সাবেক কূটনীতিক মারুফ নিখোঁজ

এক বছরেও সন্ধান মিলল না!

maroof zaman
নিখোঁজ হওয়া সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। ছবি: সংগৃহীত

ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন মারুফ জামান। গত বছর তিনি ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন। তারপর এক বছর পেরিয়ে গেলেও তার খোঁজ মেলেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে যে পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

সাবেক রাষ্ট্রদূতের মেয়ে শবনম জামান তার ক্ষোভ-হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “এটি এখন এমন অবস্থায় গিয়েছে যে মনে হচ্ছে- আমার বাবার কখনোই কোনো অস্তিত্ব ছিলো না।”

দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার পর এক ইমেল বার্তায় শবনম জানান, গত এক বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বা যাদেরই সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি তারা কেউই কোনো অর্থবহ সহযোগিতা করেননি। কাউকে কাউকে তো পাওয়াই যায়নি। কেউ আবার যেনো বিরক্তও হয়েছেন।

মারুফকে খুঁজে বের করার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘নীরবতা’ পরিবারের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে- তাহলে কি তাকে তুলে গিয়ে যাওয়া হয়েছে? একজন কূটনৈতিকের বিষয়ে রাষ্ট্রের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু, এসব প্রশ্নের পরও মারুফ এখনো ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। শবনম বলেন, “আমরা যা চাই তা হলো- আমাদের বাবা জীবিত অবস্থায় বাসায় ফিরে আসুক।”

৬২ বছর বয়সী মারুফ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। সেদিন তিনি ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে ধানমন্ডি বাসা থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন তার ছোট মেয়ে সামিহা জামানকে নিয়ে আসার জন্যে।

সেদিন বিদেশ থেকে তার মেয়ের আসার কথা ছিলো সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। সেই সময়ের কাছাকাছি মারুফ তার বাসার ল্যান্ড ফোনে ফোন করে কাজের লোককে জানান যে একজন এসে তার ল্যাপটপটা নিয়ে যাবে। তাকে যেনো তা দেওয়া হয়।– এই কথাগুলো মারুফের ভাই রিফাত আগেই সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন।

ভালো পোশাক ও মাথায় ক্যাপ পড়া তিনজন লম্বা ব্যক্তি মারুফের বাসায় এসেছিলেন। তারা তার ল্যাপটপ, ডেস্কটপ এবং ক্যামেরা নিয়ে যান। তারপর থেকেই মারুফকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান রিফাত। তবে তার গাড়িটি বিমানবন্দর সড়কের পাশে খিলক্ষেত এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ দেখেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেই তিন ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে পারেনি।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বলেন, তারা সাবেক রাষ্ট্রদূতের বিষয়ে এখনো কোনোকিছু খুঁজে পাননি। সেই তিন ব্যক্তির পরিচয়ও জানতে পারেননি তারা। তবে বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি।”

গত বছরের আগস্টে যে ডজনখানেক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছিলেন মারুফ তাদের একজন। তাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন ফিরে এসেছেন। পরে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কিন্তু, মারুফ ও বাকিদের সম্পর্কে এখনো কোনকিছু জানা যায়নি।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে, দেশে গত ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৪৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০০-র বেশি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

এদিকে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মারুফের গুম হওয়ার বিষয়ে চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট একটি রেজুশেলন গ্রহণ করে। তারা বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতার বাড়াবাড়ি ইত্যাদি বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানায়।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “গত এক বছরেরও আমরা মারুফের কোনো খোঁজ পেলাম না এটি খুবই দুঃখের বিষয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতাও চোখে পড়লো না।”

রাষ্ট্রদূত বা আইনপ্রণেতাদের গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো দেশে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বলেও মত দেন এই মানবাধিকারকর্মী।

মারুফের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবারো আবেদন জানানো হয়েছে যে এই ঘটনার একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus-Tarique meeting begins

Amir Khosru, Humayun Kabir accompany the BNP acting chairman to The Dorchester Hotel

27m ago