নির্বাচনের সঙ্গে ধর্ষণের সম্পর্ক নেই, কমিশন এ কথা বলেনি: মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান

দেশের মানবাধিকারের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ‘ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে’ ভোটের পরদিন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সংগঠিত ‘গণধর্ষণ’ নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কথা হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের সঙ্গে। গত ১৭ জানুয়ারি নেওয়া তার সেই সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।
Kazi Riajul Haque
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। ছবি: স্টার

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মতামত নয়, তদন্ত কমিটির মতামত”​

কমিশন কখনো বলেনি যে, আমরা এই তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত”​

এটি আসলে কমিশনের প্রতিবেদন না।”​

দেশের মানবাধিকারের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ‘ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে’ ভোটের পরদিন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সংগঠিত ‘গণধর্ষণ’ নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কথা হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের সঙ্গে। গত ১৭ জানুয়ারি নেওয়া তার সেই সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হিসেবে এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

কাজী রিয়াজুল হক: মানবাধিকার ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। সেখানে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকার রয়েছে, রয়েছে রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন। একইভাবে রয়েছে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা। সামগ্রিকভাবে দেশের সার্বিক উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা গেলে আমি মনে করি বাংলাদেশর ভাবমূর্তিটা মোটামুটিভাবে বিশ্বের কাছে অনেকটা ভালো।

তবে রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি দেখেন, তাহলে দেখা যাবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যেটি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন- বিচার বহির্ভূতভাবে অনেক লোক মৃত্যুবরণ করেছে। অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনা আমাদের অন্যান্য অগ্রগতি বা ভাবমূর্তির সঙ্গে যায় না। তাই বলা যায় সবকিছু মিলিয়ে একটি মিশ্র অবস্থানের মধ্যে রয়েছে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি যেমন রয়েছে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার মতে বিতর্কিত ঘটনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: ধর্ষণের সঙ্গে রাজনীতি, প্রশ্নবিদ্ধ মানবাধিকার কমিশন

ডেইলি স্টার: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে ও পরে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোকে আপনারা কীভাবে দেখেছেন?

কাজী রিয়াজুল হক: দেখুন, নির্বাচনের সময় পুরো প্রশাসন থাকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে। সেখানে আমরা চেষ্টা করেছি নির্বাচনের সময়ে যাতে প্রতিটি মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তার ভোট দিতে পারে। সেটা নিশ্চিত করতে আমরা কিছু সচেতনতামূলক কর্মসূচি বিভিন্ন জেলায় পালন করেছি। আসলে আমরা তো কোনো কিছু ইমপ্লিমেন্ট করি না, আমরা ফেসিলিটেট করি। যথাযথ জায়গায় বার্তাটি পৌঁছে দেওয়াটা আমাদের দায়িত্ব। যারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন। আমরা নির্বাচনের আগের দিন, নির্বাচনের দিন এবং এর পরের দিন মিলিয়ে ৬০ ঘণ্টার একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষও খুলেছিলাম। আমাদের একটি হটলাইন রয়েছে। আমরা ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিলাম নির্বাচনের সময় কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদেরকে জানিয়ে দিতে। আমরা সেখানে বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছিলাম। কিছু অভিযোগ ছিলো গুরুতর- যেমন অস্ত্রপাতি নিয়ে বাড়িতে আক্রমণ, ভোট কেন্দ্রে আসতে দিচ্ছে না। কিছু অভিযোগ ছিলো যে- আমরা ভোট দিতে যেতে সাহস পাচ্ছি না। ভয় দেখানো হচ্ছে। এসব কিছু অভিযোগ ছিলো সুনির্দিষ্ট। আমাদের কাছে নির্দেশ ছিলো সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো নির্বাচন কমিশনের সচিব এবং সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো। সেই মোতাবেক আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় ৪ সন্তানের মাকে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের গণধর্ষণ’​

ডেইলি স্টার: আপনারা তো স্বপ্রণোদিত হয়ে কাজ করতে পারেন।

কাজী রিয়াজুল হক: জ্বী।

ডেইলি স্টার: তাহলে স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচনের সময় কী কাজ করেছেন?

কাজী রিয়াজুল হক: শুধু নির্বাচনের সময় নয় স্বপ্রণোদিত হয়ে আমরা সবসময়ই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আমলে নেই। আমরা মূলত গণমাধ্যম থেকে এগুলো জানতে পারি। আর কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে তো কথাই নেই।

আপনাকে মনে রাখতে হবে পৃথিবীর সব দেশেই প্রত্যেকটি কাজের জন্যে একেকটি নির্দিষ্ট সংস্থা রয়েছে। যেমন, কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে পুলিশ বা আদালত রয়েছে, হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়া গেলে তার জন্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় রয়েছে।

যেখানে দেখি যে গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে সেখানে আমরা ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত করি। এর মাধ্যমে তাদের ওপর চাপ রাখা হয়। তাদেরকে বলা হয় যে আমরা গিয়েছিলাম, এইটুকুন দেখে এসেছি। এখন আপনারা বিস্তারিত তদন্ত করে আপনাদের নিয়ম মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন।

আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে ‘গণধর্ষণ’: ‘নির্দেশদাতাকে’ বাদ দিয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা​

ডেইলি স্টার: তদন্তের বিষয় যেহেতু আসলো তাহলে বলি- নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটলো। ‘ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় ৪ সন্তানের মাকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের গণধর্ষণ’ শিরোনামে ডেইলি স্টার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। আপনারাও বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করেছেন।

কাজী রিয়াজুল হক: গত ১ জানুয়ারি আপনাদের প্রতিবেদনটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি কমিশনের পরিচালককে (অভিযোগ ও তদন্ত) লিখলাম- অভিযোগটি গুরুতর, আমলে নিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন। ব্যবস্থা নেন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে।

ঘটনাটি উল্লেখ করে তা তদন্তের জন্যে একটি তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে দেই। তারা পরদিনই নোয়াখালীতে চলে যায়। তারা সেখানে গিয়ে ঘটনার শিকার নারী, তার স্বামী, চিকিৎসকসহ সবার সঙ্গে কথা বলে। ঢাকায় ফিরে তারা একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তা নিয়ে আমরা কমিশনের বৈঠকে আলোচনা করি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- ধর্ষণটাকে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। কেননা, এটাকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করি। আমরা বলেছি যে, ধর্ষণের ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। আমি বললাম যে এই ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত থাকুক না কেনো, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ মর্মে সরকারের প্রতি জোর সুপারিশ করেছি। স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে আমরা চিঠি দিলাম।

আমাদের সুপারিশের সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনটি জুড়ে দিয়েছি কারণ: কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘ওদের’ প্রসঙ্গটি এসেছে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আসেনি। বিশেষ করে, কমিটি যে ‘মতামত’ দিয়েছে তাতে ‘ওদের’ সম্পৃক্ততার কথা আসেনি। এখন এটা বিশ্লেষণ করা সরকারের দায়িত্ব।

আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে ‘গণধর্ষণ’: আ. লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ আরও ২ আটক​

ডেইলি স্টার: আপনাদের তদন্তে ‘গণধর্ষণের’ কারণ হিসেবে কী উঠে এসেছে?

কাজী রিয়াজুল হক: আমরা তো বিশদ তদন্তে যাইনি। কমিটি ‘প্রাথমিক তদন্ত’ প্রতিবেদন দিয়েছে। যাদের দায়িত্ব তারা এখন বিশদ তদন্ত করবে কী না করবে, সেটা তাদের ব্যাপার।

ডেইলি স্টার: আপনাদের প্রতিবেদনের ‘দালিলিক ও মৌখিক সাক্ষ্য পর্যালোচনা’ অংশে লেখা হয়েছে, ‘ভিকটিম পারুল বেগম তার জবানবন্দিতে বলেন যে, রবিবার রাত ১২.০০টার সময় ঘটনা, তিনি ১৪ নম্বর ভোট কেন্দ্রে যান, তাকে নৌকায় ভোট দিতে বলে, তিনি বলেন তার ভোট তিনি দিবেন, তখন বলে যে যান বিকাল বেলা খবর আছে, সোহেল বলে রাইতে দেখা করবে, সন্ধ্যার পর তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েন, রাত ১২.৩০ মিনিটের দিকে দরজায় ঠাস ঠাস শব্দ করে, কে জানতে চাইলে বলে যে থানা থেকে লোক এসেছে, তিনি নিজে তখন দরজা খুলে দেন, তারা ১০ জন তার ঘরের ভেতরে ঢুকে, তখন ঘরে বাতি জ্বলছিল...।’ এবং ‘মতামত’ অংশে লেখা হয়েছে ‘...তাকে ধর্ষণ করার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে ভিকটিম পারুল বেগমের মারপিট ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার কোনো সম্পর্ক তদন্ত কমিটির সামনে উন্মোচিত হয়নি’। ভিকটিম তো ‘নির্বাচন’ ও ‘ভোট’ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ‘হুমকি-ধর্ষণের’ কথা আপনাদের তদন্ত কমিটির সামনে বলেছেন। আপনাদের প্রতিবেদনেই তা উল্লেখ আছে। তাহলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে কিসের ভিত্তিতে লেখা হলো ‘নির্বাচনের সঙ্গে ধর্ষণ ঘটনার সম্পর্ক নেই’?

কাজী রিয়াজুল হক: ওটা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মতামত নয়, তাদের (তদন্ত কমিটি) মতামত। আমরা আসলে ‘সেই বিষয়টি’-র মধ্যে যাইনি। কাদের সঙ্গে ‘তাদের’ সম্পৃক্ততা ছিলো কী ছিলো না, সে বিষয়ে আমরা যাইনি। আমাদের কাছে নির্যাতনের ঘটনা প্রতীয়মান হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে কমিশন সরকারের প্রতি জোর সুপারিশ করেছে। আমরা দায়িত্বটা তাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।

ডেইলি স্টার: প্রতিবেদনটি তো কমিশনের?

কাজী রিয়াজুল হক: এটি কমিশনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন।

ডেইলি স্টার: কমিশন যখন বলে, ‘নির্বাচনের সঙ্গে ধর্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই’ তখন…

কাজী রিয়াজুল হক: নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, কমিশন একথা বলেনি। আমরা বলেছি যে, “এ কমিটি তথ্যানুসন্ধান শেষে কমিশনের চেয়ারম্যানের নিকট দাখিলকৃত তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে মতামত দেন যে…” ওরা এই মতামত দিয়েছে। সেটা আমরা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি যে এরা এই মতামতটি দিয়েছে। আমরা কোনো ব্যাপারে জাস্টিফাই করতে যাইনি। কারণ আমরা মনে করেছি যে যাদের জাস্টিফাই করা দরকার তারাই জাস্টিফিকেশন করুক। এই দায়িত্বটা আমরা নিতে চাইনি।

ডেইলি স্টার: কিন্তু, ‘ঘটনার সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই’ প্রতিবেদনে এমনটি উল্লেখ করে আপনারা তো ইতিমধ্যে একটা দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন।

কাজী রিয়াজুল হক: এটা আমাদের নয়, এটা কমিটির কথা।

ডেইলি স্টার: তাহলে এ বিষয়ে কমিশনের মন্তব্য কী?

কাজী রিয়াজুল হক: আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। ‘ওদের’ রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা কী আছে না আছে সে বিষয়ে আমরা চট করে কোনো সুইপিং কমেন্ট করতে যাইনি। এখানে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হয়েছে, এ ঘটনায় যারা দোষী আছে তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হোক- এটিই কমিশনের অবজারভেশন। এ ঘটনা কারা ঘটিয়েছে সে বিষয়ে যেভাবে তদন্ত করার প্রয়োজন সেভাবে আমরা তদন্ত করিনি।

ডেইলি স্টার: যখন প্রতিবেদনটি আসে তখন আমরা ধরে নেই যে এটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন।

কাজী রিয়াজুল হক: তদন্ত কমিটি বলেছে যে ভিকটিম আমাদের কাছে যা বলেছে আমরা তা বলেছি।

ডেইলি স্টার: আপনাদের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেই রয়েছে- ভিকটিম পারুল বেগম বলছেন যে তিনি “১৪ নম্বর ভোট কেন্দ্রে যান, তাকে নৌকায় ভোট দিতে বলে, তিনি বলেন তার ভোট তিনি দিবেন…।” তারপরও বলছেন, ঘটনাটির সঙ্গে নির্বাচন যুক্ত না!

কাজী রিয়াজুল হক: সে বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাইনি।… আমাদের কমিশন মনে করেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টুকু আমরা সরকারের কাছে পাঠাবো। সেটুকুই আমরা পাঠিয়ে দিয়ে বলেছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে।… রাজনৈতিক ইস্যুতে আমরা যাইনি। এমনকি, নির্বাচনের বিষয়ে যাওয়াটাও আমরা (প্রয়োজন) মনে করিনি। সেটা নির্বাচন কমিশন দেখবে। আমরা মানবাধিকারের বিষয়টি দেখেছি।

ডেইলি স্টার: এই প্রতিবেদনের দায়ভার কি কমিশনের ওপর বর্তায় না?

কাজী রিয়াজুল হক: সেটা আপনি যেভাবে ব্যাখ্যা করেন করতে পারেন। আমরা সেটা মনে করিনি। আমরা মনে করেছি, দ্রুত এই ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার জন্যে যেটা করা দরকার সেটি আমরা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি।

ডেইলি স্টার: কিন্তু, তদন্ত কমিটি তো মানবাধিকার কমিশনের। তারা কিসের ভিত্তিতে বলেছে যে ঘটনাটির সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই?

কাজী রিয়াজুল হক: কমিশন কখনো বলেনি যে, আমরা এই তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত পোষণ করছি।… আমরা সেটা বলিনি কোনো জায়গায়। আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণটা দিয়েছি।… সে জন্যে কমিশনকে অভিযুক্ত করা কতোটা ঠিক হচ্ছে তা আমি জানি না।

ডেইলি স্টার: তাহলে এই প্রতিবেদনটিকে কী কমিশনের প্রতিবেদন হিসেবে নিবো না কী কমিশনের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হিসেবে নিবো?

কাজী রিয়াজুল হক: এখানে কমিশন তার যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সেটুকু নিতে পারেন।

ডেইলি স্টার: গণমাধ্যমে ভিকটিমের বরাত দিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে ‘ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় ৪ সন্তানের মাকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের গণধর্ষণ’। সেখানে আপনার তদন্ত কমিটি বললো ‘নির্বাচনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই’। তাহলে বিষয়টি কেমন হলো?

কাজী রিয়াজুল হক: সেভাবে দেখা ঠিক হবে না। গণমাধ্যমের মতের সঙ্গে কোনো কোনো জায়গায় মিলতে পারে আবার কোনো কোনো জায়গায় নাও মিলতে পারে।… এ বিষয় নিয়ে আবার আলাপ-আলোচনা করতে পারি। আলাপ-আলোচনা করে আমাদের পক্ষ থেকে এর পরে করণীয় কিছু আছে কী না সেটা আমরা দেখতে পারি।… আপনার পয়েন্টটি আমি বুঝতে পেরেছি। আপনাদের যে প্রত্যাশা তা থাকা স্বাভাবিক।… এখানে যদি কোনো অসম্পূর্ণতা থেকে থাকে কমিটিকে আবার নির্দেশনা দিতে পারি। এটিই একমাত্র বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন নয়।

আমি আবারো বলছি, ভোটের সঙ্গে এর কতোটুকু সম্পৃক্ততা আছে এটা আমাদের কনসার্ন না।… আমি শুধু দেখবো তার ধর্ষণটা হয়েছিলো কী হয়নি।

ডেইলি স্টার: আপনি যখন ভোটের দিকে যাবেনই না, তাহলে আপনার কমিটি কেনো ভোটের প্রসঙ্গটিকেই উল্লেখ করলো?

কাজী রিয়াজুল হক: আমি এবং আমার কমিশন মনে করেছে মানবাধিকার বিষয়টুকুর ওপর আমাদের বক্তব্য বলবো।

ডেইলি স্টার: তাহলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আপনি আপনার গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ‘মতামত’র সঙ্গে একমত নন?

কাজী রিয়াজুল হক: না… না। আমরা এখানে একমত বা দ্বিমত- কোনো কিছুই বলিনি। আমরা এখান থেকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের বিষয়টি সনাক্ত করে এ দোষীদের শাস্তি দিতে বলেছি।… ভোটের বিষয়টি যাদের দেখা দরকার তারা দেখবে।… এটি আসলে কমিশনের প্রতিবেদন না।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

7h ago