শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু: অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীকের মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীনকে প্রধান করে মঙ্গলবার এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর মো. সামিউল ইসলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদ জানান, আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ২টা থেকে বৈঠকে বসেছে তদন্ত কমিটি, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবেন।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেট নগরীর কাজলশাহ এলাকার একটি বাসা থেকে তাইফুরের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাইফুর (২৫) নরসিংদী সদর উপজেলার ব্রাহ্মণদী এলাকার তৌহিদ-উজ-জামানের ছেলে। এই ঘটনার জন্য ইতিমধ্যেই তাইফুরের বিভাগের দিকই আঙ্গুল তুলেছেন তার বড় বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা।
সিলেটের কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক ও এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা আকবর হোসেন ভুইয়া জানান, তাইফুরের বাবা তৌহিদ-উজ-জামান থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে তিনি কাউকে অভিযুক্ত করেননি।
তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিক সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত অনুযায়ী তাইফুর আত্মহত্যা করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং দীর্ঘ হতাশা থেকে এ আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিনটি সম্ভাব্য কারণ নিয়ে অনুসন্ধান করছি, যার মধ্যে তার পড়াশোনা সংক্রান্ত সমস্যা, পারিবারিক এবং প্রেম সংক্রান্ত বিষয় রয়েছে”।
আরও পড়ুন: মেধাবী শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’, পরিবারের অভিযোগ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে
নিহতের বড় বোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা ভাইয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে গতকাল সোমবার এবং আজ মঙ্গলবার একাধিক পোস্ট করেছেন।
একটি পোস্টে তিনি লিখেন, “শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগকে আমি ছাড়বো না, অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ছেলেটাকে বিভিন্ন ইস্যু বানায়ে মাস্টার্সে সুপারভাইজার দেয় নাই। বিভিন্ন কোর্সে নম্বর কম দিয়েছে! আমার ভাইটা টিচার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল এটাই তার অপরাধ... গত ছয়মাস ধরে ডিপার্টমেন্ট তিলেতিলে মেরে ফেলেছে আমার ভাইকে... আমার কলিজার টুকরা কষ্ট সহ্য না পেরে কাল সুইসাইড করেছে…।”
অপর এক পোস্টে তিনি শাবিপ্রবির ওই বিভাগের সাতজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, “তারা যেন কোনোভাবে দেশ ছাড়তে না পারে!” এই সাতজনের মধ্যে একজনকে মূল হোতা হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শামসুল হক প্রধান ফোন ধরেননি। প্রতীকের বোনের পোস্টে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়। সহকারী অধ্যাপক জোবেদা কনক খান বলেন, বিভাগের সকল শিক্ষার্থীই সন্তানের মতো এবং তাদের যে কারো মৃত্যুই শিক্ষক হিসেবে কষ্টদায়ক।
তিনি বলেন, “তাইফুরের সঙ্গে কোন অনিয়ম হয়নি বলেই তিনি জানেন আর তাইফুরের বোন এখন কষ্টের মধ্যে থেকে ফেসবুকে লিখছেন। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই, এ মুহূর্তে কিছু বলাও উচিত না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, বছরখানেক আগে তাইফুরের বোন যোগাযোগ করেছিলেন এবং বিভাগের মধ্যে তার ভাইয়ের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। এ ব্যাপারে আমি তখনই বিভাগকে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার জন্য বলি। এরপর আর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি এবং ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গেও আমার কখনো দেখা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি এবং সকল অভিযোগ গুরুত্বসহকারে দেখছি এবং তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
Comments