‘উল্টো স্রোত আসবেই, আসতেই হবে’

গত ১৫ নভেম্বর পেন ইন্টারন্যাশনালের ‘ডে অব দ্য ইমপ্রিজন্ড রাইটার’ উপলক্ষে বুকার-বিজয়ী ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায় একটি খোলা চিঠি লিখেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের উদ্দেশে। কারাগারে শহিদুলের ১০০ দিন পূর্তি হয় গত ১৩ নভেম্বর। এর দুদিন পর তাকে জামিন দেয় উচ্চ আদালত।
Arundhati Roy
ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায়। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

গত ১৫ নভেম্বর পেন ইন্টারন্যাশনালের ‘ডে অব দ্য ইমপ্রিজন্ড রাইটার’ উপলক্ষে বুকার-বিজয়ী ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায় একটি খোলা চিঠি লিখেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের উদ্দেশে। কারাগারে শহিদুলের ১০০ দিন পূর্তি হয় গত ১৩ নভেম্বর। এর দুদিন পর তাকে জামিন দেয় উচ্চ আদালত।

কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ঠিকানা উল্লেখ করে অরুন্ধতী চিঠিতে বলেন, “এখন সময় যেমন আপনার দেশেও ভালো নয়, তেমনি ভালো নয় আমার দেশেও। তাই যখন খবর পেলাম অজ্ঞাত ব্যক্তিরা আপনাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে তখন মনের ভেতর চরম খারাপ কোনো ঘটনার ছবি ভেসে উঠেছিলো। মনে হচ্ছিল- আপনি আবার ‘বন্দুকযুদ্ধের’ শিকার হলেন না তো? আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ব্যক্তিরা যখন কোনো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটায় তখন এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে। আপনার দেহ কোনো গলিতে পাওয়া যাবে না তো? অথবা, তা ভাসতে দেখা যাবে না তো ঢাকার আশেপাশে কোনো মজা-পুকুরে? তবে যখন আপনার গ্রেপ্তার হওয়ার খবর এলো এবং থানায় আপনাকে দেখা গেলো তখন আমরা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছিলাম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।”

অরুন্ধতীর মতে, শহিদুলের গ্রেপ্তার হচ্ছে অন্য নাগরিকদের জন্যে একটি হুশিয়ারি বার্তা। তাদেরকে বোঝানো যে, “যদি আমরা শহিদুলের প্রতি এমন আচরণ করতে পারি, তাহলে বুঝে নিও তোমাদের সবার প্রতিই আমরা তা করতে পারবো।” শহিদুলের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে অন্যদের শিক্ষা নেওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে বলেও মনে করেন এই লেখক।

আলোকচিত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর কথাও উল্লেখ করেন অরুন্ধতী। সমালোচনা করেন বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি আইনের। এটিকে একটি ‘কালাকানুন’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে শুধু যে বুদ্ধিজীবীদের আক্রমণ করা হয়েছে তা নয়, আক্রমণ করা হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকেও।”

এ প্রসঙ্গে অরুন্ধতী ভারতের ‘বেআইনি কার্যক্রম প্রতিরোধ আইন’-এর কথাও বলেন। তুলে ধরেন এই আইনের মাধ্যমে কিভাবে সেই দেশটিতে ছাত্র, শিক্ষক, অধিকারকর্মী, আইনজীবী ও শিক্ষাবিদদের দলে দলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তার মতে, “যদিও পুলিশ জানে উচ্চ আদালত থেকে এই ব্যক্তিরা ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন, তথাপি যদি বছরের পর বছর কারাগারে রেখে তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া যায়। এটি হচ্ছে তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া।”

দুটি দেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও ধরপাকড়, গুম-হত্যা, জাতিগত-ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের আশঙ্কাও করেছেন অরুন্ধতী। “আমাদের কাছে নির্বাচনের অর্থ হচ্ছে খড়ের গাদায় আগুন দেওয়ার মতো,” যোগ করেন ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’-এর লেখক।

এরপরও সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শুনিয়েছেন আশার বাণী। বলেছেন, “উল্টো স্রোত আসবেই। আসতেই হবে। এসব বোকা, অদূরদর্শী নির্মমতাই দেখিয়ে দিবে মসৃণ, দূরদর্শিতার পথ।”

শহিদুলের সঙ্গে শিগগির ঢাকায় দেখা হওয়ার আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন এই স্বনামধন্য লেখক।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago