‘সম্পদ অর্জনের জন্যে রাজনীতি এখন একটি লোভনীয় মাধ্যম’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাশী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রের পাশাপাশি জমা দিয়েছেন তাদের এবং পোষ্যদের সম্পদের বিবরণী। এসব হলফনামা পর্যালোচনা করে প্রতিবারের মতো এবারও কৌতুহলউদ্দীপক তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে কোনো প্রার্থীর সম্পদ বেড়েছে ৯৩ গুণ। বদলে গেছে অনেক প্রার্থীর পেশা, আয়ের উৎস।
Mizra Azizul Islam and Dr Mainul Islam
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবিএ মির্জা আজিজুল ইসলাম (বামে) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যাশী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রের পাশাপাশি জমা দিয়েছেন তাদের এবং পোষ্যদের সম্পদের বিবরণী। এসব হলফনামা পর্যালোচনা করে প্রতিবারের মতো এবারও কৌতুহলউদ্দীপক তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে কোনো প্রার্থীর সম্পদ বেড়েছে ৯৩ গুণ। বদলে গেছে অনেক প্রার্থীর পেশা, আয়ের উৎস।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কারো কারো নিজের সম্পদের পরিমাণ সেভাবে না বাড়লেও তাদের স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে কয়েক গুণ।

এসব বিষয় নিয়ে ডেইলি স্টার অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবিএ মির্জা আজিজুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলামের সঙ্গে।

ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, “প্রার্থীরা যখন তাদের সম্পদের বিবরণী দিচ্ছেন তখন ধরে নিতে হবে তারা বৈধভাবে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন। যদি তাই হয়, এতে আর কিছু বলার থাকে না। বরং আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় হলো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও উন্নতি হয়েছে। এখন দেখার বিষয় হলো, হলফনামায় যে সূত্রগুলো তারা উল্লেখ করেছেন সেগুলো আসলেই বৈধ না কী অবৈধ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কিংবা নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলেই সেটা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখতে পারে।”

ড. মইনুল ইসলাম বলেন, “হলফনামাকে আমি খুব বেশি গুরুত্ব দিতে চাই না। যিনি সম্পদের ঘোষণা দিচ্ছেন, তিনি তাঁর প্রকৃত সম্পদের একটি অংশের হিসাব দিচ্ছেন। আসলে তাদের প্রকৃত সম্পদ অনেক বেশি, আর সেই হিসাবটা বের করা খুব কঠিন। কারণ কালো টাকার হিসাব কেউ তাদের হলফনামায় উল্লেখ করবেন না। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যদি একটি শক্তিশালী তদন্ত করতে পারে তাহলে প্রকৃত বিষয়টি বেরিয়ে আসবে। আমি মনে করি, দুদক এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উচিৎ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা।”

তিনি আরও বলেন, “অতীতেও বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিকে আমরা ক্ষমতায় থাকতে দেখেছি। সে সময় তাদের দল থেকে যারা জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন- একটা সময় গিয়ে আমরা দেখেছি তাদের সম্পদ অনেক বেড়ে গেছে। আবার ক্ষমতা থেকে চলে গেলেই যে তাদের সম্পদ বৃদ্ধির হার কমে যাবে, এটা মনে করারও কোনো কারণ নেই। কারণ ক্ষমতায় থাকতেই তারা অনেক বেশি সম্পদের মালিক হয়ে যান।”

“আমাদের দেশে উন্নয়নে প্রধান বাধা হলো দুর্নীতি। রাজনীতি এখন বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। সম্পদ অর্জনের জন্যে রাজনীতি এখন একটি লোভনীয় মাধ্যম। সেই কারণেই মনোনয়ন নিতে এতো কাড়াকাড়ি। কারণ সবাই জেনে গেছেন, মনোনয়ন পেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা অনেক সম্পদের মালিক হতে পারবেন। অনেকে জানেন তিনি মনোনয়ন পাবেন না, কিন্তু তারপরও মনোনয়ন চান- এর কারণ ওই লোকটিও জানেন, দলের সঙ্গে থাকলে কোনো না কোনোভাবে তিনি পুরস্কৃত হবেন।”

“রাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে সম্পদ অর্জন করার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কিন্তু যার কথাই বলা যাক, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, এরশাদ- এদের কেউ সরকারিভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নেননি। দুদক-কে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ফলে সবাই আসলে দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক,” মন্তব্য ড. মইনুল ইসলামের।

এর সমাধান কী হতে পারে বলে মনে করেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মইনুল বলেন, “এই অবস্থা চলতেই থাকবে ‘নট নেসাসারিলি’। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স- আমাদের সামনে উদাহরণ হিসেবে রয়েছে। তাদের দেশেও দুর্নীতি ছিলও, এখন কমছে। ফলে তাদের দেখানো পথে আমাদের এগুতে হবে। সেটা হয়তো এখনই সম্ভব হবে না। আরও সময় লাগবে। কারণ, সেই ধরনের রাজনীতির চর্চা তো এখনও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সম্ভব, তার জন্য জনগণকে সচেতন হতে হবে। অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। এবার দেখতে হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটুকু অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়।”

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago