উলটপালটের দিনে পাল্লা সমানে সমান

মুমিনুল হকের সেঞ্চুরিতে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের এক স্পেলে ১৩ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে সেখান থেকেই উলটো স্রোতে হাঁটা। তবে শেষ বিকেলে টেন এন্ডারদের প্রতিরোধে ওখান থেকেই আবার স্বস্তিতে ফেরা। বারবার রঙ বদলাতে প্রথম দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ কাউকেই পরিষ্কার এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই।
Taijul Islam - Nayeem Hasan
দিনশেষে বেরিয়ে যাচ্ছেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান নাঈম হাসান ও তাইজুল ইসলাম। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মুমিনুল হকের সেঞ্চুরিতে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের এক স্পেলে ১৩ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে সেখান থেকেই উলটো স্রোতে হাঁটা। তবে শেষ বিকেলে টেন এন্ডারদের প্রতিরোধে ওখান থেকেই আবার স্বস্তিতে ফেরা। বারবার রঙ বদলাতে প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশ কাউকেই পরিষ্কার এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে আলোক স্বপ্লতায় দিনের খেলা দুই ওভার আগেই শেষ হওয়ার সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ৩১৫ রান।  ২৪ রান নিয়ে দায়িত্বশীল ব্যাট করা অভিষিক্ত নাঈম হাসানের সঙ্গে ক্রিজে আছেন ৩২ রান করা তাইজুল ইসলাম।  নবম উইকেটে দুজনে মিলে তুলে ফেলেছেন মহামূল্যবান ৫৬ রান। যাকে দিনশেষে মুমিনুলের কাছে মনে হচ্ছে ‘ভাইটাল রান।’

আগের দিনই সাকিব আল হাসান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ম্যাচটা হতে যাচ্ছে লো স্কোরিং। সেরকম হলে প্রথম ইনিংসে তিনশোই চাহিদা ছিল তার। ২৫৯ রানে ৮ উইকেট হারানোর পরও বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে তিনশো। বাংলাদেশের জন্যে সুখবর প্রথম দিন থেকেই উইকেটে মিলছে শার্প টার্ন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের গড়পড়তা স্পিনাররাই বারবার ধন্দে ফেলছেন ব্যাটসম্যানদের।

উইকেটে টার্ন মিলবে, এমন আশাতেই একাদশে চার স্পিনার নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। এই ধরনের পিচে আগে ব্যাট করার বিকল্প নেই।

গুরুত্বপূর্ণ টস জিতে ব্যাট করতে নেমে এক বছর পর টেস্টে ফেরা সৌম্য সরকার প্রথম ওভারেই গায়েব। কেমার রোচের হালকা মুভমেন্টে বেরিয়ে যাওয়া বলে ডিফেন্সই করতে গিয়েছিলেন সৌম্য। বল ব্যাটে চুমু খেয়ে জমা পড়ে উইকেটকিপার ডাওরিচের গ্লাভসে।

এরপরের দুই ঘণ্টা মুমিনুল হকের সাবলীল ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কাঁপাকাঁপি করেছেন ইমরুল কায়েস। ৩ আর ১৬ রানে দুবার জীবন দিয়ে বেঁচেছেন তিনি। তবে লাঞ্চের আগেই শেষ হয়েছে তার সংগ্রাম। ফিফটা না করা ইনিংসের সংখ্যা আরও একটি বাড়িয়ে ফেরেন ৪৪ রানে।

আরেক প্রান্তে লাঞ্চের পরও দারুণ খেলে গেছেন মুমিনুল। চারে নামা মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে গড়ে উঠে তার ৪৮ রানের আরেক জুটি। জুটি ভাঙে মিঠুনের ভীষণ দৃষ্টিকটু শটে। উইকেটে সেট হয়েও এই ব্যাটসম্যান। দেবেন্দ্র বিশুকে স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন আকাশে তুলে।

ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরিতে নিজেকে রাঙানোর পর বড় কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন মুমিনুল। চলতি বছরের যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি, দেশের হয়েও যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করে চা বিরতি থেকে ফেরার পরই ছন্দপতন। গ্যাব্রিয়েলের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে থামেন ১২০ রানে। এরপরই যেন তুমুল ঝড়। গ্যাব্রিয়েল ফিরিয়ে আনলেন জুলাইয়ের সেই ট্রমা।

এই স্পেলেই ক্যারিবিয়ান পেসার ধসিয়ে দেন বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের মেরুদণ্ড। মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসানকে পরপর ফিরিয়েছেন ভেতরে ঢোকা বলে। ১৩ রানের ভেতর বাংলাদেশ হারায় চার উইকেট। ম্যাচের পরিস্থিতি বলে দিচ্ছিল প্রথম দিনই হয়ত ব্যাট করতে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কিন্তু সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টায় সফল হয়েছে বাংলাদেশের লেট অর্ডার। মেহেদী হাসান মিরাজ ২২ রান করে বাঁহাতি স্পিনার ওয়ারিক্যানের বলে কাবু হলেও টিকে আছেন নাঈম-তাইজুল। বয়সভিত্তিক দলে নাঈমের ব্যাট চালানোর সুনাম আছে, তাইজুল তো টেস্টে প্রায়ই দেখিয়েছেন নিবেদন। তাদের পরিণত ব্যাটিং শেষ বিকেলে শান্তির সুবাতাস হয়েই যেন লেগেছে সাকিব আল হাসানের গায়ে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

প্রথম দিন শেষে

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩১৫/৮ (৮৮ ওভার)   (ইমরুল ৪৪ , সৌম্য ০, মুমিনুল ব্যাটিং ১২০ , মিঠুন ২০, সাকিব ৩৪, মুশফিক ৪, মাহমুদউল্লাহ ৩ , মিরাজ ২২, নাঈম ব্যাটিং ২৪*, তাইজুল ব্যাটিং ৩২* ; রোচ ১/৫৫,  গ্যাব্রিয়েল ৪/৬৯, চেজ ০/৪২, ওয়ারিক্যান ২/৬২, বিশু ১/৬০, ব্র্যাথয়েট ০/১৯)

Comments