নারিন নৈপুণ্যে প্রতিশোধ নিয়ে কোয়ালিফায়ারে ঢাকা

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ঘূর্ণির মায়াজাল বিছিয়ে শুরুতে চিটাগং ভাইকিংসের ইনিংসকে আটকে দিলেন লক্ষ্যসীমার মধ্যেই। এরপর ব্যাট হাতে শুরুতে রুদ্ররূপ ধারণ করে সে লক্ষ্যকে আরও ছোট করে দিলেন সুনীল নারিন। মূলত ঢাকা ডায়নামাইটসের এ ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারই গড়ে দিলেন ম্যাচের পার্থক্য। ফলে গ্রুপ পর্বে জোড়া হারের প্রতিশোধ নির্মমভাবেই নীল চতুর্থ আসরের চ্যাম্পিয়নরা। ৬ উইকেটের জয়ে চিটাগং ভাইকিংসকে বিদায় করে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৫ রান করতে পেরেছিল চিটাগং। সাদামাটা স্কোর নিয়ে লড়াই থাকার জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল শুরুতে উইকেট। প্রয়োজন ছিল দারুণ ফিল্ডিংয়েরও। দুইটাই করতে ব্যর্থ হয় দলটি। বেশ কিছু হাফচান্স পেয়েছিল দলটি। তা লুফে নিতে ব্যর্থ হলে এবারের আসরে প্রথমবারের মতো ঢাকার বিপক্ষে হারতে হয় চিটাগংকে। ২০ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ডায়নামাইটস।

মূলত একাদশ নির্বাচনেই কিছুটা ভুল করে ফেলে ভাইকিংস। মিরপুরের উইকেটে যেখানে বরাবরই স্পিনাররা সুবিধা পেয়ে থাকে, সেখানে পাঁচ পেসার নিয়ে একাদশ সাজায় দলটি। যদিও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন পেসার খালেদ আহমেদ। ২০ রানের খরচায় ৩টি উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে যোগ্য সমর্থন করতে পারেননি আর কেউ। অফস্পিনার নাঈম হাসান পেয়েছেন ১টি উইকেট। অথচ ঢাকার দুই স্পিনারই আটকে দিয়েছিলেন চিটাগংকে।

১৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নারিনের আক্রমণে শুরুটা ভালো করে ঢাকা। শ্রীলঙ্কান তারকা উপুল থারাঙ্গার সঙ্গে ৪৪ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন তিনি। মাত্র ১৬ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৩১ রান করেন নারিন। এরপর নারিন আউট হয়ে গেলে এক প্রান্ত ধরে রেখে খেলতে থাকেন থারাঙ্গা। রনি তালুকদারকে নিয়ে ৪৪ রানের আরও একটি দারুণ জুটি। তবে ১১তম ওভারে রনি ও সাকিবকে আউট জোড়া ধাক্কা দিয়ে চিটাগংয়ের আশা জাগিয়েছিলেন খালেদ। কিন্তু সতীর্থদের ক্ষুরধারহীন সহজেই জয় পায় ঢাকা।

দলকে জয়ের ভিত গড়ে এদিন ৫১ রানের ইনিংস খেলেছেন থারাঙ্গা। রনির ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। শেষ দিকে হার না মানা ২০ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন নুরুল হাসান সোহান।

চলতি আসরে মিরপুরের মাঠে প্রায় সব ম্যাচেই আগে ফিল্ডিং নিয়েছিল দলগুলো। সেখানে এদিন টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন চিটাগং অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ব্যাটিং লাইনআপেও কিছু উলটপালট। ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিক খেলেন তিন নম্বরে। আর নিয়মিত তিন নম্বরে সাফল্য পাওয়া ইয়াসির আলী নামলেন ওপেনিংয়ে। ফলে ব্যর্থ হয়েছেন ইয়াসির। ব্যক্তিগত ৮ রানেই রুবেল হোসেনের বলে বিদায় নিতে হয় তাকে।

দ্বিতীয় উইকেটে সাদমানের সঙ্গে দলের হাল ধরেছিলেন ক্যামেরুন ডেলপোর্ট। উইকেটে সেটও হয়ে গিয়েছিলেন। ৩৪ রানের জুটিও গড়েন। কিন্তু ২৭ বলে ৩৬ রান করার পর দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে কাটা পড়েন এ ওপেনার। তবে চাইলেই নিজের উইকেট ত্যাগ করে ডেলপোর্টকে উইকেটে রাখতে পারতেন সাদমান। কিন্তু সে পথে তিনি হাঁটেননি। ডেলপোর্টের বিদায়ের পর অবশ্য কিছুটা হাত খুলে ব্যাট করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ১৯ বলে ২৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।

দলের খুব প্রয়োজনীয় দিনে এদিন ব্যর্থ হয়েছেন মুশফিক। ব্যক্তিগত ৮ রান করে নারিনের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন তিনি। ব্যর্থ হয়েছেন দলের আরেক ভরসা রবি ফ্র্যাইলিঙ্কও। মূলত ইনিংসের ১৭তম ওভারেই বদলে যায় ম্যাচের পরিবেশ। সে ওভারে নারিন তুলে নেন দুই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার ফ্র্যাইলিঙ্ক ও হার্ডাস ভিলিওনকে। এরপর এক প্রান্তে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন মোসাদ্দেক হোসেন। ৩৫ বলে ৪০ রান করেছেন এ ব্যাটসম্যান।

ঢাকার পক্ষে এদিন দারুণ বোলিং করেছেন দুই স্পিনার নারিন ও সাকিব। ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে একাই ৪টি উইকেট নিয়েছেন নারিন। আর উইকেটশূন্য থাকলেও ৪ ওভার বল করে মাত্র ১১ রান দিয়েছেন অধিনায়ক।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (ইয়াসির ৮, ডেলপোর্ট ৩৬, সাদমান ২৪, মুশফিক ৮, মোসাদ্দেক ৪০, শানাকা ৭, ফ্র্যাইলিঙ্ক ১, ভিলিওন ১, নাঈম ৬*, রাহী ১*; রাসেল ০/২১, সাকিব ০/১১, রুবেল ১/২৭, শুভাগত ০/১৩, নারিন ৪/১৫, মাহমুদুল ০/১০, অনিক ১/৩৬)।

ঢাকা ডায়নামাইটস: ১৬.৪ ওভারে ১৩৬/৪ (থারাঙ্গা ৫১, নারিন ৩১, রনি ২০, সাকিব ০, সোহান ২০*, পোলার্ড ৭*; ফ্র্যাইলিঙ্ক ০/১৩, নাঈম ১/২৮, রাহী ০/২২, ভিলিওন ০/৩৩, খালেদ ৩/২০, ডেলপোর্ট ০/১১)

ফলাফল: ঢাকা ডায়নামাইটস ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সুনীল নারিন

Comments

The Daily Star  | English
Iran state TV live broadcast resumes after Israeli attack

Iran condemns Israeli attack on state TV as 'war crime'

The blast occurred as the presenter was live on TV lambasting Israel

1h ago