বাবার হত্যা মামলার আসামি ছেলের প্রচারণায়
শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বাবার আসনে এবার নির্বাচন করছেন ছেলে রেজা কিবরিয়া। পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় বদলে গেছে অনেক কিছু।
বাবার প্রতীক ছিল নৌকা, ছেলের প্রতীক ধানের শীষ। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ শহরের বিভিন্নস্থানে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়ার পক্ষে গণসংযোগ করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
গতকাল (২১ ডিসেম্বর) বিকালে নবীগঞ্জ শহরে গণসংযোগ করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া, বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম ইয়াছিনী, ছাত্রদলনেতা শেখ শিপন প্রমুখ।
গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নবীগঞ্জে অবস্থান করে ওসমানী রোড, শেরপুর রোড, হাসপাতালে রোডসহ বিভিন্ন স্থানে রেজা কিবরিয়ার ধানের শীষের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। এসময় এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ সুজাত মিয়াসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ড. রেজা কিবরিয়া মোবাইল ফোনে বলেন, “উনি উনার মতো প্রচারণা করছেন। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
আরিফুল হক চৌধুরী এই সংবাদদাতাকে বলেন, “রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করার জন্যে আমাকে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করেছে।”
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমদাদুর রহমান মুকুল এবং বাহুবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুন নুর মানিকের মন্তব্য- মাঠের সঙ্গে যাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং যাদের চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাব রয়েছে তাদের দ্বারাই সম্ভব আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া।
রেজা কিবরিয়া এক সময় বিএনপি’র মালিকানাধীন ব্যবসা থেকে কেনাকাটা না করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এখন তিনি ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তার কাছে বাবা হত্যাকারীদের শাস্তির চেয়েও বড় বিষয় সংসদ সদস্য হওয়া, যোগ করেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদ্বয়।
তারা মনে করেন, ক্ষমতার লোভ রেজা কিবরিয়াকে অন্ধ করেছে। এক সময় ঠিকই তার শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং এই কর্মের জন্য তিনি পরে অনুশোচনায় ভুগবেন।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের ঈদ-পরবর্তী জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলীও এতে নিহত হন।
বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি গুরুতর আহত হন। এছাড়াও আহত হন প্রায় ৭০ জন। এখনও তারা আঘাতের যন্ত্রণা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘটনার পরদিন আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন।
পরে মামলা দুটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী মজিদ খান। পরে ২০০৭ সালে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য ফের সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেরুন্নেসা পারুল সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, মাওলানা তাজউদ্দিনের ভগ্নীপতি হাফেজ মো. ইয়াহিয়াসহ আবু বকর, দেলোয়ার হোসেন, শেখ ফরিদ, আবদুল জলিল ও মাওলানা শেখ আবদুস সালামকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
এর আগে ২০০৫ সালের ১৮ মার্চ প্রথম দফায় ১০ জনের বিরুদ্ধে ও দ্বিতীয় দফায় ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা ১৬ জন থেকে বাড়িয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে দুজন ভারতে মারা গেছেন। আর তৃতীয় দফায় এ মামলায় আসামির সংখ্যা আরও নয়জন বাড়িয়ে মোট ৩৫ জন করা হয়।
শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলা পরিচালনা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না রেজা কিবরিয়াসহ তার পরিবার। দোষীদের শাস্তির চেয়ে রাজনৈতিক সুবিধার দিকটি সরকারের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে করেন রেজা কিবরিয়া।
Comments