সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় হোক ডাকসু নির্বাচন
ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘সহাবস্থান’ বিষয়টি বড়ভাবে আলোচনায় এসেছে। অনেকটা জাতীয় নির্বাচনে ‘সবার জন্যে সমান সুযোগ’র মত। ইসির মত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে ‘সহাবস্থান’ আছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। স্বাধীনভাবে সব সংগঠন তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বাম ও ছাত্রদলসহ ১৪টি সংগঠনের মধ্যে ১১টি সংগঠন বলছে ভিন্ন কথা। তাদের বক্তব্য ক্যাম্পাস- মধুর ক্যান্টিন, আবাসিক হল কোথাও ‘সহাবস্থান’ নেই। এককভাবে সবকিছু ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। ছাত্রদল বলছে, ক্যাম্পাসে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়না, থাকতে দেওয়া হয় না হলে। হলে থাকা কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে ছাত্রদলের সামান্য সম্পৃক্ততা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে পিটিয়ে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রদল নেতা লুকিয়ে পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়ার পর তাকে মারধর ও কান ধরে উঠবস করিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা এর চেয়েও খারাপ। হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান না। গণরুম ও গেস্টরুম নির্যাতন তো চলছেই। পরিচয় গোপন করে এখনও ছাত্রদলের অনেক কর্মী-সমর্থক হলে আছেন। নির্বাচনের সময় তারা যদি সক্রিয় হন, নির্বাচনের পরে বা যদি নির্বাচন না হয়, তাদের আর হলে থাকতে দেওয়া হবে না।
বাম সংগঠনগুলোর বক্তব্যও প্রায় এমনই। তারা ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিতে তাদের কথা বলতে দিতে চায় না ছাত্রলীগ। পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে নারী নিপীড়ন, নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, কোটা সংস্কার বা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন- সব ক্ষেত্রেই ছাত্রলীগের হামলার শিকার হতে হয়েছে।
ছাত্রলীগের বক্তব্য, তারা কাউকে নির্যাতন-নিপীড়ন করেন না। দখলে বিশ্বাস করেন না। যেহেতু হল বা ক্যাম্পাসের প্রায় সকল শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সমর্থক সে কারণে মনে হয় দখল করে আছি। আসলে আমরা দখল করি না, ভালোবেসে দখল দিলে আমাদের কী করার আছে?
ছাত্রলীগ বলেছে, ছাত্রদলের বৈধ ছাত্রত্ব থাকা নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে আসতে পারবে, হলে থাকতে পারবে। আমরা কোনো সমস্যা করব না।
বিষয়টি লক্ষণীয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে ‘সহাবস্থান’ আছে, কোনো সমস্যা নেই। আর ছাত্রলীগ বলছে, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে আসতে পারবে, হলে থাকতে পারবে, আমরা সমস্যা করব না। ‘সহাবস্থান’ যদি থাকত তবে কথাটা হতো, ‘ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে আছে, হলে থাকে। ‘আসতে পারবে, থাকতে পারবে’- তার মানে এখন পারেনা। এবং এ তথ্য কারোরই অজানা নয়।
আরও লক্ষণীয়, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ছাত্রত্ব আছে কী না, তারা ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন কী না, তাদের বৈধ ছাত্র-কর্মীরা হলে থাকতে পারবেন কী না, সে বিষয়ে কথা বলছে ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নয়। অথচ কাজটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, ছাত্রলীগের নয়।
এমন পরিবেশ হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। হয়েছে অনেক বছর ধরে। ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে একবারে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে, এমন প্রত্যাশা করা যেতে পারে, তবে তা বাস্তব সম্মত নয়। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার্যকর কিছু উদ্যোগ নিলে হয়ত পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
‘লিখিতভাবে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি’- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন দায়সারা বক্তব্যের ধারা থেকে বের হয়ে আসবেন কী না আমরা জানি না। হল থেকে যাদের বের করে দেওয়া হয়েছে, ভুক্তভোগীরা লিখিতভাবে না জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জানার প্রক্রিয়া থাকা দরকার। হলের নিয়ন্ত্রণ দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের হাতে থাকলেই তা সম্ভব।
যাদেরকে নির্যাতন করে বের করে দেওয়া হয়, লিখিতভাবে জানালে তাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হলের পর ক্যাম্পাসে আসা, ক্লাস-পরীক্ষা দেওয়াও বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।
ছাত্রদলের ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের অনেককে মারধর করে বের করে দেওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়াও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা লিখিতভাবেও কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি।
ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে আসতে দেয় না, লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়ে এটা তো প্রমাণ করাও সম্ভব না। ২৫ জানুয়ারি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা-ধাওয়ার ঘটনা তো প্রক্টর জানেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেননি।
২.
একটি কথা বলে রাখা দরকার, বহু নিপীড়নের শিকার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা এবারের ডাকসু নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন। নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ একাধিকবার রক্তাক্ত হামলার শিকার হয়েছেন, জেল খেটেছেন, প্রলোভন বা হুমকিতে পালিয়ে যাননি বা অবস্থান পরিবর্তন করেননি। বারবার ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন, ছাত্রদল নেতৃবৃন্দকেও পাশে পাননি। তাদের পক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশের সমর্থন দৃশ্যমান। ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসভিত্তিক সাধারণ শিক্ষার্থীদের সকল আন্দোলনে পাশে ছিলেন। পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকায় নারী নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরোধে ছাত্র ইউনিয়নের ভূমিকা ছিলো অবিশ্বাস্য রকমের প্রশংসনীয়।
ফলে ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাত্রলীগ আর ছাত্রদলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে।
৩.
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি করছে জাতীয় নির্বাচনের আচরণবিধির মতো করে। সাবেক ছাত্রনেতারা ক্যাম্পাসে এসে সংগঠনের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। ডাকসুর ক্ষেত্রে এমন নীতিমালার কোনো অর্থ থাকতে পারবে না। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন বা অন্য সংগঠনের সাবেক নেতা-কর্মীদের অবশ্যই ক্যাম্পাসে এসে প্রার্থীদের পক্ষে কথা বলার সুযোগ থাকা উচিত। ডাকসুর সাবেক নেতৃবৃন্দের জন্যেও সেই সুযোগ থাকা উচিত।
যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো সামরিক শাসকেরা, দেশের পরিস্থিতি ছিলো অরাজক, জাতীয় নির্বাচন ছিলো তামাশা, তখনও ডাকসু নির্বাচন হয়েছে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ।
সত্যি ডাকসু নির্বাচন করতে চাইলে, ঐতিহ্য অনুযায়ী সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করে দেখতে পারেন।
ক. ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে’ নির্বাচন কমিশনের মতো ‘সহাবস্থান’ আছে, শুধু কথার মধ্যে থাকা যাবে না। ‘সহাবস্থান’ প্রতিষ্ঠার জন্যে হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে। হল বহিরাগত মুক্ত করতে গিয়ে ছাত্রলীগের বাধায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা যাবে না। লাঞ্ছিত বা অসম্মানিত হয়ে বা প্রভোস্টের রুম ভাঙচুরের পর বলা যাবে না যে ‘না, কিছু হয়নি’। এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস দেখাতে হবে।
খ. ক্যাম্পাসে স্বাধীনতাবিরোধীরা ছাড়া সবাই যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
গ. ১৪টি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ১১টি সংগঠন চায় হলের ভোট কেন্দ্র হলে নয়, কাছের একাডেমিক ভবনে স্থাপন করতে হবে। ছাত্রদল ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী যাদের হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, তাদের পক্ষে ছাত্রলীগের একক নিয়ন্ত্রণে থাকা হলে গিয়ে ভোট দেওয়া স্বস্তিদায়ক বা নিরাপদ নয়। সাধারণ শিক্ষার্থী যারা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়, তারাও হলে গিয়ে ভোট দিতে স্বস্তিবোধ নাও করতে পারেন। এসব সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যোগ দিয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের রোষানলে পড়েছেন।
তাছাড়াও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি আবাসিক নয়। যদিও শিক্ষার্থী ভর্তি হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু, কম পক্ষে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী হলের বাইরে থাকেন। ফলে হলের ভোট কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে সরিয়ে নিলে, কারোরই কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ডাকসু’র সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ’ডাকসু নির্বাচনের ভোট যেনো রাতের অভিযান না হয়।’
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এই বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভোট কেন্দ্র হলে থাকলে, এমন আশঙ্কা বেশি থাকবে। সেই বিবেচনাতেও ভোট কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করার কথা ভাবা যেতে পারে।
আওয়ামী ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগ ভোট কেন্দ্র হল থেকে সরাতে রাজি নয়। তাদের যুক্তি, ইউনিয়ন পরিষদের ভোট তো পৌরসভায় হয় না। সুতরাং হলের ভোট হলেই হতে হবে।
তাদের সুবিধা বিবেচনায় তারা কথা বলছেন, বলতেই পারেন।
সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সাহসী-যৌক্তিক সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে হবে।
এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতই প্রাধান্য পাওয়ার কথা।
ঘ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নীল, সাদা ও গোলাপি এই তিন দলে বিভক্ত। ডাকসু নির্বাচনের নীতিমালা পর্যালোচনা ও নির্বাচন পরিচালনার জন্যে দুটি কমিটি করা হয়েছে। দুটি কমিটিই করা হয়েছে নীল অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নিয়ে। এখানে একজন সদস্য রাখা হয়েছে গোলাপি অর্থাৎ বাম সমর্থক দল থেকে। সাদা অর্থাৎ বিএনপি সমর্থক শিক্ষকদের থেকে কমিটিতে কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। সরাসরি শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শিক্ষকও আছেন। যারা নির্মোহভাবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার যোগ্যতা রাখেন। এমন শিক্ষকদের ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হলে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হতে পারত। তা যদি করা নাও হয়, তবে নীতিমালা পর্যালোচনা ও নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। নীল-সাদা-গোলাপি সব দলের শিক্ষকদের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার সুযোগ আছে। আচরণবিধি বা নীতিমালা চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়ায় সব দল-মতের শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা দরকার। সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে যেভাবে আলোচনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেভাবে নীল-সাদা-গোলাপি শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আলোচনা করে নীতিমালা চূড়ান্ত করলে বিতর্কের সুযোগ কম থাকবে।
ঙ. হল থেকে ভোট কেন্দ্র সরালেই সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত নাও হতে পারে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা যেতে পারে। সিসিটিভি ক্যামেরা এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে, ভোটার সিল মারছেন তা দেখা যাবে না। কিন্তু, ব্যালট বাক্সে আগে থেকে ব্যালট পেপার ঢুকিয়ে রাখা হয়নি, তা বোঝা যাবে।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ আসছে, সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে তার সবই অসত্য প্রমাণিত হতে পারে। ছাত্রলীগের দাবি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল শিক্ষার্থী যেহেতু তাদের কর্মী- সমর্থক, ফলে ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠন যদি পরাজিত হয়, কারচুপি বা রাতে ভোট দেওয়ার অভিযোগ করে সুবিধা করতে পারবে না। সিসিটিভি ক্যামেরার সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতে পারে ছাত্রলীগই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সুষ্ঠু নির্বাচন করার কৃতিত্বে প্রশংসিত হতে পারে।
মধুর ক্যান্টিনসহ ক্যাম্পাসে সব কয়টি প্রবেশ পথ, উন্মুক্ত এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু জায়গায় এখনো সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। সেগুলোও কতোটা কার্যকর আছে, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সবগুলো সিসিটিভি ক্যামেরা হতে হবে মানসম্পন্ন, যাতে ধারণ করা ছবি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।
সিসিটিভি ক্যামেরা প্রমাণ করবে ক্যাম্পাসে সবাই স্বাধীনভাবে চলতে পারছেন কী না, ভোট সুষ্ঠু হলো কী না? ছাত্রদল বা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বাইরে থেকে এসে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস করল কী না, তা ধরা পড়বে সিসিটিভি ক্যামেরায়। জাল ভোট, রাতে ভোট, ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোটদানে বাধা- এসব ক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরার ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
প্রতিটি হল, পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি’র আওতায় আনা মোটেই কঠিন কাজ নয়। বিশ্ব এজতেমা বা পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান যেভাবে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, তার চেয়ে কম শ্রম ও অর্থে ডাকসু নির্বাচনের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা যেতে পারে। মনে রাখা দরকার, এই ক্যাম্পাসে বহু শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেনো সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি না হয়, আগে থেকে সতর্কতা প্রত্যাশিত। নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরা রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
আরও পড়ুন:
ডাকসু নির্বাচন: ভোটকেন্দ্র হল থেকে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরের দাবি কেনো?
Comments