টি-টোয়েন্টিতে নেমে উইন্ডিজের কাছে স্রেফ উড়ে গেল বাংলাদেশ

টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজ জিতে তেতে থাকা বাংলাদেশকে নিয়ে টি-টোয়েন্টিও ছিল বড় প্রত্যাশা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে তার এক আনাও মেটাতে পারেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের একার লড়াইয়ে ছোট পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। রান তাড়ায় সেটা তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দিয়েছেন শেই হোপ, নিকোলাস পুরান, কেমো পলরা। সিলেটে দুপুরের আকাশও ছিল মেঘে ঢাকা অন্ধকার। সেই অন্ধকার আরও বেড়েছে বাংলাদেশের খেলার ধরণে। উৎসবের রঙ মাখতে প্রস্তুত থাকা ভরপুর গ্যালারি বাংলাদেশের একপেশে হারে হয়েছে মলিন।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

টেস্ট আর ওয়ানডে সিরিজ জিতে তেতে থাকা বাংলাদেশকে নিয়ে টি-টোয়েন্টিও ছিল বড় প্রত্যাশা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে তার এক আনাও মেটাতে পারেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের একার লড়াইয়ে ছোট পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। রান তাড়ায় সেটা তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দিয়েছেন শেই হোপ, নিকোলাস পুরান, কেমো পলরা। সিলেটে দুপুরের আকাশও ছিল মেঘে ঢাকা অন্ধকার। সেই অন্ধকার আরও বেড়েছে বাংলাদেশের খেলার ধরণে। উৎসবের রঙ মাখতে প্রস্তুত থাকা ভরপুর গ্যালারি বাংলাদেশের একপেশে হারে হয়েছে মলিন।

সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে উইন্ডিজের কাছে রীতিমতো গুড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের করা ১২৯ রান  ৫৫ বল আর ৮ উইকেট হাতে রেখে পেরিয়ে যায় উইন্ডিজ।

২৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শেলডোন কটরেল বোলিংয়ে  বাংলাদেশকে ধরাশায়ী করার পর হোপদের তাণ্ডবই পুরো ম্যাচেই হাইলাইটস।

এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল সফরকারীরা। বাংলাদেশে এসে টেস্ট ও ওয়ানডেতে হারার পর টি-টোয়েণ্টি সিরিজে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিল ক্যারিবিয়ানরা।

১৩০ রানের মামুলি লক্ষ্যে দেওয়ার পর ইনিংস বিরতিতেই ম্যাচের গতিপথ প্রায় নির্ধারিত। তবে সেটা ক্যারিবিয়ানরা এত ছোট বানিয়ে ফেলবেন তখনো ভাবা যায়নি। রান তাড়ায়  নেমেই তাণ্ডব শুরু করেন শেই হোপ আর এভিন লুইস। মেহেদী হাসান মিরাজের দ্বিতীয় ওভারেই তিন ছক্কায় হোপ তুলেন ২৩ রান। পেটাতে শুরু করেছিলেন লুইসও। চতুর্থ ওভারে বল করতে এসে তাকে থামান সাইফুদ্দিন। কিন্তু থামেনি তরতরিয়ে বাড়তে থাকা রানের চাকা। 

হোপের সঙ্গে যোগ দেওয়া নিকোলাস পুরান চালাতে থাকেন ব্যাট। চলতে থাকে ঝড়। ৩ ওভার ১ বলেই উইন্ডিজ পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। পাওয়ার প্লের প্রথম ছয় ওভারেই ৯১। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে সর্বোচ্চ রান তোলার বিশ্বরেকর্ডেও ভাগ বসায় উইন্ডিজ। এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে এই মাঠেই পাওয়ার প্লেতে ৯১ রান করেছিল নেদারল্যান্ড। পাওয়ার প্লেতে ৯১ রান তোলার নজির আছেন অস্ট্রেলিয়া আর আয়ারল্যান্ডেরও।

২৩ বলে ৩ চার আর ৬ ছক্কায় ৫৫ করে যখন মাহমুদউল্লাহর শিকার হয়ে হোপ ফিরছেন তখনই তাদের জেতার কাজ প্রায় সারা। পুরানের সঙ্গে মিলে কেমো পল ৩ ছক্কায় দ্রুত কাজ সেরেছেন। সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া ম্যাচ তিনটা বাজতেই খেল খতম।

এর আগে বাংলাদেশের ইনিংসকে একা টেনেছেন অধিনায়ক সাকিব। আরেক প্রান্তে আসা-যাওয়ার মিছিলের মধ্যে আলোর ঝলকানি ছিল কেবল তার ব্যাটে। পুরো ইনিংসের বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দেখা গেছে পরিকল্পনাহীনতার ছাপ। বলের গতি না পড়ে প্রায় প্রতিবলেই একইভাবে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়েছেন তারা। ফলও তারা পেয়েছেন হাতেনাতে।

সিলেটের মেঘাচ্ছন্ন আকাশে টস জিতে ব্যাট করতে নেমেই তাই বিপদে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। উইন্ডিজ পেসারদের গতি বুঝতে গড়বড় করে মুহূর্তেই গুড়িয়ে যায় টপ অর্ডার।

প্রথম ওভারেই মিড অফে ক্যাচ দিয়ে বেঁচেছিলেন তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় ওভারেই থামান দৌড়। শেল্ডন কটরেলের বাউন্সারে পুল করতে গিয়েছিলেন। টাইমিংয়ে গড়বড় হয়ে ক্যাচ যায় মিড অফেই। পরের ওভারেই ওশান টমাসকে বেরিয়ে এসে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে টাইমিং করতে পারেননি লিটন দাস। তার ক্যাচও মিড অফে। পরের ওভারে আবার একই দৃশ্য। এবার কর্টরেলের শিকার সৌম্য সরকার। টপ এজ হয়ে তার ক্যাচ গেছে মিডউইকেটে।

চারে নেমে সাকিব আল হাসানও ঝুঁকি নিয়েই খেলছিলেন। পালটা আক্রমণ করে বাড়াচ্ছিলেন রান। এর ফাঁকে মুশফিকুর রহিম এসে রান আউটে কাটা পড়ে ফেরত যান। মাহমুদউল্লাহ নেমে খানিকক্ষণ সঙ্গ দিয়েছিলেন। কটরেলের আউটসুয়িংয়ে তিনিও লড়াই থামলে ইনিংসের মাঝপথেই অর্ধেক ব্যাটসম্যান খুইয়ে বসে বাংলাদেশ।

এরপর আরিফুল হকের সঙ্গেও সাকিবের আরেকটি মাঝারি জুটি। জুটিতে আরিফুলের অবদানই বেশি। হাতখুলেই মারতে গিয়েই কাটা পড়েন এই অলরাউন্ডার। ফ্যাবিয়েন অ্যালানকে স্লগ সুইপে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন, বাউন্ডারি লাইনেই গিয়ে সে বল জমা পড়েছে পুরানের হাতে।

সাইফুদ্দিন উঠে টিকেছেন কেবল ২ বল। ব্র্যাথওয়েটকে মারতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ উঠিয়েছেন ঐ পুরানের হাতেই। দলের সংগ্রহ একটু জুতসই জায়গায় নিতে পারতেন সাকিব। ছক্কা মেরে ফিফটি পেরুনোর পর বাংলাদেশ অধিনায়ক এগুচ্ছিল্লেন সে পথেই। তবে ওই রান বাড়ানোর তাড়ায় ফেরেন তিনিও।

সাকিবকে ফিরিয়ে চতুর্থ উইকেট নেন কটরেল। বাংলাদেশের ইনিংসের মূল হন্তারক তিনিই। তবে বাজে শটের মহড়ায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা হন্তারক ভাবতে পারেন নিজেদের ভুল চিন্তাকেও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ১৮.৫ ওভারে ১২৯ (তামিম ৫, লিটন ৬, সৌম্য ৫, সাকিব ৬১, মুশফিক ৫, মাহমুদউল্লাহ ১২,  আরিফুল ১৭, সাইফুদ্দিন ১, মিরাজ ৮ , রনি ১* , মোস্তাফিজ ০ ; টমাস ১/৩৩, কোটরেল ৪/২৮, পল ২/২৩, ব্র্যাথওয়েট ১/১৩, অ্যালেন ১/১৯,  পাওয়েল ০/৭)

উইন্ডিজ: ১০.৫ ওভারে ১৩০/২  (লুইস ১৮, হোপ ৫৫,  পুরান ২৩*, পল ২৯* ; সাকিব ০/৩৩, মিরাজ ০/৩৭,  রনি ০/১৫,  সাইফুদ্দিন ১/১৩, মোস্তাফিজ ০/১৫, মাহমুদউল্লাহ ১/১৩ )

ফল: উইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী।

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka getting hotter

Dhaka is now one of the fastest-warming cities in the world, as it has seen a staggering 97 percent rise in the number of days with temperature above 35 degrees Celsius over the last three decades.

9h ago