‘তারে কই বড় বাজিকর’

ershad

নির্বাচনের সঙ্গে তার ‘অসুস্থতা’র একটা নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এই সম্পর্কটি দৃশ্যমান হয়েছিলো।

তিনি বললেন, নির্বাচনে তার দল জাতীয় পার্টি অংশ নেবে না, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হবে। আগমন ঘটলো ‘অসুস্থতা’র। তাকে নিয়ে যাওয়া হলো সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। তিনি ‘অসুস্থ’। স্থান হলো ভিভিআইপি কেবিনে। তারপর আর্মি গলফ ক্লাবে গিয়ে গলফ খেললেন, তখনো তিনি ‘অসুস্থ’, এমপিও নির্বাচিত হলেন।

এবারের নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি আবার ‘অসুস্থ’ হলেন। ভর্তি হলেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।

পর্দায় হাজির হলেন মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে আলোচিত মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার। জানালেন, ‘তিনি ভালো আছেন। সুস্থ হয়ে উঠছেন।’

মহাসচিবের নিজের মনোনয়নপত্র বাতিল হলো। হঠাৎ করে হারালেন মহাসচিব পদও।

নতুন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা জানালেন, এরশাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেছে। চিকিৎসার জন্যে সিঙ্গাপুরে যাবেন কী না, ১০ তারিখের পর জানা যাবে। তিনি ভালো আছেন, রাতে তার বাসায় গিয়েছিলাম, সকালে এক সঙ্গে নাস্তা করেছি।

তারপর আবার তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।

এবার জানা গেল, তিনি নিঃসঙ্গ, অসুস্থ নন।

হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার পরিবর্তে এবার সামনে এলো ‘ঘুমের সমস্যা’। নতুন মহাসচিব জানালেন, ‘তিনি বাসায় একা থাকতে ভয় পান। ঘুমের সমস্যা হলে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন। বাসায় একলা থাকেন বলে তার একলা লাগে, ভয় করে।’

এই কথাগুলো যে একদা দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদকে নিয়ে, তা কারো না বোঝার কথা নয়।

এরশাদ কী ভাবছেন, কী বলছেন আর কী করবেন- তা বুঝে ওঠা শুধু কষ্টকর নয়, প্রায় অসম্ভব। ফলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা আসন ভাগাভাগির সময়ে কী না কী করে ফেলেন, কোথায় যান কোন দিকে যান, এমন আশঙ্কা প্রতি মুহূর্তে থাকে।

ছোট্ট একটি ঘটনা বললে এরশাদকে কিছুটা বোঝা যেতে পারে।

তখন তিনি তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা ও সন্তান এরিককে নিয়ে বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ ফ্ল্যাটেই থাকেন। এরশাদ সকালে যথারীতি ঘুম থেকে উঠেছেন। জিম করে নাস্তা করেছেন। নিজ হাতে আম কেটে স্ত্রী বিদিশাকে মুখে তুলে খাইয়েছেন। জাতীয় পার্টির অফিসে যাওয়ার জন্যে স্ত্রীর কাছে থেকে বিদায় নিয়ে, হাসি মুখে বাসা থেকে বেরিয়েছেন। গাড়িতে উঠে সোজা গুলশান থানায় গিয়ে, স্ত্রী বিদিশার নামে চুরির মামলা দায়ের করে অফিসে গেছেন।’

বিদিশা বাসায় বসে টেলিভিশন সংবাদে দেখলেন, একটু আগে আম খাওয়ানো এরশাদ তার নামে চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।

এই হচ্ছেন এরশাদ!

গণমাধ্যমের সামনে সেদিন এ কাহিনির বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছিলেন বিদিশা।

ভূপেন হাজারিকার সেই ‘এ বড় রঙ্গ যাদু’ বা সৈয়দ শামসুল হকের ‘এ বড় দারুণ বাজি, তারেই কই বড় বাজিকর’।

নির্বাচন বড় বাজি, এরশাদ বড় বাজিকর। জটিল সমীকরণের সময়ে এরশাদকে নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার যৌক্তিক কারণ যে আছে, তা অস্বীকার করা যাবে না।

আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকার বটিকা ‘অসুস্থতা’। তা সে ‘হিমোগ্লোবিন’ কমে যাক, একা থাকার ‘ভয়’ বা ‘নিঃসঙ্গতা’ যাই হোক না কেনো!

২.

নতুন মহাসচিব এও বলেছেন, ‘তার (এরশাদ) বাসায় অবাঞ্ছিত কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি এখন হানড্রেড পার্সেন্ট ফিট রয়েছেন। তবে তার বাইরে যাওয়া জরুরি। সেটি হবে ১০ তারিখের পর।’

একা থাকতে ‘ভয়’ পেলেও, ‘অবাঞ্ছিত’ কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না এরশাদের ফ্ল্যাটে।

‘যেতে দিচ্ছেন না’- কে বা কারা? এরশাদ নিজে না ‘বিশেষ দূত’-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন?

টানা নয় বছর যার দাপটে দেশের পুরো প্রশাসন কাঁপতো, তার হিমোগ্লোবিন কমে গেছে কী না, ঘুম হয় কী না, একা থাকতে ভয় পান কী না, নিঃসঙ্গ কী না, সঙ্গ লাগবে না কী বারবার সম্মিলিত হাসপাতালে ভর্তিই সমাধান, নিজে তা বলতে পারছেন না। যদিও তিনি ‘শতভাগ ফিট’ রয়েছেন! ‘শতভাগ ফিট’ এরশাদ ‘অসুস্থতা’-র আগে বারবার নির্বাচন নিয়ে নানা কথা বলেছেন।

৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। তার আগে পর্যন্ত ‘অসুস্থ’ থাকলে, ‘অবাঞ্ছিত’ কাউকে তার কাছাকাছি যেতে না দিলে, তিনি ফ্ল্যাটের বাইরে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ছাড়া) বা দেশের বাইরে না গেলে, পরিবেশ স্বস্তিদায়ক থাকতে পারে। ১০ তারিখের পরে তার দিক থেকে বড় জটিলতা তৈরির সম্ভাবনা কম।

৩.

একা থাকতে ‘ভয়’ বা ‘নিঃসঙ্গতা’ বা ‘বিষণ্ণতা’ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের ভাষায় ‘এগুলো মানসিক রোগ বা রোগের পূর্ব লক্ষণ’।

‘শতভাগ’ ফিট একজন মানুষ সম্পর্কে ‘মানসিক রোগ বা পূর্ব লক্ষণ’-এর আলামতের কথা গণমাধ্যমকে জানাচ্ছেন নতুন মহাসচিব। এসব কী তার নিজের কথা না কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কথা, না এরশাদ নিজে বলছেন বা মনে করছেন?

গত অক্টোবরে জাতীয় সংসদে ‘মানসিক স্বাস্থ্য বিল-২০১৮’ পাস হয়েছে। মানসিক রোগ বিষয়ে অসত্য সার্টিফিকেট দিলে ‘অনধিক তিন লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে’।

Comments

The Daily Star  | English
Road Transport Act 2018: Govt moves to relax punishment, fines

All Dhaka buses to run under Nagar Paribahan

All passenger buses in Dhaka are scheduled to operate under Dhaka Nagar Paribahan, according to new decision yesterday by Bus Route Rationalization Committee (BRCC)

2h ago