‘আমি নিজেই ইভিএম বিষয়ে এখনো পরিষ্কার নই’
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/ec_rafiqul_2.jpg?itok=si-JvQYn×tamp=1542704874)
মাঠ পর্যায়ে যারা ভোট গ্রহণের কাজ করবেন তাদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। নির্বাচন কমিশন বলছে পুলিশকে এমন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সে সঙ্গে রয়েছে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে অস্পষ্টতা-বিতর্ক। এসব বিষয় নিয়েই আজ দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
পুলিশ কেন সম্ভাব্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই-বাছাই করছে? এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেছি। পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে তারা এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ করিনি। বাংলাদেশে যারা যারা নির্বাচনী কর্মকর্তা হতে পারেন, এইরকম একটি তালিকা আমরা তৈরি করে রেখেছি। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হবে। এদের মধ্য থেকে কয়জন এবং কীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, তার একটি নীতিমালার আছে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিয়োগপ্রাপ্তির আগে কেউ এখনও নির্বাচনী কর্মকর্তা হয়ে যাননি।’
‘আর যদি বলা হয়, আমরা যাচাই-বাছাই করে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ করতে যাচ্ছি, তথ্যটি ঠিক নয়। যে তালিকাটি করা হয়েছে, নীতিমালা অনুযায়ী সেখান থেকে যাদের যাদের উপযুক্ত মনে হবে তাদেরকেই নিয়োগ দেবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার পর, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগপ্রাপ্তদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে যান, এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা অবশ্যই সেইসব অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলব পুলিশ প্রশাসনকে।’
তফসিল ঘোষণার পর থেকে তো পুলিশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে পরিচালিত হওয়ার কথা, এই প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমত, পুলিশ কেবল নির্বাচনী কাজের জন্য নির্বাচন কমিশনের অধীন। সরকারের একটি নির্বাহী অঙ্গ আছে। নির্বাচন কমিশন কিন্তু সরকারের নির্বাহী অঙ্গ নয়। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনী কাজ সম্পাদনের জন্য পুলিশ সম্পূর্ণরূপে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। কিন্তু, যদি এখানে কোনো অপরাধ সংগঠিত হয় এবং সেক্ষেত্রে তদন্তের প্রয়োজন হয়, পুলিশের যে আইন আছে সে অনুযায়ী তারা কাজ করবে।’
‘দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংবাদমাধ্যমে যারা অভিযোগ জানিয়েছেন, তারা হয়তো অন্য কোনো কারণে অভিযোগ করছেন। গতকাল সাতক্ষীরার একটি কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে সকল শিক্ষকের স্বাক্ষরসহ এ ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু, কলেজের অধ্যক্ষ অভিযোগ দেওয়ার কে? যদি এটা পুলিশের কাছ থেকে আসতো, তাহলে আমরা বিবেচনা করতাম। কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে এই অভিযোগ পাওয়ার অর্থ হচ্ছে, তারা কেউই নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে চান না। এক্ষেত্রে তো আমাদের কিছুই করার থাকবে না’ মন্তব্য করেন তিনি।
পুলিশ যদি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখে, তাহলে তো তাদের মধ্যে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেনো নির্বাচনী কর্মকর্তাই নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে উৎসাহী হন না। আমার জীবনেও আমি বহুবার নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু, আমি কোনো সময় উৎসাহী ছিলাম না। কথা হচ্ছে, আমাকে যখন নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া হবে, কোনো অজুহাত ছাড়াই সম্পূর্ণরূপে তা পালন করতে হবে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের একবার হলেও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে হবে, অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইনে ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন।’
বর্তমান যে সরকার রয়েছে, তার প্রতিনিধিরাই আবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, এক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সুবিধাভোগের সুযোগ থাকছে কি না? এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রতিনিধিরা দায়িত্বে আছেন এবং দায়িত্বে থাকবেন। এটাই সাংবিধানিক বিধান। সংবিধানে যেহেতু এখনও আছে যে, সরকার বহাল থাকবে এবং এখান থেকেই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ- নির্বাচন কমিশন শুধু সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই কাজ করতে পারে। এর বাইরে নয়।
নির্বাচন কমিশন বলছে শহরাঞ্চলে অল্প কিছু কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। ‘অল্প কিছু’ বলতে আসলে কেমন সংখ্যা বোঝানো হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে এ বিষয়ে একটি কমিটি রয়েছে। তারাই এর বিস্তারিত বলতে পারবেন। এর বাইরে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। কারণ- আমি নিজেই ইভিএম বিষয়ে এখনো পরিষ্কার নই।’
নির্বাচনকালীন ইভিএম মেশিনগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন কারা? বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী কর্মকর্তারাই ইভিএম মেশিন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। তবে, এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা (নষ্ট হয়ে গেলে ঠিক করা, যান্ত্রিক ত্রুটি সারানো, চালু ও বন্ধ করা) দেবেন সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন প্রত্যয়ী কি না? এ বিষয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে, একটি গ্রহণযোগ্য ও আইনানুগ নির্বাচন সম্পন্ন করা। ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের নেই।’
Comments