হোপকে আশাহত করে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

Bangladesh Team
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সব ঝামেলার মূলে যেন ছিলেন ওই রুবেল হোসেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মেহেদী হাসান মিরাজের বন্ধকী সম্পত্তিতে হানা দিয়েছিলেন। শিমরন হেটমায়ারের উইকেটটা নিয়ে চলতি সিরিজে টানা ষষ্ঠবার পেতে দেননি মিরাজকে। তাতেই হয়তো ম্যাচের ফলাফল হয়েছিল ভিন্ন। পরের ম্যাচেই আবার নিজের বন্ধকী সম্পত্তিটা ফিরে পেলেন মিরাজ। আর বাংলাদেশও ফিরলো জয়ে।

আগের ম্যাচে একাই টাইগারদের হারিয়ে দেওয়া শাই হোপ এদিনও এক প্রান্তে বুক চিতিয়ে লড়াই করলেন। পার্থক্য আজ আর দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি। কারণ অপর প্রান্তে যে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারলেন না কেউ। তার উপর এদিন ইনিংসের শুরু থেকে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন মিরাজ। করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। তার ঘূর্ণিতে অনুপ্রেরণা পেয়ে বাকীদের বোলিং ফিগারও মন্দ নয়। ফলে একশ রানের আগেই টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। আর দুইশ রানের আগে ইনিংস শেষ।

এক প্রান্তে ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলে দলের উদ্ধারকাজে ব্যস্ত ছিলেন হোপ। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করে নিজে পেলেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। সফরকারীরা সাদামাটা সংগ্রহ পেলেও স্বপ্নটা উজ্জ্বল হয়েছিল তার এই সেঞ্চুরিতেই। কারণ তার আগের তিন সেঞ্চুরির কোন ম্যাচেই হার দেখতে হয়নি দলকে। দুটি টাই, একটি জয়। কিন্তু এদিন এমন লড়াইয়ের পরও হারের তেতো স্বাদটা পেতে হলো তাকে সতীর্থদের ব্যর্থতায়।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে থেকে দৃষ্টি ছড়ালেই সবুজ আর সবুজ। পাহাড়টিলায় নয়নাভিরাম চা বাগানের সবুজের সমারোহের মাঝে এই স্টেডিয়ামটি যেন এক টুকরো স্বর্গোদ্যান। আর এ উদ্যানে ক্রিকেটের দীর্ঘতম ও সংক্ষিপ্ততম দুই সংস্করণেই অভিষেক হয়ে গেছে আগেই। বাকি ছিল ওয়ানডে। আর এর জন্য এ স্টেডিয়াম যেন অপেক্ষা করছিল এ সংস্করণের প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জন্য। তাদের হারিয়ে যাত্রা শুরু মানে নিঃসন্দেহে দারুণ ব্যাপার। আর ২০০তম আন্তর্জাতিক ভেন্যুর অভিষেকটা জয় দিয়েই রাঙিয়ে রাখল মাশরাফিবাহিনী।

ডিসেম্বরের এ সময়টায় ঘরের মাঠে বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে শিশির। আর সিলেটে এ সম্ভাবনাটা আরও বেশি থাকে বলেই ম্যাচ এগিয়ে আনা হয়েছিল এক ঘণ্টা। তবে টাইগারদের সে দুশ্চিন্তা কেটেছে টসের মাধ্যমেই। আগের দুই ম্যাচে হারলেও সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ঠিকই জিতে নিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বোলারদের কল্যাণে উইন্ডিজকে থামানোও গেল ১৯৮ রানে।

১৯৮ রানের ১০৮ রানই হোপের। বাকি সবাই মিলে ৯০ রান। এর মধ্যে আবার মিস্টার এক্সট্রার খাতা থেকে এসেছে ১৬ রান। মূলত ১৭৯টি ডট বলই ডুবিয়েছে ক্যারিবিয়ানদের। স্ট্রাইক রোটেট না করে উচ্চবিলাসী শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিসর্জন দিয়েছেন প্রায় সবাই। তবে সতীর্থদের মধ্যবিত্ত ধাঁচের ব্যাটিংয়ের পরও উইন্ডিজের ইনিংসটা ভদ্রগোছের দেখাল ওই হোপের ব্যাটেই।

আর ১৯৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শেষ পর্যন্ত দেখে শুনে খেলতে পারলেই হয়। তা উইকেট যতো কঠিনই হোক। আর শুরুটাও মন্দ নয়। তার উপর তিন ওভার বল করে ক্যারিবিয়ানদের সেরা পেসার কেমার রোচ পড়লেন হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে। তবে উইন্ডিজ ইনিংসের প্রতিবিম্ব এঁকেই যেন প্রথম উইকেটটা টাইগাররাও হারাল ৪৫ রানে। তবে এরপরেই পার্থক্য গড়তে ব্যস্ত হন সৌম্য সরকার। অগ্রযোদ্ধা তামিম ইকবাল তো ছিলেনই। দ্বিতীয় উইকেটে গড়লেন ১৩১ রানের জুটি। এরপর যখন সৌম্য আউট হলেন ততক্ষণে স্বাগতিকদের জয়গান শুরু হয়ে গেছে। বাকি কাজটা মুশফিকুর রহীমকে নিয়েই সেরে ফেলেন তামিম।

৮০ রানের ঝলমলে ইনিংসে সৌম্য মেরেছেন সমান ৫টি করে চার ও ছক্কা। তবে ফিনিশিংটা করে আসতে পারেননি। তিনি না পারলেও পেরেছেন তামিম। জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন এ ওপেনার। হার না মানা ৮১ রানের অপরূপ ইনিংস খেলেন তিনি। ফলে ৬৯ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বড় জয়েই সিরিজ নিশ্চিত করে টাইগাররা।

সিলেটের অভিষেকের দিনে হয়তো হলো টাইগার অধিনায়কের সারা। কারণ বিশ্বকাপের আগে দেশের মাটিতে আর কোন ম্যাচ নেই বাংলাদেশের। ঘরের মাঠে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা কি আর খালি হাতে যাওয়া যায়? বল হাতে প্রথম সাত ওভার উইকেটশূন্য ছিলেন মাশরাফি। তৃতীয় স্পেলে বল করতে এসে অতিথিদের লেজ ছেঁটে টানা দুই ওভারে পেলেন কিমো পল ও কেমার রোচের উইকেট। তাতে স্পেল দেখালো দারুণ। ৯-১-৩৪-২। তবে বল হাতে সব আলো কেড়েছেন মিরাজই। মাত্র ২৯ রানেই পেয়েছেন উইন্ডিজ টপ অর্ডারের ৪টি উইকেট। আর তাতেই মিলেছে তার ম্যাচসেরার পুরষ্কার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

উইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ১৯৮/৯ (হেমরাজ ৯, হোপ ১০৮*, ব্রাভো ১০, স্যামুয়েলস ১৯, হেটমায়ার ০, পাওয়েল ১, চেজ ৮, অ্যালেন ৬, পল ১২, রোচ ৩, বিশু ৬*; মোস্তাফিজ ০/৩৩, মিরাজ ৪/২৯, সাকিব ২/৪০, মাশরাফি ২/৩৪, সাইফউদ্দিন ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ ০/১৪)।

বাংলাদেশ: ৩৮.৩ ওভারে ২০২/২ (তামিম ৮১*, লিটন ২৩, সৌম্য ৮০, মুশফিক ১৬*; রোচ ০/১৬, চেজ ০/৩২, পল ২/৩৮, স্যামুয়েলস ০/২২, বিশু ০/৪৮, অ্যালেন ০/২২, পাওয়েল ০/২১)।

ফলাফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ।

ম্যান অব দ্য সিরিজ: শাই হোপ।

Comments

The Daily Star  | English
free 1gb data for all users

BTRC directs telcos to provide 1GB free internet on July 18

Mobile phone operators have been instructed to notify users in advance via SMS

1h ago