স্রোতের প্রতিকূলের যাত্রী, রাজনীতির শুদ্ধপুরুষ
ইমেজ সঙ্কটে থাকা বাংলাদেশের রাজনীতির ‘উজ্জ্বলতম নক্ষত্র’ তিনি। সততা, নম্রতা, সরলতা তাকে দেশের রাজনীতিতে একটি মহীরুহে পরিণত করেছে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা যা তাকে সর্বজন শ্রদ্ধেয় করে তুলেছিলো। এমন চিত্র বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে বিরলই বটে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক রাজনীতিতে। তিনি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সমধিক পরিচিত সৈয়দ আশরাফ হিসেবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতরাত (৩ জানুয়ারি) পৌনে ১০টার দিকে সৈয়দ আশরাফ মারা গিয়েছেন।
দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকা অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন সৈয়দ আশরাফের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-হাহাকারের চিত্র। কেউ কেউ তাকে অভিহিত করেছেন ‘রাজনীতির শুদ্ধপুরুষ’ হিসেবে। বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে জানিয়েছেন ‘বিদায়’।
বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের যে চিত্র সাধারণত তৈরি হয়েছে তাতে দেখা যায় তাদেরকে নিয়ে ভালো বা শ্রদ্ধা জাগানিয়া বোধ দিনে দিনে অনেক কমে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে যাদেরকে দেখা যাচ্ছে তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। কোনো বিশেষ দলের নয়, অধিকাংশ রাজনীতিবিদরাই আজ রয়েছেন এক ধরণের ইমেজ সঙ্কটে।
দেশে ১/১১ এর সময় থেকে শুরু করে একটি কঠিন সময়ে সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি। রাজনীতির কঠিন সময়ে স্রোতের প্রতিকূলের যাত্রী ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। আপোষ, লোভ, অসততা-অনৈতিকতা থেকে বহুদূরে অবস্থান করেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি এক কন্যাসহ বহু আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী এবং নেতা-কর্মী রেখে গেছেন।
সৈয়দ আশরাফ দীর্ঘ দিন ধরে ফুসফুসে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। চিকিৎসার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৫২ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ নেওয়া সৈয়দ আশরাফের পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এছাড়াও, সৈয়দ নজরুল ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্যতম সংগঠক।
সৈয়দ আশরাফ ছাত্র জীবনে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি ময়মনসিংহ জেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শোক বার্তায় বলেন, সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। জনগণ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তার অবদানের কথা চিরকাল স্মরণ করবে।
সৈয়দ আশরাফের মরদেহ আগামীকাল (৫ জানুয়ারি) দেশে আনা হবে।
Comments