শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ঢাকাকে ১ রানে হারিয়ে শীর্ষে কুমিল্লা
চট্টগ্রামের মাঠে বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের দেখা মিলল। দেখা মিলল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরেরও। ইনিংস প্রতি রান হয়েছে প্রায় ১৭১ করে। বিপিএলের মূল আমেজটাই যেন ছিল সেই মাঠে। ঢাকায় ফিরতেই আবারো সেই রান খরা। তবে রান খরার ম্যাচে বেশ রোমাঞ্চকর পরিণতি দেখেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১ রানে হারিয়ে এককভাবে শীর্ষে উঠে এসেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৩ রানের। প্রথম বলেই বোল্ড রুবেল হোসেন। পরের বলে কোন মতে ১ রান নিয়ে আন্দ্রে রাসেলকে স্ট্রাইক দেন শাহাদাত হোসেন। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ বলে কোন রানই নিতে পারলেন না এ ক্যারিবিয়ান। পঞ্চম বলে হাঁকান ছক্কা। টিকে থাকে ঢাকা ডায়নামাইটসের আশা। শেষ বলে জয়ের জন্য চাই ছক্কা। কিন্তু মারতে পারলেন চার। ফলে ১ রান দূরে শেষ হয় ঢাকার প্রতিরোধ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ম্যাচ জিতে নেয় ১ রানে।
মূলত জয়ের পথে ঢাকার কাছ থেকে কুমিল্লা ম্যাচটা ছিনিয়ে নিতে থাকে ১৬তম ওভার থেকে। ৩০ বলে ঢাকার তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৮ রানের। সে সময়ে মেইডেন ওভার নেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি। পরের ওভারে তো দুর্দান্ত মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। মেইডেন তো নেনই, সঙ্গে নেন দুটি উইকেট। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে পোলার্ড ও নুরুল হাসান সোহানকে তুলে নিলেই ম্যাচ হেলে পড়ে কুমিল্লার দিকে।
তবে পরের ওভারেই আবার বিপরীত চিত্র। আফ্রিদির শেষ ওভারে টানা দুটি ছক্কা মারেন রাসেল। আসে মোট ১৭ রান। তাতে আবার ম্যাচে ফেরে ঢাকা। ১৯তম ওভারে অবশ্য কাজের কাজটা করে ফেলেছিলেন ওয়াহাব রিয়াজ। ওভারের দ্বিতীয় বলেই আউট করেছিলেন রাসেলকে। কিন্তু নো-বল হওয়ায় বেঁচে যান এ ক্যারিবিয়ান। সে ওভার থেকে আসে ৯ রান। টিকে থাকে ঢাকার স্বপ্ন। কিন্তু শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনের কাছে হার মানতে হয় দলটিকে।
লক্ষ্য তাড়ায় এদিন শুরুটাই ভালো হয়নি ঢাকার। মেহেদী হাসানের বোলিং ঘূর্ণিতে দলীয় ২৯ রানেই শীর্ষ চার উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি। তবে পঞ্চম উইকেটে সে চাপ অনেকটাই সামলে নেন দুই ক্যারিবিয়ান তারকা সুনীল নারিন ও কাইরন পোলার্ড। স্কোরবোর্ডে ৪২ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই এলোমেলো হয়ে যায় সাকিবের দল।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৪ রানের ইনিংস খেলেছেন পোলার্ড। এছাড়া রাসেল ৩০ ও নারিন ২২ রান করেন। এ তিন ক্যারিবিয়ান ছাড়া দায়িত্ব নিতে পারেননি আর কোন ব্যাটসম্যানই। কুমিল্লার পক্ষে এদিন দারুণ বোলিং করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ২২ রানের খরচায় পেয়েছেন ৪টি উইকেট। এছাড়া মেহেদী পান ২টি উইকেট।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খারাপ করেনি কুমিল্লা। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এভিন লুইসের ব্যাট থেকে আসে ৩৮ রানের জুটি। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। গড়ে ওঠেনি বলার মতো কোন জুটি। তবে এক প্রান্ত ধরে খেলছিলেন ওপেনার তামিম। কিন্তু তিনি বলি হন রুবেল হোসেনের অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১২৭ রানেই গুটিয়ে যায় দলটি।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৮ রানের ইনিংস খেলেছেন তামিম। ২০ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় এ রান করেছেন তিনি। এছাড়া শেষ দিকে মেহেদী হাসান ২০ ওয়াহাব রিয়াজ ১৬ রানের দুটি কার্যকরী ইনিংস খেলেন। তাতেই একশ রানের বেশি রান করতে সমর্থ হয়েছে দলটি। আফ্রিদির ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান। ঢাকার পক্ষে ৩০ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নেন রুবেল। এছাড়া ২টি করে উইকেট পান সুনীল নারিন ও সাকিব আল হাসান।
১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে কুমিল্লা। এ ম্যাচ হেরে যাওয়ায় টিকে রইল রাজশাহী কিংসের আশাও। ১২ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ১২ পয়েন্ট। ১১ ম্যাচে ঢাকার সংগ্রহ ১০ পয়েন্ট। শেষ চার নিশ্চিত করতে হলে শেষ ম্যাচে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে জিততেই হবে তাদের। এরপর হবে রান রেটের হিসেব। যদিও তাতে অনেক এগিয়ে আছে সাকিবের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১২৭ (তামিম ৩৮, লুইস ৮, বিজয় ০, ইমরুল ৭, শামসুর ২, আফ্রিদি ১৮, পেরেরা ৯, সাইফউদ্দিন ২, মেহেদী ২০, ওয়াহাব ১৬, মোশারফ ৪; শাহাদাত ১/১২, শুভাগত ১/১৪, রাসেল ০/২২, নারিন ২/২৫, রুবেল ৪/৩০, সাকিব ২/২৩)।
ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১২৬ (মিজানুর ১৬, থারাঙ্গা ০, রনি ১, সাকিব ৭, নারিন ২২, পোলার্ড ৩৪, রাসেল ৩০*, সোহান ০, শুভাগত ৪, রুবেল ০, শাহাদাত ১; সাইফউদ্দিন ৪/২২, মেহেদী ২/২২, ওয়াহাব ১/২২, মোশারফ ১/২৩, পেরেরা ০/৩, আফ্রিদি ১/২৭)।
ফলাফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১ রানে জয়ী।
Comments