আন্দামানের সেন্টিনালি আদিবাসীদের হাতে প্রাণ হারালেন ‘যাজক’

Sentinalese
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নর্থ সেন্টিনাল দ্বীপের সেন্টিনালি আদিবাসী। ছবি: সংগৃহীত

ভারত মহাসাগরে ৫৭২টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এসব দ্বীপের কোনো কোনোটিতে রয়েছে এমন জাতিগোষ্ঠী যারা বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন। তেমনি একটি জাতিগোষ্ঠী হলো সেন্টিনালি আদিবাসী। দ্বীপপুঞ্জের নর্থ সেন্টিনাল দ্বীপে বসবাসকারী এই আদিবাসীরা শুধু সবার থেকে বিচ্ছিন্নই নন তাদের দ্বীপে বাইরের মানুষদের প্রবেশাধিকারও মেনে নেওয়া হয় না।

২০১১ সালের ভারতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেখানকার জনসংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেই পরিসংখ্যানে বলা হয়, দূর থেকে ১৫ জন সেন্টিনালিকে দেখা গিয়েছিলো। কেননা, তাদের কাছাকাছি যাওয়া খুবই বিপদজনক। তারা বহিরাগতদের উপস্থিতিকে একেবারেই অপছন্দ করেন। এদিকে, ২০০১ সালে জনগণনায় এই জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩৯ জন উল্লেখ করা হয়েছিলো।

এমন যখন পরিস্থিতি তখন এই সংরক্ষিত দ্বীপটিতে ঢুকে এক মার্কিন ‘যাজক’ সেন্টিনালিদের হাতে খুন হয়েছেন বলে খবরে প্রকাশ।

যখন পৃথিবীর সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখা এই আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের এলাকায় বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দিতে চান না, তখন এমন পরিস্থিতিতে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে আন্দামানে প্রবেশ করা সেই মার্কিন নাগরিককে প্রাণ হারাতে হলো নর্থ সেন্টিনাল দ্বীপে এসে।

আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পুলিশের মহাপরিচালক দীপেন্দ্র পাঠক সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানান, ২৭ বছর বয়সী জন অ্যালেন চাউ নামের একজন মার্কিন ‘যাজক’ স্থানীয় সেন্টিনালি জনগোষ্ঠীকে ‘ধর্মান্তরিত’ করার আশায় সেখানে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, সাগর থেকে নেমে দ্বীপে পা রাখতেই তিনি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিরোধের মুখে পড়েন। ধারণা করা হচ্ছে তাদের হাতেই এই ‘যাজকের’ মৃত্যু হয়েছে।

পাঠক বলেন, “যদিও অ্যালেন পর্যটন ভিসা নিয়ে এখানে এসেছিলেন তবুও আমরা তাকে পর্যটক বলতে চাই না। তিনি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে এই সংরক্ষিত দ্বীপ এসেছিলেন।”

কিন্তু, অ্যালেন সেই কথা পুলিশের কাছে গোপন রেখেছিলেন বলেও জানানো হয়।

John Allen Chau
মার্কিন ‘যাজক’ জন অ্যালেন চাউ। ছবি: ইনস্ট্রাগ্রাম থেকে নেওয়া

এদিকে, অ্যালেনের ইনস্ট্রাগ্রাম পেজে তার আত্মীয়রা জানান, “কারো কারো কাছে অ্যালেন একজন যাজক, কারো কাছে তিনি একজন ফুটবল কোচ, একজন পর্বতারোহী। তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন। আরও ভালোবাসেন অভাবীদের সহযোগিতা করতে। বিশেষ করে, সেন্টিনালি জনগোষ্ঠীর প্রতি তার ভালোবাসা অনেক।”

যারা অ্যালেনকে হত্যা করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে বলেও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

পুলিশের মহাপরিচালক আরও জানান, মার্কিন যাজক তার স্থানীয় ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুকে বলেন একটি নৌকা জোগাড় করে এবং যেসব জেলে তাকে সেই দ্বীপে নিয়ে যেতে পারে তাদেরকে খুঁজে দিতে। অবশেষে, জেলেদের সঙ্গে একটি নৌকা নিয়ে তিনি সেই অভিযানে যান।

যে সাতজন স্থানীয় ব্যক্তি অ্যালেনকে সহায়তা করেছিলেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ মহাপরিচালক।

“জেলেদের মতে, তারা একটি কাঠের নৌকায় ইঞ্জিন বসিয়ে গত ১৫ নভেম্বর সেই দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেন,” যোগ করেন পাঠক। তিনি আরও জানান, নর্থ সেন্টিনাল দ্বীপ থেকে ৫০০-৭০০ মিটার দূরে অ্যালেন ইঞ্জিন নৌকা থেকে নেমে একটি ছোট নৌকায় চেপে দ্বীপটির দিকে যান। আর দ্বীপ পা রাখতেই ছুটে আসে তীর। তীরের আঘাত নিয়ে সেদিনই তিনি সাঁতার কেটে ফিরে আসেন নৌকায়। ১৬ নভেম্বর আদিবাসীরা সেই ছোট নৌকাটি ভেঙ্গে ফেলেন। এরপর, জেলেরা দূর থেকে দেখেন যে আদিবাসীরা অ্যালেনের দেহ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।

তবে পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি যে সেই মার্কিন নাগরিক মারা গেছেন না কি বেঁচে আছেন। জেলেদের মতে, অ্যালেনকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, অ্যালেন এবং জেলেরা ১৪ নভেম্বর মাঝরাতে দ্বীপটিতে গিয়ে পৌঁছেন। পরদিন, তিনি দ্বীপে নেমে আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তারা এই বহিরাগতকে লক্ষ্য করে তীর ছোড়েন। জেলেরা পুলিশকে বলেছেন যে তারা অ্যালেনকে ১৬ নভেম্বরও জীবিত দেখেছেন। কিন্তু, পরদিন সকালে তারা দেখেন যে আদিবাসীরা অ্যালেনের দেহ টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং পরে তাকে মাটি চাপা দিচ্ছে।

ভারতীয় আইনে নর্থ সেন্টিনাল দ্বীপের অধিবাসী সেন্টিনালিদেরকে সংরক্ষিত জাতিগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দ্বীপটিও একটি সংরক্ষিত এলাকা। দ্বীপের পাঁচ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ। ২০১৬ সালে এই আদিবাসীদের হাতে দুজন জেলে নিহত হয়েছিলেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সেন্টিনেলি জাতিগোষ্ঠী মূলত শিকারের ওপর নির্ভর করে জীবন-যাপন করে। তারা বেঁচে থাকার জন্য মাছ ধরেন এবং বন্য লতাপাতা সংগ্রহ করেন। এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে কৃষিকাজ করা বা আগুন ব্যবহারে প্রমাণ পাওয়া যায় না।

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

5h ago