মাশরাফি-মুশফিকের ঝলকে অনায়াসে জিতল বাংলাদেশ

Bangladesh Team
দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে জেতালেন মাশরাফি। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

নিজের দু’শতম ওয়ানডেতে দারুণ বল করে কাজটা এগিয়ে রেখেছিলেন মাশরাফি মর্তুজা। রান তাড়ায় সামান্য হোঁচট খেলেও পরে অনায়াসে তীরে তরি ভিড়িয়েছেন মুশফিকুর রহিম। টেস্ট সিরিজে নাস্তানাবুদ করা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডেতেও লড়াই করতে দেয়নি বাংলাদেশ।

রোববার কর্মদিবসের মাঝেও মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল ভরপুর। বাংলাদেশ অধিনায়কের জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার কারণেও  এই সিরিজে ছিল বাড়তি নজর। কিন্তু মাঠের বাইরের ইস্যু খেলায় ছাপ পড়তে না দিয়ে বাংলাদেশ জিতেছে ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে, ক্যারিবিয়ানদের দেয়া ১৯৬ রানের লক্ষ্য পেরিয়েছে ৮৯ বল হাতে রেখেই।

কোন মাইলফলক নাকি স্পর্শ করে না মাশরাফিকে। ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নামার আগে আরেকবার শুনিয়েছিলেন এ কথাই। কিন্তু একেবারেই কি ছোঁয়ে যায় না কোন রোমাঞ্চ? খেলার চলার মধ্যেই তার ফেসবুক পাতায় ভেসে উঠা আবেগ তো সে প্রমাণ দিচ্ছে না। তবে হতে পারে মুখে রোমাঞ্চ লুকিয়ে মাঠে দেখানোর তাড়না থাকে অধিনায়কের।

গত কদিন থেকে ক্রিকেটে ছিলেন না। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া মাশরাফি কতটা খেলায় ফোকাস করতে পারেন, তা নিয়ে এই কদিন আগে তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে বিস্তর প্রশ্নের। মাশরাফি নির্বাচন, রাজনীতি একপাশে সরিয়ে রেখে খেলাকেই আপাতত বড় করেছিলেন।  তার মুখের কথায় এটা কেউ বিশ্বাস নাও করতে পারেন। তবে প্রথম ওয়ানডেতে বোলিং দেখে হয়ত এবার মত পালটেছেন তারা।

মাশরাফির বেধে দেয়া সুরেই তো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কাবু করল বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে উইকেটে হাঁসফাঁস করতে করতে তারা করতে পেরেছিল ১৯৫ রান। ১০ ওভার বল করে ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তাতে মূল আঘাত বাংলাদেশ অধিনায়কের। ওই রান তাড়ায় অল্প বিস্তর হোঁচট খেলেও খুব সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের।

ওপেনার লিটন দাসের ৪১ রানের পর দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ৫৫ রান করা মুশফিক।

১৯৬ রানের মামুলি লক্ষ্যে নেমে অবশ্য বাংলাদেশের শুরুটা হয় নড়বড়ে। উইকেটে অসমান বাউন্সে অস্বস্তিতে ভুগে শুরু করেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস।

কেমার রোচের বলে ৫ রানেই ফ্লিক করে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরে  যাচ্ছিলেন লিটন। ওভারস্টেপে ‘নো’ বল হওয়ায় জীবন পান তিনি। তবে খানিকপরই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রোস্টন চেজের  লাফানো বলে পয়েন্ট ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১২ রান করা তামিম। পরের ওভারেই হতাশায় পোড়ান ইমরুল কায়েস। ওশান টমাসের গতিতে পরাস্ত হয়ে স্টাম্প যায় তার।

দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর জীবন পাওয়া লিটন থই পাইয়ে দেন দলকে। খেলতে থাকেন দারুণ কিছু শট। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে গড়ে উঠা তার ৪৭ রানের জুটি। ইনিংসটা বড় করার সুযোগ ছিল তার সামনে। কিন্তু ভুল শট নির্বাচনে আরেকবার হেলায় হারিয়েছেন সুযোগ। ৪১ রান করার পর কেমো পলের ভেতরে ঢোকা বলে আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে স্টাম্প উড়ে যায় তার।

পাঁচে উঠে দ্রুত রান বাড়িয়ে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন সাকিব। ঝটপট রান তুলে ফিরেও যান তড়িগড়ি। তার ২৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস থেমেছে রভম্যান পাওয়েলের বলে। তখন অবশ্য জেতা নিয়ে তেমন কোন শঙ্কা নেই বাংলাদেশের। ছয়ে নেমে সৌম্য সরকার দ্রুত কাজটা সারতে আপার কাটে চার-ছয়ে মেরে মাত করেছিলেন গ্যালারি। তবে চেজের বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় তাকে।

টস হেরে বোলিং পেয়ে দুই প্রান্তেই স্পিন দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ। রয়েসয়ে শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়ে যাচ্ছিল জুতসই শুরু। অষ্টম ওভারে গিয়ে আসে প্রথম সাফল্য। রান বাড়ানোর তাড়ায় সাকিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন কিরন পাওয়েল।

এরপরের ১২ ওভার ক্যারিবিয়ানদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। বিশেষ করে অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা ছিলেন ভীষণ আটোসাটো। তার বল থেকে রান বের করতে হিমশিন খাচ্ছিলেন শাই হোপ-ড্যারেন ব্রাভো।

ব্রাভোকে ভুগাতে ভুগাতেই দ্বিতীয় সাফল্য আনেন মাশরাফি। তবে ব্রাভোর আউটে বড় কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন তামিম। মিড অফের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বল লং অন থেকে চিতার ক্ষিপ্রতায় দৌড়ে শূন্যে লাফিয়ে হাতে জমান তিনি।

রান পাচ্ছিলেন কেবল হোপ। খানিক পর তাকেও ফেরান মাশরাফি। পুরো সিরিজে শেমরন হেটমায়ারের যম বনে যাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ এবাও তাকে আউট করার পর মাশরাফি তুলে নেন রভম্যান পাওয়েলকে।

ততক্ষণে মাজা প্রায় ভেঙে গেছে উইন্ডিজের। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের হাত গলে গোটা চারেক ক্যাচ বেরিয়ে না গেলে তাদের অবস্থা হতো আরও কাহিল। অভিজ্ঞ মারলন স্যামুয়েলস ধুঁকতে ধুঁকতে ২৫ রানে গিয়ে থামেন রুবেলের বলে। শেষ দিকে রোস্টোন চেজের ৩২ আর কেমো পলের ৩৬ রানে কিছুটা লড়াইয়ের পূঁজি পায় উইন্ডিজ।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ১৯৫/৯  (পাওয়েল ১০, হোপ ৪৩, ব্রাভো ১৯, স্যামুয়েলস ২৫, হেটমায়ার ৬, রভম্যান ১৪, চেজ ৩২, পল ৩৬, রোচ ৫*, বিশু ০, টমাস ০* ; মিরাজ ১/৩০ , সাকিব ১/৩৬, মোস্তাফিজ ৩/৩৫, মাশরাফি ৩/৩০, রুবেল ১/৬১)

বাংলাদেশ:  ৩৫.১ ওভারে ১৯৬/৫   (তামিম ১২,  লিটন ৪১,  ইমরুল ৪, মুশফিক ৫৫*, সাকিব ৩০, সৌম্য ১৯, মাহমুদউল্লাহ ১৪* ;রোচ ০/৩৫, চেজ ২/৪৭, টমাস ১/৩৪, পল ১/৩৭, বিশু ০/৩০, রভম্যান ১/৭)

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago