ভিকারুননিসার প্রধান সমস্যা বাই-রোটেশন অধ্যক্ষ নিয়োগের নিয়ম: হামিদা আলী
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/hamida_ali1.jpg?itok=FnLZFFPn×tamp=1544021480)
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারী ও তার অভিভাবকদের স্কুলে অপমান করার পর আত্মহত্যা করল অরিত্রী। শিক্ষামন্ত্রী ছুটে গিয়ে বললেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হলো। এখন পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও আন্দোলন চলছে। অভিভাবকদের অনেকেই বলছেন, এটি আত্মহত্যা নয়, হত্যা। তাহলে হত্যাকারী কে? সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষায়তন নাকি পুরো শিক্ষাব্যবস্থা?
বহুদিন অধ্যক্ষের দায়িত্বে থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজকে খ্যাতির শিখরে তুলেছেন হামিদা আলী।
হামিদা আলীকে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়, শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। বয়সের কথা বলে সরকার সকল প্রতিবাদ-ক্ষোভ উপেক্ষা করে হামিদা আলীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। নিয়ম করা হয়েছে অধ্যক্ষ হবেন বাই রোটেশন। ধারণা করা হয় ভিকারুননিসার সঙ্কট শুরু হয় তখন থেকেই।
তারপর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে হামিদা আলী দায়িত্বভার নিয়েছেন সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের।
সহপাঠির আত্মহননকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার পরিবেশ আগেও কী এমনই ছিল? শিক্ষকরা কী শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সঙ্গে এমন আচরণ করতেন?
তার সময়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজর স্বর্ণযুগ ছিল উল্লেখ করে অধ্যক্ষ হামিদা আলী দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘নিজের কথা নিজে বলতে হচ্ছে বলে একটু বিব্রতবোধ করছি। আমার দায়িত্বে থাকাকালীন প্রতিষ্ঠানটির সবকিছুই অত্যন্ত চমৎকার ছিল। নিয়ম-কানুন ছিল, তা সবাইকে মানতেও হতো। তবে শিক্ষকরা শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন, ডেকে এনে অসম্মান করবেন-এমন নিয়ম ছিল না।
ভিকারুননিসার খারাপটা শুরু হলো তখন, যখন বাই-রোটেশনে সেখানে অধ্যক্ষ নিয়োগ হতে থাকল। প্রতিষ্ঠানটির আসল রোগ এই একটাই। কিন্তু, সেখানে কেন এমন সিদ্ধান্তের চর্চা শুরু হলো তা আজও আমার বোধগম্য নয়। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে বাইরে থেকে অধিকতর যোগ্য ব্যক্তিকেই প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া দরকার ছিল। একজন খুব ভালো শিক্ষক হলেও, তিনি প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ নাও হতে পারেন। বাই রোটেশন দায়িত্ব দিয়ে ভালোভাবে প্রশাসন চালানো যে সম্ভব নয়, তা তো দেখাই যাচ্ছে’।
এখন তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাইভেট পড়ানো, ভর্তি বাণিজ্যের রমরমা যুগ চলছে। সবাই বিষয়টি জানলেও, এ নিয়ে কেউ কিছু বলছেন না। প্রবীণ এই অধ্যক্ষের কথায় আক্ষেপ ঝরে পড়ে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সচল প্রতিষ্ঠানেরই একটি অতীত আছে। কোনো কোনোটির আছে সোনালি অতীত। আমার সময়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের যা ছিল। এসব গৌরবময় ইতিহাসকে মেরে ফেললে চলবে না। টিকিয়ে রাখতে হবে।’
বাণিজ্যিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে ওঠে শিক্ষকরা প্রকৃত জ্ঞানদানে ব্রতী হবেন, এই আশাবাদ জানিয়ে হামিদা আলী বলেন, ‘একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ঠিক থাকলে, শিক্ষার্থীরাও ঠিক থাকবে। যেখানে শিক্ষকেরা সকাতরে শুধু আলো জ্বেলে যাবেন।আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার এখন অমূল সংস্কার দরকার। ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মডেল বিবেচনা করে সামনে এগোনে দরকার ছিল। আমরা যেন উল্টোটা না করি। ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ধ্বংস করে না ফেলি।’
Comments