শহিদুল আলমের জামিন, কারামুক্তিতে বাধা নেই

শহিদুল আলম। ছবি সৌজন্য: রেহনুমা আহমেদ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে জামিন দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি শেখ আব্দুল আউয়াল ও বিচারপতি বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ (১৫ নভেম্বর) শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেছেন।

শহিদুলের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় তার কারামুক্তিতে বাধা নেই। তবে, রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।

শহিদুল আলমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘গত ১০২ দিন ধরে কারাগারে ৬৩ বছর বয়সী আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। আজ তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ধানমন্ডি এলাকায় ছবি তোলার সময় শহিদুলের ওপর হামলা চালিয়ে ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এ বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন তিনি৷ অভিযোগ করে বলেছিলেন, সিটি কলেজের পাশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তার ওপর হামলা চালায়।

ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন শহিদুল৷ সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ৫ আগস্ট রাতে তাকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ৷ পরদিন বিতর্কিত তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হলে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।

সেদিন আদালত প্রাঙ্গণে শহিদুল দাবি করেন, পুলিশ হেফাজতে তাকে মারধর করা হয়েছে৷ উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাকে আঘাত করা হয়েছে। আমার রক্তাক্ত পাঞ্জাবী ধুয়ে আবার পরানো হয়েছে।’

এর পর, শহিদুল আলমের মুক্তি চেয়ে নোয়াম চমস্কি, রঘু রায়, অরুন্ধতী রায়ের মতো খ্যাতিমান একাধিক লেখক-আলোকচিত্রী-বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দিয়েছেন। পেন ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠনও তার মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছে।

গত ১৯ আগস্ট শহিদুল আলম ও ছাত্র আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে ১১ নোবেল বিজয়ী ও ১৭ বিশিষ্ট ব্যক্তি বিবৃতি দেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে সকল নাগরিকের মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সমাবেশ করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

তাদের মধ্যে ছিলেন আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, শিরিন এবাদি, লেহমাহ বয়ই ও মোহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া বিশিষ্ট অপর ১৭ ব্যক্তিত্বের মধ্যে নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্রো হারলেম ব্রান্টল্যান্ড, বিশিষ্ট উদ্যোক্তা ও বিলিয়নিয়ার স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, মার্কিন লেখিকা ও মানবাধিকার কর্মী কেরি কেনেডি, ভারতের অভিনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শাবানা আজমি, হলিউড অভিনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শ্যারন স্টোন, হাফিংটন পোস্টের প্রতিষ্ঠাতা আরিয়ানা হাফিংটন ও চলচ্চিত্র পরিচালক রিচার্ড কার্টিস বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।

শহিদুল আলমের সমর্থনে ক্যাম্পেইন চালানো একদল ভারতীয় ফটোগ্রাফারকে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘ফটোসাংবাদিকতাসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শহিদুল আলম অনেক বছর ধরে অসাধারণ দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে যে কাজ করে চলেছেন তা প্রশংসা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। নিষ্ঠুর আচরণের বদলে তার কাজের প্রশংসা করা উচিত।’

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের গ্রেফতারের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের এমন কঠোর নীতির সমালোচনা করেছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

CSA getting scrapped

The interim government yesterday decided in principle to repeal the Cyber Security Act which has been used to curb press freedom and suppress political dissent.

6h ago