আবু ‘হত্যার’ তদন্তে অন্ধকারে পুলিশ, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবু বকরের মৃত্যু বিষয়ে এখনও পরিষ্কার কিছু বলতে পারছে না পুলিশ। আবু বকরের মরদেহ কীভাবে বুড়িগঙ্গা নদীতে এলো সেটাও বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামাল ডেইলি স্টারকে বলেন, মরদেহে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া না যাওয়ায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা জানি না মরদেহ কীভাবে নদীতে এলো। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

রাজধানীর বিজয়নগর এলাকা নিখোঁজ হওয়ার পর সোমবার বুড়িগঙ্গা নদীতে আবু বকরের মরদেহ ভাসতে দেখা যায়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আবু বকরের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকেলে কেশবপুর পাবলিক মাঠে জানাজা শেষে মজিদপুরের বাগদাহ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা জানিয়েছেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হবে।

এদিকে আবু বকর আবুর মৃত্যুতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ। রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আবু বকর হত্যার পেছনে রয়েছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তিনি আরও বলেন, এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। আওয়ামী লীগ চায় না বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যাক।

আবু বকর মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অভিযোগ,  আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আবু বকরের মরদেহ পাওয়া গেছে।

দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আটক করা হচ্ছে অভিযোগ এনে বুধবার বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে একটি তালিকা দেওয়া হয়। তালিকা অনুযায়ী, যে পাঁচজন মনোনয়ন প্রত্যাশীকে আটকের কথা বলা হয়েছে- আবু বকর ছিলেন তাদের একজন।

বৃহস্পতিবার যশোরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আবু বকরের ভাগনে আশিকুজ্জামান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ আসনের মনোনয়ন ফরম নিতে গত সপ্তাহে ঢাকায় গিয়েছিলেন আবু বকর। ১২ নভেম্বর তিনি মনোনয়ন ফরম কেনেন। ১৮ নভেম্বর আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিজয়নগর এলাকা থেকে তিনি অপহরণের শিকার হন। স্থানীয় নেতা এবং আবু বকরের পরিবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯ নভেম্বর বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাতকারের আগেই এই ঘটনা ঘটে।

আশিকুজ্জামান আরও বলেন, অপহরণকারীদের দাবি অনুযায়ী, ১৯ নভেম্বর সকালে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়া হয়, তারপরও তারা হত্যা করে।

রাজধানীর পুরানা পল্টনে মেট্রোপলিটন হোটেলের ব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান বলেন, আবু বকর ৪১৩ নম্বর রুমে উঠেছিলেন। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, এই বিএনপি নেতা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দুইটি ব্যাগ হাতে হোটেল থেকে বেরিয়ে যান।

ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগ অস্বীকার করে আজ (২৪ নভেম্বর) বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ডেইলি স্টারকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়া ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদন আসার আগেই তিনি এই ধরনের মিডিয়া ট্রায়াল করতে পারেন কি- প্রশ্ন রাখেন আলাল।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্দেশ দিয়েছে, পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বলা যাবে- মূল ঘটনা কী ছিল। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি তদারকি করছে।

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

5h ago