পূর্বের প্রার্থীরাই এবারও বিএনপির তালিকায়

রবিবার হরতাল ও অবরোধ নেই,

গত ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির যেসব প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছিলেন আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাদেরকেই প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

গত কয়েকদিনে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রায় ২৫০ জনের একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছে। বাকি আসনগুলো শরিকদের জন্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে আসা ২০০ জনের এক তালিকায় দেখা যায় যে অধিকাংশ প্রার্থী হয়তো আগে এমপি বা মন্ত্রী ছিলেন নয়তো আগের নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়েছিলেন।

এমনকি, দলের যেসব নেতা ‘সংস্কারপন্থি’ হওয়ার ফলে বা অন্যান্য কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তাদের নামও রয়েছে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চূড়ান্ত তালিকায়।

তালিকায় ৫০টি নতুন মুখও রয়েছেন। তবে, তাদের অধিকাংশই মৃত নেতাদের আত্মীয়।

যেমন, নরসিংদীর বিএনপি নেতা সরদার শাখাওয়াত হোসেন, কিশোরগঞ্জের মেজর (অব) আখতারুজ্জামান, যশোরের মফিকুল হাসান তৃপ্তি বা ভোলার মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ - তারা ‘সংস্কারপন্থি’ হওয়ার অভিযোগে দলে কোণঠাসা হয়েছিলেন। তবে এবারের চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।

দল থেকে বহিষ্কৃত চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী যিনি সম্প্রতি দলে যোগ দিয়েছেন তাকে গাজীপুর-১ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এছাড়াও, প্রয়াত বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহ-র ছেলে রিয়াজুল হান্নানকে গাজীপুর-৪ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রামে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। সেখানে রয়েছে ১৬টি আসন। তিনি সাধারণত দুটি আসনে নির্বাচন করতেন। এবার তার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে এবং তার পরিবারের অন্য এক সদস্যকে চট্টগ্রাম-২ থেকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

গত বছর মারা গেছেন কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত এমপি ও সাবেক মন্ত্রী এমকে আনোয়ার। তার ছেলে মাহমুদ আনোয়ারকে এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তিনি বিএনপির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী একসময় সিলেট-২-এর এমপি ছিলেন। তিনি ২০১২ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

সিলেট-১ ও সিলেট-৬ থেকে বিএনপি এবার নতুন কাউকে মনোনয়ন দিতে পারে। সিলেট-৬ থেকে আব্দুল কাহহার শামীমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, সিলেট-১ এর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামানকে নেত্রকোনা-৪ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

বিএনপির শরিক জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মনসুরকে মৌলভীবাজার-২ থেকে এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ও গণফোরাম নেতা রেজা কিবরিয়াকে হবিগঞ্জ-১ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, ফরিদপুরের বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ দলের শীর্ষ নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। তার পরিবর্তে তার মেয়েকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন। তবে বিএনপি নেতারা তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি নির্বাচন না করলে সেখানে শাহজাদা মিয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমেদকে চট্টগ্রাম-১৪ থেকে এবং চট্টগ্রাম-১৫ থেকে বিএনপির প্রধান শরিক বাংলাদেশ জামাত-ই-ইসলামীর কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

ফেনী এবং নোয়াখালীতে বিএনপির শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে মনে করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাধারণত ফেনী-১ থেকে নির্বাচন করে থাকেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি দূর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তাই এই আসন থেকে কোনো দলীয় মনোনয়ন এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।

এদিকে, নোয়াখালী জেলায় ছয়টি আসন রয়েছে। সেখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সবাই আগে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

লক্ষ্মীপুরের দুটি আসন বিএনপি তার শরিকদের ছেড়ে দিতে পারে। লক্ষ্মীপুর-১ এ এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং লক্ষ্মীপুর-৪ এ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সভাপতি আ স ম আব্দুর রবকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে বিএনপির নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। দুদিন আগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া নাও হতে পারে।

কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে তিনটি শরিকদের ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতনকে কুমিল্লা-৪, জামাত নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে কুমিল্লা-১১ এবং এলডিপির রেদওয়ান আহমেদকে কুমিল্লা-৭ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-৪ এবং ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-৬ থেকেও দলের শরিকদের মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ছয়টি ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা-১, ঢাকা-৫, ঢাকা-৬, ঢাকা-১০, ঢাকা-১২ এবং ঢাকা-১৫ থেকে নতুন প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।

বাগেরহাট-৪ থেকে জামাত নেতা শহীদুল আলম এবং খুলনা-৬ থেকে জামাত নেতা আবুল কালাম আজাদকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়াও, সাতক্ষীরা-৪ থেকে জামাত নেতা গাজী নজরুল ইসলাম এবং কক্সবাজার-২ থেকে জামাত নেতা হামিদুর রহমান আজাদকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago