বাদশাহ হতে পারছেন না যুবরাজ সালমান?
সৌদি বাদশাহ সালমানের প্রিয়পাত্র, পরম স্নেহের দুলাল যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন দেশটির রাজপরিবারের অনেকেই। যুবরাজ হিসেবে ঘোষণা পাওয়ার পর থেকেই তার প্রতি বিরূপ ছিলেন অনেকেই। কিন্তু, সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়’ হত্যা করার পর সেই বিরূপভাব এখন যেনো চরমে উঠে এসেছে।
ঘনিষ্ঠসূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স আজ (২০ নভেম্বর) জানায়, সৌদি আরবের ক্ষমতাসীন রাজপরিবারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যুবরাজ সালমানকে দেশটির ‘বাদশাহ’ হিসেবে দেখতে চান না।
বার্তা সংস্থাটির এক এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রভাবশালী আল সৌদ পরিবারের কয়েক ডজন রাজকুমার ও তাদের আত্মীয়রা ৮২ বছর বয়সী বর্তমান বাদশাহ সালমানের অবর্তমানে যুবরাজ সালমানকে পরবর্তী শাসক হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি জানিয়েছেন। ফলে, যুবরাজ সালমানের বাদশাহ হওয়ার বাসনা অপূর্ণ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এমনকি, যুবরাজবিরোধী সেই রাজকুমাররা রাজবংশের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সৌদি আরবের পরবর্তী বাদশাহ কে হবেন তা নিয়ে আলোচনাও শুরু করে দিয়েছেন বলে জানায় বার্তা সংস্থাটি। খবরে প্রকাশ, বর্তমান বাদশাহর মৃত্যুর পর ৭৬ বছর বয়সী প্রিন্স আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ-কে রাজক্ষমতায় বসানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। তিনি বাদশাহ সালমানের ছোটভাই এবং যুবরাজ সালমানের চাচা।
সূত্র জানায়, বাদশাহ সালমানের একমাত্র জীবিত ভাই আহমেদের প্রতি রাজপরিবারের সবার সমর্থন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী এবং পশ্চিমের বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সমর্থনও আহমেদের ওপর আসতে পারে বলেও আশা করা হচ্ছে।
প্রায় দুই মাস বিদেশে থাকার পর প্রিন্স আহমেদ গত মাসে রিয়াদে ফিরেন। বিদেশে থাকার সময় তিনি সৌদি আরবের ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করেছিলেন। ২০১৭ সালে সালমানকে যুবরাজ করার সিদ্ধান্তের বিরোধীতাকারী তিনজন বয়োজ্যেষ্ঠে ব্যক্তির একজন এই প্রিন্স আহমেদ।
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে আহমেদের পরিবারের কারোর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, রিয়াদের শীর্ষ কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে রয়টার্সের সামনে মুখ খুলেননি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রচলিত রাজতন্ত্রের মতো সৌদি আরবে বাবার বড় ছেলেকে রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসানো হয় না। সেখানে রয়েছে ‘হাউজ অব সৌদ’। কয়েকশ রাজকুমারকে নিয়ে গঠিত এই ‘হাউজ’-এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কে হবেন দেশটির পরবর্তী শাসক। গোত্র-ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার কারণে রাজা নির্ধারণে গোত্র প্রধানদেরও থাকে বিশেষ ভূমিকা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন আকার-ইঙ্গিতে সৌদি কর্তাব্যক্তিদের বুঝিয়ে দিয়েছেন যে প্রিন্স আহমেদের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। আহমেদ দীর্ঘ ৪০ বছর সৌদি আরবের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে সৌদি সূত্রগুলো অনেকটাই নিশ্চিত করেছে যে প্রিন্স আহমেদ ক্ষমতায় এলে তিনি যুবরাজ সালমানের নেওয়া সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে নতুন নতুন অস্ত্রচুক্তি হয়েছে সেগুলোও থাকবে বহাল তবিয়তে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, হোয়াইট হাউজ এখনই যুবরাজের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করবে না। যদিও দেশটির অনেক আইনপ্রণেতা এবং গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র ধারণা যুবরাজের নির্দেশেই সাংবাদিক খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে খাশোগি হত্যার গোয়েন্দা প্রতিবেদন চলে এলে গণেশ উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এদিকে, গত ১৭ নভেম্বর ট্রাম্প বলেন, যুবরাজ সালমানের নির্দেশে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে সিআইএ-র ধারণাকে তিনি ‘অপরিপক্ক’ বলে মনে করেন তবে, তা ‘অবাস্তব’ নয়। তাই তিনি একটি ‘পূর্ণাঙ্গ’ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সৌদি সূত্র জানায়, শুধুমাত্র খাশোগি হত্যার কারণেই যে ট্রাম্প প্রশাসন যুবরাজের ওপর নাখোশ তা নয়, বরং রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনার বিষয়ে যুবরাজের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সেই নাখোশভাবকে আরও চাঙ্গা করে দিয়েছে।
এছাড়াও, যুবরাজ সালমান নিজ দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের নামে অন্যান্য রাজকুমারদের যেভাবে অপমান করেছেন তার খেসারত তাকে দিতে হবেই বলে মন্তব্য করেছে দেশটির বিভিন্ন সূত্র। আবার তিনি নিজেই যখন বিলাসিতায় গা ভাসিয়েছেন তখন সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন সমালোচক। তাই যুবরাজের হাতে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীও তার পতন রক্ষায় কোনো ভূমিকা রাখবে না বলে আশা করা হচ্ছে যুবরাজবিরোধীদের পক্ষ থেকে।
তবে যুবরাজ সালমানের পরিবর্তে কে হতে যাচ্ছেন সৌদি আরবের বাদশাহ তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে শেষ ঘোষণা আসা পর্যন্ত।
Comments