাজনৈতিক দলগুলোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রেই তা লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাস্তা অবরোধ, গাড়িবহর ও মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, মাইকিং করে প্রচার-প্রচারণা চালানোসহ নির্বাচন কেন্দ্রীক সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কী করছে, আর তাদের কাছে প্রত্যাশা কী, এসব বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে আজ (১৩ নভেম্বর) কথা বলেছেন বাংলাদেশের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আবুল মকসুদ ও সুলতানা কামাল।
বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন গোটা পরিস্থিতিটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেই বলেই মনে হচ্ছে। আরও আগে থেকেই তাদের শক্ত হওয়া উচিত ছিল। এ ব্যাপারে এখনও যদি তারা কঠোর না হয়, তাহলে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ আর থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘সব জায়গাতেই নির্বাচনী আচরণবিধি স্পষ্ট লঙ্ঘন করা হচ্ছে, কালকেও নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে বিষয়টি তাদের আমি জানিয়েছি। অন্যথায় তাদের প্রতি যে বিরোধী দলের আস্থা থাকবে না, তাও বলেছি। এমনিতেই নির্বাচন কমিশনের উপর বিরোধী দলগুলোর আস্থা নেই।’
‘নির্বাচনকালীন সরকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার একরকম চালাবে, নির্বাচন কমিশন আর একরকম চলবে, তা তো হয় না। এই দুইয়ের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া থাকা প্রয়োজন। বলা হচ্ছে- নির্বাচন কমিশনের কথামতো নির্বাচনকালীন সরকার কাজ করবে। কিন্তু তা আর হলো কই। চারজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীকে পদত্যাগের কথা বলা হলো, তারা পদত্যাগ করলেন, কিন্তু কার্যত এখনও তারা রয়ে গেছেন। নির্বাচন কমিশনের শিডিউল মতো নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন কমিশন উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে না পারে, তাহলে এটি তাদের বড় এক ব্যর্থতা,’ ভাষ্য আবুল মকসুদের।
এই কলামিস্ট বলেন, ‘এর আগের এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন অনেক এগিয়ে ছিল দেখছি। তারা যেকোনো সময় যেকোনো ডিসি, এসপিকে বদলি করার সাহস দেখিয়েছেন। কিন্তু এবারের নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন দৃষ্টিগ্রাহ্য পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু তাদের কাজ তো হচ্ছে-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক অব্যাহত রাখা। এছাড়া, গোয়েন্দা বাহিনীর কাছ থেকে প্রত্যেক এলাকার ডিসি, এসপির মনোভাব ও মতাদর্শ এবং তাদের কাজ-কর্মের সর্বোপরি খোঁজ-খবর নেওয়া এবং প্রয়োজন সাপেক্ষে বদলি করা। কিন্তু এটাও দেখা যাচ্ছে না। ঢাকায় বসে থেকে নির্বাচন কমিশন তো আর সারাদেশের পরিস্থিতির ধারণা পেতে পারে না। সুতরাং তাদের আরও তৎপর হওয়া উচিত।’
মকসুদের মতে, ‘নির্বাচন কমিশন বর্তমানে কেবল রুটিনমাফিক কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এর বাইরেও তাদের বোঝাতে হবে যে, তারা অত্যন্ত শক্ত হাতে নির্বাচন পরিচালনা করতে চাইছেন। সরকারের উপর যে তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন এবং সেই ক্ষমতা ও অধিকার তাদের রয়েছে, সেটি যদি জনগণকে বোঝাতে না পারেন, তাহলে তো বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং দেশের মানুষের কাছে তারা আস্থা অর্জন করতে পারবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকল্পে নির্বাচন কমিশনের কঠোর না হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে অনেক জায়গাতেই আলোচনা হচ্ছে। আমরা শুনে এসেছি যে, তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচন কমিশন একটি দায়িত্বশীল অবস্থায় চলে যাবে, মোটামুটিভাবে রেফারির ভূমিকা পালন করবে। নির্বাচনী আচরণবিধি যেই লঙ্ঘন করবে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে তাকে তা জানানো। শাস্তি না দিক, অন্তত সতর্ক করবে। কিন্তু আমরা দেখলাম যে, এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কিছুই বলছে না। এটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন তো বটেই।’
‘যেখানে খুব সহজ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সেখানেও যদি কোনোরকম ভূমিকা পালন না করে,তাহলে আরও বড় কোনো আরচণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে কি না, আমাদের সন্দেহ আছে,’ মন্তব্য করেন তিনি।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুই তরুণ নিহতের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে দোষীদের বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারায় মামলা হলেও আসামিকে ২৪ ঘণ্টাও কারাগারে রাখা যায়নি। সেখানে নির্বাচন কমিশন তো কোনো ভূমিকাই নিল না। যদিও নির্বাচন কমিশন সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নেবে না। কিন্তু তারা তো পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। পুলিশকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু এ কাজটাও তারা করেনি।’
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় চলে যাচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের বর্তমান ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে কি না, এ ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সন্দেহ রয়েছে।’
Comments