জামায়াত-শিবির ও হেফাজত স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি: মার্কিন কংগ্রেস
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও হেফাজতে ইসলামকে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে এসব গোষ্ঠীকে থামাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে এক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নির্বাচিত প্রতিনিধি জিম ব্যাঙ্কস গত ২০ নভেম্বর ‘বাংলাদেশে ধর্মের নামে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলোর কারণে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সৃষ্ট হুমকির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক এই প্রস্তাবটি এনেছেন।
ওই প্রস্তাবে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন এবং তাদের সঙ্গে অংশীদারি বন্ধ করতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অপরদিকে, বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এর ধারে-কাছেও নেই বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স।
দেশটির এমপিদের অবগতির জন্য ‘রিসার্চ ব্রিফিং’ নামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে বিএনপি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকে স্বাগত জানিয়েছে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সম্প্রতি রক্ষণশীল ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। হেফাজতে ইসলামের মতো ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সখ্য উল্টো পথে মোড় নেওয়ার মতো।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এই দুটি ক্ষমতাধর দেশের উদ্বেগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘দেশীয় রাজনীতির এই সময়ে ধর্মভিত্তিক দলগুলো বড় ফ্যাক্টর নয়। এদের ভেতর সেই রাজনৈতিক শক্তি নেই। এরা প্রকাশ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করলেও, এদের অপ্রকাশ্য তৎপরতা বেশি বিপজ্জনক। এদের ভেতরে ভেতরে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটলেও, এই কাজ এরা প্রকাশ্যে করবে না।’
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মীয় চেতনাকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। বাংলাদেশে বামপন্থীরা এখনও শক্তিশালী নয়। মানুষের ভেতরে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়ে রয়েছে। ফলে সহজেই তারা ধার্মিক লোকজনকে উগ্রপন্থায় ব্যবহার করতে চাইবে। কিন্তু এই ধর্মভিত্তিক দলগুলোও আবার বিভিন্নভাবে বিভক্ত। দেশে বামপন্থী আন্দোলন জোরালো হলে এসব ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকে নিষিদ্ধের দাবি করা যায়।’
মার্কিন কংগ্রেসের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সম্প্রতি হামলার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জড়িত। এছাড়া বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আহমদিয়া মুসলমানদের ওপর ধর্মীয় উগ্রবাদীরা হামলা চালিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে পুরোপুরি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে আন্দোলন চালাচ্ছে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, ‘মানুষের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা জাগানো এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মূল আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি আনা উচিত। আগামী দিনে মানুষের বিক্ষোভ ধারণ কারা করবে, তা স্পষ্ট হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘পশ্চিমারা বামপন্থীদের কখনই সমর্থন করবে না। কারণ- আইএস, তালেবানের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো ডানপন্থীদের দ্বারাই তৈরি।’
যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সের ১৩ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে কোনো পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইইউ’র এমন সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশিদের উচিত উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয় তা দেখা। রাজনৈতিক দিকে থেকে এ দেশে যাতে এক ধরনের স্থিতিশীলতা আসে। ফলে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের প্রচুর সংখ্যক পর্যবেক্ষক পাঠানো উচিত।’
নির্বাচন কমিশন যেখানে দেশীয় পর্যবেক্ষকদের মূর্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার কড়া নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে, সেখানে বিদেশি পর্যবেক্ষকরাই বা কতটুকু স্বাধীনভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবে? এমন প্রশ্নে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘পর্যবেক্ষকরা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন, এ কথা বলা ঠিক নয়। এতে দেশীয় পর্যবেক্ষকদের অধিকার খর্ব করা হলেও, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বিভিন্ন শর্ত দিতে পারেন। আন্তর্জাতিক আইন মেনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দিতে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর চাপ প্রয়োগও করতে পারেন।’
নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতিত্বের আচরণ করছে, বিরোধী দলগুলোর এমন অভিযোগের পরও কমিশনের উপর আস্থা রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে মত দেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘চলমান ঘটনাপ্রবাহ থেকে নির্বাচন কমিশনের শিক্ষা নেওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আশা করি নির্বাচন কমিশন তা বুঝবে। তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বই হচ্ছে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করা। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে দায় তাদের উপরই বর্তাবে।’
Comments