ঘূর্ণি বলে নাচিয়ে গতির জবাব বাংলাদেশের

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে গতি আর বাউন্সে কাবু হয়েছিল বাংলাদেশ। ফিরতি সফরে ঘরের মাঠে পেয়ে সেই ক্যারিবিয়ানদের এবার পাওনা মেটাতে ঘূর্ণি বলে নাচিয়ে ছাড়ল সাকিব আল হাসানের দল। স্পিনারদের জন্য বাইশ গজি স্বর্গ বানিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতল আড়াই দিনে।
Bangladesh Team
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে গতি আর বাউন্সে কাবু হয়েছিল বাংলাদেশ। ফিরতি সফরে ঘরের মাঠে পেয়ে সেই ক্যারিবিয়ানদের এবার পাওনা মেটাতে ঘূর্ণি বলে নাচিয়ে ছাড়ল সাকিব আল হাসানের দল। স্পিনারদের জন্য বাইশ গজি স্বর্গ বানিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতল আড়াই দিনে।

শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যারা বেলা করে মাঠে ঢুকেছেন তাদের হয়ত চোখ কপালে উঠেছে। লাঞ্চের আগেই দুদলের যে পড়ল নয় উইকেট। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসও যে প্রায় অর্ধেক মুড়ে গেল। চা-বিরতির খানিক আগে খেলাই শেষ।

বাংলাদেশের দেওয়া ২০৪ রানের জবাবে টেনেটুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গিয়েছে ১৩৮ রানে। বাংলাদেশের জয় ৬৪ রানের।  ক্রেগ ব্র্যাথওয়েটদের প্রথম ইনিংসে মূল জম ছিলেন নাঈম হাসান। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ভার নিলেন তাইজুল ইসলাম। ৩৩ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি।

২০০৯ সালে ভাঙাগড়ার মধ্যে থাকা দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওদের দেশে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। এরপর নয় বছরে আর ওদের বিপক্ষে টেস্ট জেতা হয়নি। সেবার মাশরাফি মর্তুজা চোটে পড়ায় ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। এবার তো তিনি অধিনায়কই, ওদের বিপক্ষে তিনটি জয়েই তাই অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। সবমিলিয়ে এটি বাংলাদেশের বারোতম টেস্ট জয়।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলেই খেলার ফয়সালা হয়ে যাবে, সকাল বেলাতেই এমন আভাস ছিল। তবে সেই ফলটা বাংলাদেশের পক্ষে আসবে কিনা তাই নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কাও ঘুরপাক খাচ্ছিল।  মুশফিকুর রহিমের পাগলাটে অ্যাপ্রোচ, টপাটপ উইকেট পতনে লিডটা দু’শো পার করে কিনা তা নিয়ে ছিল সন্দেহ। তবে মাহমুদউল্লাহর মাঝারি ইনিংস দেয় থই। তবুও কেবল ২০৪ রান কি যথেষ্ট? আগের দিন নাঈম বলে গিয়েছিলেন দেড়শো রান হলেই কাজটা কঠিন হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। তখন কথাটা হয়ত কারো কারো কাছে বাড়াবাড়িই লাগতে পারে । কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাট করতে নামতেই মনে হলো একশো রানই তো ওদের জন্যে অনেক। শেষ পর্যন্ত তারা আসলেও দেড়শো পর্যন্ত যেতে পারেনি।

আগের দুদিনের মতো এদিনও বল ঘুরেছে। স্পিনাররা আচমকা বাউন্সে হকচকিয়ে দিয়েছেন বারবার। তবু সাগরিকার পিচকে দুই সেশনে ১৫ উইকেট পড়ার মতো মাইনফিল্ড কখনোই মনে হয়নি। দুদলেরই কেউ কেউ ভালো বলে ফিরেছেন বটে, তবে অনেকেই ইনিংস শেষ করেছেন ব্যাখ্যাতীত গড়বড় পাকিয়ে। হয়ত উইকেটের আচরণেই মনের গভীরে আতঙ্ক ভর করেছিল ব্যাটসম্যানদের।

৫৫ উইকেটে ৫৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ লাঞ্চের আগেই ১২৫ রানে গুটিয়ে যাওয়ার সময় লাঞ্চের কেবল আধঘণ্টা বাকি ছিল। একটু দেখেশুনেই সময়টা পার করে দেওয়ার মতো। কিন্তু কিছু বোঝে উঠার আগে ওই অল্প সময়েই ১১ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে ক্যারিবিয়ানরা। তখনই  আসলে ম্যাচের এপটাফ লেখা মোটামুটি সারা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মুড়ে দেওয়ার শুরুটা করেন বাংলাদেশ অধিনায়কই। বল হাতে নিয়ে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই কিরন পাওয়েলকে বলের সম্মোহনে ক্রিজ থেকে টেনে বের করে স্টাম্পিং করেন। এরপরের ওভারে ছাঁটেন শাই হোপকে। এই দুই উইকেটের উৎসব চলতেই আরেক প্রান্ত থেকে তাইজুলের চর্কিতে ঘুরপাক খেয়ে প্যাভিলিয়ন মুখি হন ব্র্যাথওয়েট আর রোস্টন চেজ। লাঞ্চটা আরেকটু পরে হলে এই পতনের ধারা থামত কিনা কে জানে।

লাঞ্চ থেকে ফিরে প্রথম ইনিংসের মতো পালটা আক্রমণ শুরু করেছিলেন শেমরন হেটমায়ার। চার-ছয়ে খেলা আবার ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রায় অসম্ভব চেষ্টায় মত্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এবার তাকে বেশি বাড়তে দেয়নি বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রো পাইয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পুরো ম্যাচে মিরাজ পেয়েছেন কেবল তিন উইকেট। কিন্তু ম্যাচ পরিস্থিতির বিচারে তিনটাই ভীষণ দামি।

হেটমায়ারের ফেরার পর আবার তাইজুলের ছোবলে ডুবতে থাকে উইন্ডিজ। এক প্রান্তে টিকে থাকা সুনিল আম্রিস নবম উইকেটে গিয়ে পান আরেক সঙ্গী। জোমেল ওয়ারিক্যানের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটিয়ে বাংলাদেশের নিশ্চয়ই ভয় ধরেনি, কিন্তু কৌতুহলি হয়ে যাওয়ার অবস্থা ছিল। সেই ওয়ারিক্যানকে ঠিক সময়ে ফিরিয়ে ‘অসম্ভব চিন্তা’ সরিয়েছেন মিরাজ।

আম্রিস, হেটমায়ার আর ওয়ারিক্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পুরো ইনিংসে দুই অঙ্কে গেছেন এই তিনজন। বাকি সবার রান যেন টেলিফোন ডিজিট।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা ভাল ব্যাট করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ব্যবধান গড়েছে আসলে প্রথম ইনিংসই। ম্যাচ সেরা হওয়া মুমিনুল হকের  সেঞ্চুরি, নবম উইকেটে নাঈম-তাইজুলের ৬৫ রানের ওই জুটির মূল্য ম্যাচ শেষেও বোঝা গেছে আরেকবার। 

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩২৪

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ২৪৬

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস:  ১২৫/১০ (৩৫.৫ ওভার) ( ইমরুল ২, সৌম্য ১১, মুমিনুল ১২, মিঠুন ১৭, সাকিব ১, মুশফিক  ১৯,  মিরাজ ১৮ , মাহমুদউল্লাহ  ৩১, নাঈম ৫, তাইজুল ১,  মোস্তাফিজ ২*; রোচ ০/১১, ওয়ারিক্যান ২/৪৩, চেজ ৩/১৮, বিশু ৪/২৬, গ্যাব্রিয়েল ১/২৪)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস:  ১৩৯/ ১০  (লক্ষ্য ২০৪)  (৩৫.২ ওভার) (ব্র্যাথওয়েট ৮, পাওয়েল ০, হোপ ৩, আম্রিস ৪৩ , চেজ ০,  হেটমায়ার ২৭, ডওরিচ ৫, বিশু ২, রোচ ১, ওয়ারিক্যান ৪১, গ্যাব্রিয়েল ০* ; সাকিব ২/৩০, নাঈম ০/২৯, তাইজুল ৬/৩৩, মিরাজ ২/২৭, মোস্তাফিজ ০/১১)

ফল:  বাংলাদেশ ৬৪ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুমিনুল হক। 

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago