ঋণের শর্তে বন্দী কেনিয়ার মোম্বাসা বন্দর যাচ্ছে চীনের হাতে!

চীনের কাছ থেকে শর্তযুক্ত ঋণ নিয়ে সমূহ বিপদের আশঙ্কায় রয়েছে কেনিয়ার মোম্বাসা বন্দর। সময়মত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রাচীন এই বন্দরটি চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। কেনিয়ার মহাহিসাব নিরীক্ষকের দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর বেরিয়েছে।
বেইজিংয়ে এক অনুষ্ঠানে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনইয়াত্তার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ছবি: এএফপি

চীনের কাছ থেকে শর্তযুক্ত ঋণ নিয়ে সমূহ বিপদের আশঙ্কায় রয়েছে কেনিয়ার মোম্বাসা বন্দর। সময়মত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রাচীন এই বন্দরটি চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। কেনিয়ার মহাহিসাব নিরীক্ষকের দপ্তর থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর বেরিয়েছে।

বিদেশি ঋণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নতির কথা প্রচার করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব ঋণের শর্তের কথা প্রকাশ করা হয় না। এমনকি ঋণ গ্রহীতা দেশের পার্লামেন্টেও ঋণের শর্ত নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয় না। ফলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে শর্তের কোন খাঁড়া নেমে আসবে সে সম্পর্কে অন্ধকারেই থাকে জনগণ।

ভারত মহাসাগরের তীরের মোম্বাসা বন্দর থেকে রাজধানী নাইরোবি পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ করতে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সিম ব্যাংক থেকে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছিল কেনিয়া। কিন্তু কোন শর্তে এই ঋণ নেওয়া হচ্ছে সেটি গোপন রেখেছিল সরকার। তবে খুব বেশিদিন এই ঋণের শর্তের কথা গোপন রাখতে পারেনি তারা।

সম্প্রতি কেনিয়ারই একটি গণমাধ্যমে ঋণের জটিল শর্তের কথা ফাঁস হয়ে যায়। খবরে জানানো হয়, রেলওয়ের জন্য ঋণ নেওয়া হলেও বন্ধক হিসেবে রাখা হয় মোম্বাসা বন্দর। এবার সরকারিভাবেই এই শর্তের কথা স্বীকার করে নেওয়া হলো।

ঋণের শর্তে বলা হয়, সময়মত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে মোম্বাসা বন্দরের ওপর কেনিয়া তার সার্বভৌমত্ব হারাবে।

মোম্বাসা থেকে নাইরোবি পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেললাইন নির্মাণ করতে যে বিপুল অংকের ঋণ কেনিয়া নিয়েছে তাতে আরও শর্ত রয়েছে যে এই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করবে চায়না রোডস এন্ড ব্রিজেস করপোরেশন। এই কোম্পানিটি চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানির অংশ।

কেনিয়ার মোম্বাসা বন্দর। এক হাজার বছরেরও বেশি পুরনো এই বন্দরটিকে বন্ধক রেখে চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে কেনিয়া। ছবি: এএফপি

সেই সঙ্গে আরও শর্ত রয়েছে যে ঋণ নিয়ে বিরোধ তৈরি হলে কেনিয়ার কোনো আদালত তার সুরাহা করতে পারবে না। এর জন্য চীনের আদালতে যেতে হবে দুপক্ষকেই। কেনিয়ার মহাহিসাব নিরীক্ষক এসব গোপন শর্তের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন যে এসবের কিছুই তারা জানতেন না। এমনকি বন্দর কর্তৃপক্ষের আর্থিক প্রতিবেদনেও বন্ধকের বিষয়টি চেপে যাওয়া হয়েছিল।

এরকম ঋণে জালে বন্দী হয়ে ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা হাম্বানটোটা বন্দরকে ১০০ বছরের জন্য চীনের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। একে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে তখন কূটনৈতিক টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। চীনের নিয়ন্ত্রণে যাওয়া এই বন্দরটি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে মাত্র ১০০ মাইল দূরে। এই বন্দরের আশপাশে ইতিমধ্যে চীনের ডুবোজাহাজ আনাগোনা শুরু করেছে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়নের উপস্থিতি যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ তৈরি করেছিল, শ্রীলঙ্কার বন্দরের নিয়ন্ত্রণ চীনের হতে চলে যাওয়াকেও সেভাবেই দেখছেন ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

ভারতের অভিযোগ মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতোই আফ্রিকার দেশগুলোতে চীন তার ঋণের জাল বিস্তার করছে। এর মাধ্যমে দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে বলেও বলছে ভারত।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago