ইসির কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে:ফায়েজ, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হবে:আখতারুজ্জামান
রাত পেরিয়ে ভোর হতেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়েই চলছে জোর জল্পনা-কল্পনা। নির্বাচনে প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও, তাদের জন্য “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড” তৈরির বিষয়টি শেষপর্যন্ত ধোঁয়াশা হয়েই থেকে গেল।
এ বিষয়গুলো নিয়ে আজ (২৯ ডিসেম্বর) দ্য ডেইল স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ এবং বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, “কালকের দিনটার জন্যই সবাই অপেক্ষা করছে। কাল কতটুকু নিরাপত্তার সঙ্গে, কতটুকু স্বাধীনভাবে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। জনগণ সেটির দিকেই তাকিয়ে আছে। প্রত্যাশা করছি যে নির্বাচন সুন্দর হবে।”
ইসি শেষ পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পেরেছে কি? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ইসির ব্যাপারে সাধারণ অনুধাবন হলো- ইসির কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষের মনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আছে। এখন যেটি শেষ সেটিই সবকিছু। শেষটা যদি সত্যিকার সেন্সে তারা প্রমাণ করতে পারে। আজকেও পত্রিকায় দেখলাম, তারা বলছে, তাদের যে মেন্টালিটি, তারা আশা করছে তা কালকে প্রমাণিত হবে। আর কিছুই থাকুক না কেন, কালকে তাদের যে ভূমিকা, সেই ভূমিকার ওপর সবকিছু নির্ভর করবে।”
নির্বাচনের আগের দিনও দলীয় নেতা-কর্মী বা সম্ভাব্য এজেন্টদের গ্রেপ্তারে করছে পুলিশ, বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক এই উপাচার্য বলেন, “আমি অবাক হই যে, এখন পর্যন্ত প্রচুর লোক গ্রেপ্তার হচ্ছে। এই যে এতো গ্রেপ্তার হচ্ছে চারদিকে, অনেকের বিরুদ্ধে হয়তো মামলা আছে কিন্তু গ্রেপ্তার হওয়াটা নির্বাচন কমিশন কীভাবে দেখছে। অনেক জায়গা থেকে অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছে, তা কতটুকু রাজনৈতিক বা কতটুকু আইনশৃঙ্খলার কারণে, নিশ্চিতভাবে এখানেও মানুষের মনে সন্দেহ আছে। মানুষের মনে যে প্রশ্নগুলো আসছে, এই প্রশ্নগুলো কতটুকু দূর হয়, সেটি দেখার জন্য আমাদের কালকের দিন (রোববার) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
নির্বিঘ্ন নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আদৌ থাকছে কি? এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এস এম এ ফায়েজ বলেন, “নির্বাচন নির্বিঘ্ন হবে কি না, এ নিয়ে জনমনে অনেক সন্দেহ কাজ করছে। তারপরও অবশ্যই আশা আছে যে, দিন শেষে ভালো কিছু হবে। দেশের ভবিষ্যৎকে সামনে রেখে যদি চিন্তা করি, এই নির্বাচন যে কালকেই শেষ হচ্ছে, সেটি আমার কাছে মনে হয় না। এর প্রভাব ও মানুষের মনে প্রশ্নগুলো রয়ে যাবে। এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোসহ ইসিকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।”
নির্বাচনের আগে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “এখন পর্যন্ত তো ভালোই মনে হচ্ছে। শুরুতে একটা খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছিলো। যা হলো- বিভিন্ন জায়গায় সরকার দলীয় লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বড় আকারের একটি বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করার একটা অপপ্রয়াস নেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেটি দীর্ঘায়িত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুব দ্রুত সেটি থামাতে পেরেছে। ফলশ্রুতিতে এর পরবর্তী ধাপগুলো ভালোর দিকেই যাচ্ছে।”
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হওয়া নিয়ে উপাচার্য বলেন, “এখন তো মনে হয় যে একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। কেননা অনেকগুলো অপশক্তির উত্থানের কতগুলো অপপ্রয়াস ছিলো। সেগুলোও নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নস্যাৎ করে দিয়েছে। ইসির তরফ থেকে যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিলো, এখন পর্যন্ত টেলিভিশনে যে রিপোর্ট দেখলাম, সেগুলো তো খুব সন্তোষজনক। ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিরাপদে পাঠানো, যথাযথ লোকদের নিয়োগ দেওয়া, সেই কাজগুলো তো ইসি ঠিকভাবেই করেছে।”
ভোটকেন্দ্রে বিরোধী প্রার্থীদের প্রতিনিধিশূন্য করতেই তাদের সম্ভাব্য এজেন্টদের আটক করছে পুলিশ, এমন অভিযোগের ব্যাপারে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “টেলিভিশন এবং খবরের কাগজে দেখলাম, বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র ও জাল টাকা ও ডিজিটাল জালিয়াতকারীসহ অনেক অপশক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়াও অনেক জায়গায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এবং তাদের প্রস্তুত হওয়ার জন্য অনেকে নির্দেশ দিচ্ছেলো, এ ধরনের কিছু অপতৎপরতা চলছিলো, পুলিশ তাদেরই গ্রেপ্তার করেছে। অন্যথায় তো পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যেতো।”
নির্বিঘ্ন নির্বাচনের আশা ব্যক্ত করে আখতারুজ্জামান বলেন, “এখন পর্যন্ত যা দেখছি- তাতে বিভিন্ন দুষ্টচক্রকে যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়, তাহলে তো আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হবে।”
Comments