ভারত রোহিঙ্গাদের জন্যে ঘর তৈরি করছে মিয়ানমারে, পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে!

নতুন করে ১,৩০০ রোহিঙ্গা এসেছে বাংলাদেশে। তবে তারা মিয়ানমার থেকে নয় এবার এসেছে ভারত থেকে। নিজ দেশে ঘরবাড়ি ফেলে আশ্রয় পাবেন বলে ভারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ভারত তাদের মিয়ানমারে না পাঠিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।
rohingyas
১৯ জানুয়ারি ২০১৯, মাশুক হৃদয়ের তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার কাজিয়াতলি সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছে। বিএসএফ তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছে।

নতুন করে ১,৩০০ রোহিঙ্গা এসেছে বাংলাদেশে। তবে তারা মিয়ানমার থেকে নয় এবার এসেছে ভারত থেকে। নিজ দেশে ঘরবাড়ি ফেলে আশ্রয় পাবেন বলে ভারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ভারত তাদের মিয়ানমারে না পাঠিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সব সময় বলে এসেছে ভারত বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। ভারত সরকারের বক্তব্যও এমনই। ভারত বিভিন্ন সময় বলেছে যে তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা যেনো নিজের দেশে ফিরে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় পান তার জন্য রাখাইনে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কথাও বলেছে নয়াদিল্লি। রাখাইনে কিছু ঘর নাকি তৈরি করেছেও। ভারতের সরকার ও কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সময় এমন খবর দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রশ্ন এসেছে, রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশের নাগরিক নয়, মিয়ানমারের নাগরিক তা ভারত জানে-মানে। তাহলে ভারত কেনো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠালো? রোহিঙ্গাদের জন্যে ভারত ঘর তৈরি করছে মিয়ানমারে, আর পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে? এর তাৎপর্য কী?

Dr CR Abrar
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলছিলেন, “এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। ভালো প্রতিবেশী বলতে যা বোঝায় এখানে তার ছোঁয়ামাত্র নেই। তারা এমন একটা রোহিঙ্গাবিরোধী অবস্থান নিয়েছে যার ফলে রোহিঙ্গারা ভারতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এখন মিয়ানমার যেহেতু তাদের ফেরত নিতে অনিচ্ছুক তাই সহজ সমাধান হিসেবে তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।”

“বাংলাদেশের দিক থেকে প্রতিবাদ করা দরকার ছিলো, এটা যে গ্রহণযোগ্য না সেটা সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া দরকার ছিলো, সেটা আমার জানা মতে করা হয়নি”- যোগ করেন ড. আবরার।

এভাবে একটি দেশের নাগরিকদের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা থাকা সত্ত্বেও তৃতীয় আরেকটি দেশে পাঠানোকে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সঙ্গে তুলনা করছেন এই অধ্যাপক।

তিনি আরও বলেন, “শরণার্থীদের প্রতি সংবেদনশীল রাষ্ট্র হিসেবে এতোদিন পর্যন্ত ভারতকে দেখা হতো। কিন্তু, এখন মনে হচ্ছে তারা সেই অবস্থান থেকে দূরে সরে গেছে।”

কিন্তু, শরণার্থীদের বিষয়ে ভারতের এমন অবস্থান নিয়ে অধ্যাপক আবরারের আশঙ্কা, “এর একটা কারণ হতে পারে রোহিঙ্গারা ধর্মে মুসলমান।” তার ভাষায়, “এমনটা হলে তা আরও দুর্ভাগ্যজনক হবে। রাষ্ট্রহীন মানুষের ধর্ম বিবেচনায় তাদের সঙ্গে এমন আচরণ সম্পূর্ণ অন্যায়।”

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীরবতা পালনের কারণ ব্যাখ্যা করা উচিত বলেও মনে করছেন তিনি।

Amena Mohsin
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন বলেন, “এটা ঠিক যে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। তবুও শরণার্থীদের এভাবে ফেরত পাঠানো অমানবিক কাজ। ভারত এটা ভালো করেই জানে যে কী পরিস্থিতিতে পড়ে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশনে স্বাক্ষর করুক বা না করুক জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হলেই মানবাধিকার সনদ মেনে চলতে হয়। সেই বিবেচনাতেও তো এটা ঠিক হলো না।”

এ বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর মুখপাত্র ফিরাস আল-খাতিব সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেন, “আমরা এই পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত রয়েছি।”

সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী ভারত আরও ৩১ জন রোহিঙ্গাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার কাজিয়াতলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলেও জানা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Metro rail launches Friday operations

Trains will leave Uttara North Station for Motijheel between 3:30pm and 9:00pm every Friday

6m ago