অংশগ্রহণমূলক, সর্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন করতে চাই: মাহবুব তালুকদার

আজ (১০ ডিসেম্বর) সকালে নির্বাচন ভবনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেদের উদ্দেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন বিষয়ে নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, কমিশনার মাহবুব তালুকদারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা।
Election Commissioner Mahbub Talukder
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। ফাইল ফটো

আজ (১০ ডিসেম্বর) সকালে নির্বাচন ভবনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেদের উদ্দেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন বিষয়ে নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, কমিশনার মাহবুব তালুকদারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, “ভোট সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন জাতির কাছে দায়বদ্ধ, আমরা কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করতে চাই না। আপনারা প্রজ্ঞা ও মেধা খাটিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।”

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, “বিচারকের দৃষ্টি হতে হবে নির্মোহ। তিনি অবশ্যই আইনানুগ মন বা ‘লিগাল মাইন্ডের’ অধিকারী হবেন। যিনি এই অবস্থান থেকে বিচ্যুত হবেন, তিনি বিচারকের যোগ্যতা হারাবেন।”

লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার যা বলেছেন-

১. ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ ও পরিপালনের পূর্বশর্ত হলো আইনের শাসন। আইনের শাসন না থাকলে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় তাকে আমরা হলুদ গণতন্ত্র বলতে পারি। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে হলুদ গণতন্ত্র চাই না। চাই স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক গণতন্ত্র। আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করে স্বচ্ছ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

২. ​আমরা বলে থাকি, নির্বাচন আইনানুগ করতে হবে। এ কথাটার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। আইন যদি নিজস্ব খাতে প্রবাহিত না হয়, তাহলে আইনানুগ কথাটা অর্থহীন হয়ে পড়ে। আইনের মূল কথা হচ্ছে সকল নাগরিকের প্রতি সম আচরণ। ‘আইনের চোখে সবাই সমান’- এই আপ্ত বাক্যের কোনো একক অভিব্যক্তি নেই। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সবাই সম অধিকার ভোগ করে কি না, সেটাই বিবেচ্য। জাতীয় নির্বাচনে সবার প্রতি সকল আইন নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না, তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

৩. ​বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ, আপনারা নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে আইনসিদ্ধ করার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। নির্বাচনে অনিয়ম বা বিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আপনারা কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করলে তা নির্বাচনকে ত্রুটিমুক্ত করার বিষয়ে অবদান রাখবে। বিচারকের দৃষ্টি হতে হবে নির্মোহ। তিনি অবশ্যই আইনানুগ মন বা ‘লিগাল মাইন্ডের’ অধিকারী হবেন। যিনি এই অবস্থান থেকে বিচ্যুত হবেন, তিনি বিচারকের যোগ্যতা হারাবেন। আর একটি কথা। শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে আপনাদের সর্বোচ্চ সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন ভুয়া সাক্ষ্য প্রমাণে শাস্তি না পায়।

৪. ​এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক সর্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন করতে চাই। এ জন্য কেবল দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসী এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মনে করি, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসের এক সোনালী অধ্যায় রচনা করবে। সেই সোনালী অধ্যায়ের রূপদানকারী আপনারা। আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করা। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আপনারা এক মহান দায়িত্ব নিয়েছেন। নির্বাচনের শুদ্ধতায় আপনাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে।

৫. ​বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ, আমি আগেও বলেছি, আপনাদের কাছে চাওয়া খুব সামান্য। একজন ভোটার নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ইচ্ছানুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিয়ে যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, এটুকুই তো চাওয়া। রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই সামান্য চাওয়া বাস্তবায়িত করতে এক বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় ১২ লক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারী নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।

৬. ​আগামী একাদশ জাতীয় সংসদের একটি স্বপ্ন রয়েছে। কোনো প্রার্থী যেন ভোটের মাধ্যমে নিজের উপযুক্ততা প্রমাণ না করে সংসদের পবিত্র আসনে বসতে না পারে, তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কালো টাকা ও পেশীশক্তির সুযোগ নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সংসদে কেউ যেন না যায় তার জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এজন্যই সমগ্র জাতির প্রত্যাশা একটি পরিচ্ছন্ন সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচন আর সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচন মানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।

৭. ​প্রিয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, আপনারা নির্ভয়ে সাহসিকতার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। আমি আগেই বলেছি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি এ বিষয়ে শিথিলতা দেখান বা পক্ষপাতিত্ব করেন তাহলে ১৯৯১ সালের আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে একটি শুদ্ধ ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago