বিপিএলে কেন ওরকম ‘ঘুম পাড়ানি’ খেলা?
টি-টোয়েন্টি খেলাটার উৎপত্তিই দর্শকদের বিনোদন প্রাধান্য দিয়ে। সেই বিনোদনে বোলারদের কারিকুরি থাকবে না তা নয়, কিন্তু বড় অংশের মানুষেরই প্রত্যাশা কুড়ি ওভারের খেলায় হবে চার-ছক্কার ঝড়। হাইস্কোরিং টক্করে উত্তেজনা ছড়াবে টানটান। তবেই না পয়সা উশুল। বিপিএলে নেই সেই ধামাকা। গ্যালারিতেও তাই উঠছে না দর্শকদের উথাল পাতাল ঢেউ। কেন বিপিএলে বড় রান নেই তার আলাদা আলাদা কারণ পাচ্ছেন শাহরিয়ার নাফীস, অলক কাপালী, তামিম ইকবালরা।
এবার বিপিএলে ১৬ ম্যাচে এখনো কোন দল দুইশো ছাড়াতে পারেনি। তিন দলকে দেখা গেছে একশোর নিচে গুটিয়ে যেতে। ১২০-১৩০ তাড়া করতে গিয়েও জান জেরবার অবস্থা হচ্ছে। এই পর্যন্ত এসেছে মাত্র ১৩টি ফিফটি। মিরপুরের উইকেট বরাবরই রহস্যময় মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে। বিপিএলের প্রথম দফায় সেখানে খেলা হওয়ায় তাও না হয় কারণ পাওয়া গেল। কিন্তু যে মাঠে এমনিতে রান হয় বলে সুনাম সেই সিলেটেও প্রথম দিন নেই মেলেনি রানের দেখা।
প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইটান্স মাত্র ১২৮ রান করেও রাজশাহী কিংসকে হারিয়েছে ২৫ রানে। পরের ম্যাচে তো আরও করুণ দশা। সিলেট সিক্সার্স মাত্র ৬৮ রানে অলআউট হয়ে হেরেছে ৮ উইকেটে।
দুই ম্যাচেই উইকেট থেকে স্পিনাররা লুটেছেন বাড়তি ফায়দা। বল এসেছে মন্থর গতিতে, টার্ন মিলেছে লোভ জাগানিয়া। এই মাঠের নাড়িনক্ষত্র চেনা অলক কাপালী টি-টোয়েন্টিতে এমন উইকেট দেখে হতাশ, ‘সিলেটে আসার আগেই আলাপ করেছিলাম গত বছর যেমন ফ্ল্যাট উইকেট ছিল, টি-টুয়েন্টির জন্য সেরা উইকেট ছিল। সেভাবে পরিকল্পনা করে আসছি যে এখানকার উইকেটে সুন্দরভাবে ব্যাটে বল আসবে। কিন্তু উইকেট আপ টু দ্য মার্ক না। আমার কাছে একটু সমস্যা (উইকেট) মনে হয়েছে। যেভাবে বল টার্ন করছিল, মনে হয়েছে তিন দিনের ম্যাচ খেলছি।’
সিলেটকে অল্প রানে গুটিয়ে দেওয়া উইকেটে পরে ব্যাট করে শূন্য রানে আউট হন তামিম। এবার গ্রাউন্ডসম্যানদের নয়, উইকেটের এমন দশার কারণ হিসেবে আবহাওয়াকে দায়ি ভাবছেন বাংলাদেশের সেরা ওপেনার, ‘আবহাওয়ার কারণেই এমন হচ্ছে। সাধারণত সিলেটের উইকেট ভালো থাকে। এত শিশির পড়ছে, শীতকালে আমাদের দেশের উইকেট গুলো নরম হয়ে যায়। তখনই স্পিন বেশি করা শুরু করে। আমরা তো অবশ্যই আশা করব যে আরও ভালো উইকেটে খেলা হোক। আমরা অনেক সময় অনেক বেশি দোষারোপ করে ফেলি গ্রাউন্ডসম্যানদের।’
শাহরিয়ার নাফীস এখনো এবার বিপিএলে নামেননি, কিন্তু অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান কাছ থেকেই দেখছেন উইকেটের চরিত্র। তার কাছে মনে হচ্ছে ক’দিন আগেই দুই হোম সিরিজের ফায়দা নিতে তৈরি করা উইকেটই রয়ে গেছে বিপিএলে, ‘আরেকটা জিনিস আমাদের একটু মাথায় রাখা উচিত, আমরা যেহেতু উইকেট নিয়ে বারবার কথা তুলছি। আমরা কিন্তু পরপর দুইটা টেস্ট সিরিজ খেললাম। এবং যেইসব মাঠে খেলা হচ্ছে, এই প্রত্যেকটা মাঠে টেস্ট সিরিজে আমরা হোম কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে উইকেট তৈরি করেছিলাম। সেখান থেকে একদম হঠাৎ করে ১৫-২০ দিনের মধ্যে বিপিএলে উইকেটের চরিত্র বদলে ফেলা একটু কঠিন। আমাদেরকে খেলোয়াড়দের একটু মানিয়ে নিতে হবে।’
মানিয়ে নিতে হবে কিন্তু ফরম্যাটের কারণে সেটা বেশ কঠিন মনে হচ্ছে তামিমের, ‘যারা খেলছে তারা বুঝতে পারছে কি হচ্ছে। এটা মোটেও সহজ নয়। আপনি প্রত্যাশা করবেন না প্রথম ওভারেই বল টার্ন করবে। সাধারণত টি-টুয়েন্টি উইকেট গুলো ফ্ল্যাট হাই স্কোরিং হয়। এটাও ঠিক অ্যাডাপ্ট করা উচিত। কিন্তু ফরম্যাটটাই এমন যে আপনাকে সুযোগ নিতেই হবে।’
তামিম মনে করছেন ১৮০ রানের জায়গায় ১৪০ রান কীভাবে করা যায় সেই চিন্তা করা উচিত সবার। শাহরিয়ার নাফীস আশায় আছেন সময়ের সঙ্গেই ভালো হতে থাকবে উইকেট, ‘ঢাকায় কিছু ম্যাচ হাইস্কোরিং হয়েছে। যেটা বললাম, আমাদের উইকেটগুলো এখনো ফ্রি-ফ্লোয়িং শট পারমিট করছে না। একটু দেরিতে খেলতে হচ্ছে বা বাজে বলের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে ইভেনচুয়ালি, যত দিন যাবে আশা করি উইকেট ভালো হবে।’
Comments