‘বাংলার বুলবুল, যেখানেই যান, ভালো থাকেন যেন’

বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের আকস্মিক মৃত্যুতে মুহ্যমান দেশের শিল্পীসমাজ। বিভিন্নভাবে বিভিন্নজন জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়া। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আজ (২২ জানুয়ারি) ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তার সেই লেখাটি দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো:
Ahmed Imtiaz Bulbul
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের পোট্রেট। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

বিশিষ্ট গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের আকস্মিক মৃত্যুতে মুহ্যমান দেশের শিল্পীসমাজ। বিভিন্নভাবে বিভিন্নজন জানিয়েছেন তাদের প্রতিক্রিয়া। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আজ (২২ জানুয়ারি) ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তার সেই লেখাটি দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো:

“আমাদের আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল আসলে বাংলার বুলবুল। একাধারে তিনি ছিলেন শক্তিমান লেখক, সুরস্রষ্টা এবং মিউজিক কম্পোজার। গানের জগতে তিনি ছিলেন সব্যসাচী। সারাজীবন তিনি গান নিয়ে গবেষণা করেছেন। আঞ্চলিক সুর থেকে শুরু করে আরব্য-পারস্য, ভারতীয় স্পেনীয় সুর নিয়ে নাড়াচাড়া করে তার সাথে নিজের ভালোবাসা মিশিয়ে সুরের আবহ তৈরি করেছেন।

তাঁর গানে প্রেম, বিরহ, কটাক্ষ, অনুরাগ, দেশপ্রেম, শিশুর সারল্য, সামাজিক নাটকীয়তা, বিদ্রোহ, চাহিবামাত্রই পাওয়া যেতো। তাই ছবির গানের ফরমায়েশি জগতে তাঁর কদর ছিলো আলাদা। তাঁর সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিলো নিজেই গান লিখতেন। তাই সুর আরও সুন্দর করে বসে যেতো। মনে হতো এই গানের সুর ও কথা একসাথেই যমজ হয়ে জন্ম নিয়েছে!

তিনি আসলে একজন স্বভাবকবি ছিলেন। মুখে মুখে গান বানানোর অসম্ভব দক্ষতা তাঁর ছিলো। একই সাথে নিজের সৃষ্টিকে অবহেলা করার দারুণ স্পর্ধাও ছিলো। গান রেকর্ড হয়ে গেলে সে লেখা তিনি ছিঁড়ে ফেলতেন। আমরা আপত্তি জানালে বলতেন- আমার গান আমি কেনো সংগ্রহ করবো। গান ভালো হলে কালের প্রবাহেই তা জমা থাকবে।

ব্যক্তিগত জীবনে বোহেমিয়ান টাইপ মানুষটা নিজের জন্য কিছুই করেন নাই। গান গান গান করেই জীবন পার করলেন। জীবনের প্রথম দিকে বেহালা গিটার বাজাতেন, মাঝ বয়সে এসে সেগুলোকেই আবার নতুন করে শেখার জন্য কী প্রচেষ্টাই না ছিলো তার! কিন্তু, নিজেকে আরও জ্ঞানের গভীরে নিতে নিজেই নিজের শিক্ষক ছিলেন।

অসম্ভব সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সারাজীবন তাঁর গানেও অপার দেশপ্রেম, দ্রোহ, প্রতিবাদ তুলে ধরেছেন। ছবির গানেও তিনি নিজে বায়না করে দেশের গান ঢোকাতেন। ভালো কণ্ঠের জন্য তিনি শিল্পী খুঁজে বেড়াতেন আজীবন। আমাকে তিনি নিজে খুঁজে বের করেছিলেন। ১৯৯২ সালের কথা, একটা অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী শাকিলা আপা (শাকিলা জাফর) বললেন কনক, বুলবুল ভাই তোকে খুঁজছেন, তাড়াতাড়ি যোগাযোগ কর। এরপর উনিই আবার ফোন দিলেন। পয়লা গান ছিলো “সাদা কাগজ এই মনটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম” মিলু ভাইয়ের (প্রয়াত খালিদ হাসান মিলু) সাথে ডুয়েট। সেদিনই বুলবুল ভাই বললেন, ভাবী, ইনশাআল্লাহ অনেক গান হবে, আপনাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবো কখনো পিছনে তাকাতে হবে না! সত্যিই সেদিন থেকেই আমার আর অবসর ছিলো না। বুলবুল ভাই মাসে গড়ে প্রায় দশটা ছবি হাতে নিতেন এবং তাঁর বেশিরভাগ গান আমাকে দিয়েই গাওয়াতেন। নিজে অনেক গবেষণা করতেন কিন্তু গানের কণ্ঠের ব্যাপারে নির্ভরশীল হতে চাইতেন। এরপর আসলেই আমাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। প্রায় প্রতিটি গানই মাইলফলক হয়ে যাচ্ছিল। তাঁর গানেই প্রায় সব পুরস্কার পাওয়া আমার! তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

আমি বিশ্বাস করি আমরা পুরো জাতিই ধন্য যে আমাদের একজন “আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল” আছে। আর একটি কথা আমি উচ্চকণ্ঠে বলতে চাই “সব কটা জানালা খুলে দাওনা” এই গানটি ছাড়া আর যদি কোনো গানই সুর না করতেন তাহলেও বাংলাদেশ তাঁর কাছে সমান কৃতজ্ঞ থাকতো।

আমি এই সব্যসাচী সংগীতজ্ঞের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ ওনাকে ওপারে শান্তি দিন।”

 

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago